Ajker Patrika

পরিবর্তন ও গণমাধ্যম

নুসরাত জাহান শুচি
পরিবর্তন ও গণমাধ্যম

পত্রিকা বা ফেসবুক নিউজফিড যেখানেই দেখা হোক না কেন, খবরের যে শিরোনামগুলো দেখা যায় তার বেশির ভাগই কাম্য নয়। আর স্বভাবতই আমাদের খারাপ খবরগুলো বেশি আকর্ষণ করে। আমাদের মস্তিষ্কে খারাপ খবরগুলো যতটা জায়গা দখল করে নিতে পারে, ভালোগুলো ততটা পারে না। যেমন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় নিয়ে মানুষ যতটা আলোচনা-সমালোচনা করেছে, তার চেয়ে বেশি সমালোচনা করছে এমবাপ্পেকে নিয়ে আর্জেন্টাইনরা কতটা ট্রল করেছে তার ওপর।

বাঙালি কৌতূহলী, হুজুগপ্রবণ আর স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া জাতি। এটা বোঝা যায় এই খবর জেনে—আর্জেন্টিনা-সৌদি আরব ম্যাচে সৌদি দ্বিতীয় গোল করার পর হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির!

যাহোক, আবার প্রসঙ্গে আসি। সমাজ যে অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা আর নাশকতায় ভর্তি, এটি নিয়ে মতভেদ নেই। খবরের শিরোনামগুলো তেমনটাই বলে। কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বলা যাক: শিশু আয়াতের খণ্ডিত মরদেহ এখনো পাওয়া যায়নি, পুলিশের হাত থেকে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি ছিনতাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গলাকাটা শিশুর লাশ উদ্ধার, ট্যুরের টাকা জোগাড় করতে নানাকে খুন করল নাতনি। অবাক লাগে সমাজব্যবস্থা, নৈতিকতা কোথায় যাচ্ছে!

যে দেশে ট্যুরের টাকার জন্য মেডিকেলে পড়ুয়া শিক্ষার্থী নানাকে হত্যা করতে পারে, সে দেশে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ হয়ে লাভ কী? আমাদের শিক্ষা কোথায়? তবে কি তা শুধুই সনদে বন্দী?

এ রকম খবর বরাবরই হাইলাইটে থাকে। এ বিষয়ে সম্প্রতি আল জাজিরায় প্রকাশ করা হয় একটি কলাম। তাতে বলা হয়েছে, একটি গবেষণায় ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৪৭টি সংবাদের ২ কোটি ৩০ লাখ শিরোনাম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মূলধারার সংবাদের বেশির ভাগই নেতিবাচক। এর কারণ কী? আমাদের সমাজে কি কেবলই নেতিবাচক কাজ হচ্ছে? ইতিবাচক কিছুই কি নেই? অবশ্যই আছে। তবে এ ধরনের বিষয়ে মানুষের আগ্রহ ঠিক কতটা, সেটাও একটি বিষয়।

ইতিমধ্যে আমরা এমন অনেক খবর দেখেছি, যাতে হত্যার পরিকল্পনা এসেছে ভারতীয় ক্রাইম প্যাট্রল দেখে। যদিও অনুষ্ঠানটি প্রচার করার উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে সচেতন করা। কিন্তু কেউ কেউ সেটি দেখে খারাপ কাজের পরিকল্পনা করার জন্য। এ রকম চিন্তা মাথায় থাকে বলেই হয়তো এ ধরনের অনুষ্ঠান দেখার পর নিজের অজান্তে নিজের জীবনে কিছুটা প্রয়োগের ইচ্ছা জাগে। মনে হয় তাদের কাছে এটা কোনো বিষয়ই না। হয়তো ভাবে, ‘করেই দেখি না কী হয়?’

সংবাদমাধ্যমগুলোর উচিত, নেতিবাচক বিষয়গুলোর প্রাধান্য কম দিয়ে ইতিবাচক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা। গুরুত্ব হয়তো কোনো খবরেরই কম না, কিন্তু ইতিবাচক খবরগুলোই পারে মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে যে কীভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে গড়ে তোলা যায় প্রতিরোধ, কীভাবে প্রকৃত মানুষ হওয়া যায়, কীভাবে প্রতিটি মুখে হাসি ফোটানো যায়, কীভাবে সোনার বাংলা গড়া যায়। মুক্তিযুদ্ধের গান, কবিতা যদি মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দিতে পারে, তাহলে ইতিবাচক আর প্রতিবাদের সংবাদগুলোও পারবে বাংলার তরুণ প্রজন্মের বুকে আঠারো নামিয়ে আনতে। তারাই পরিবর্তন করতে পারবে ক্ষয় হতে থাকা সমাজটাকে।

লেখক: নুসরাত জাহান শুচি, সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত