Ajker Patrika

সরকারি চাকুরে-ঠিকাদারদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
সরকারি চাকুরে-ঠিকাদারদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার

সরকারি কাজের ঠিকাদার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে এবার কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার গড়ে তুলছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা নামের এই নতুন তথ্যভান্ডার গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কাজের ঠিকাদারদের আয় ও সম্পদের বিষয়ে নজরদারির কাজে এই তথ্যভান্ডার ব্যবহার করা হবে।

এ কাজে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বিআরটিএ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা থাকায় ওই সব প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, ৮ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত একটি সুপারিশমালা তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান, দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠিয়েছে। সরকার চায় এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে এনবিআরকে দেওয়া আয়কর রিটার্নের কপিও আপলোড করা যায়। আর এসব কপিতে প্রয়োজনে জড়িত বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের প্রবেশাধিকারও থাকবে। এর মাধ্যমে মূলত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের আয় এবং সম্পদের ওপর নজরদারি করা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠি থেকে জানা যায়, সরকার সব সরকারি চাকরিজীবী ও সরকারের সঙ্গে কাজ করেন—এমন ঠিকাদারদের আয় ও সম্পদের যাবতীয় তথ্য এক ছাতার নিচে আনতে চায়। এটি সরকারের ডিজিটাল কার্যক্রমেরই অংশ। এ লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (জিইএমএস) শীর্ষক একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ চলছে। এ প্ল্যাটফর্ম সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, পদায়নসহ যাবতীয় বিষয়ের ব্যবস্থাপনা করবে। এর পাশাপাশি তাদের আয় ও সম্পদের তথ্যভান্ডারটিও এখানে যুক্ত করা হবে, যাতে সব সংস্থার কাজে একই তথ্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরগুলো ব্যবহার করতে পারে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যমান আইনে এনবিআর ছাড়া অন্য কোনো সংস্থার পক্ষে ব্যবসায়ী বা ঠিকাদারদের তথ্য সংগ্রহের এখতিয়ার কারও নেই। এ ছাড়া পৃথক তথ্যভান্ডারে ব্যবসায়ীদের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হলে আলাদা কর্তৃপক্ষ এবং আলাদা ব্যবস্থাপনারও প্রয়োজন নেই। এনবিআর যেহেতু এসব তথ্য সংগ্রহ করে, তাদের কাছ থেকে তথ্যগুলো যাতে সহজে পাওয়া যায়, সেটাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য। এ জন্য প্রয়োজনে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও দপ্তরগুলো পৃথক সমঝোতা স্মারক সই করতে পারে।

এ ব্যাপারে এনবিআরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শুনেছি, এ রকম একটি আলোচনা চলছে। তবে এখনো বিস্তারিত কিছু জানি না। যদি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ মহল থেকে এ রকম কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়, এটা হতেই পারে। এতে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈধ সম্পদ ও আয় করে থাকেন, এমনকি যেসব সরকারি কাজের ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার অস্বাভাবিক আয় করেন, অথচ আয়কর রিটার্নে তার তথ্য দেন না—এর মাধ্যমে তাঁদের জন্য জবাবদিহির সংস্কৃতি তৈরি হবে।

এনবিআরের আয়কর নীতির সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আপাতত মনে হচ্ছে ভালো উদ্যোগ। বিভিন্ন সংস্থা যদি সমন্বিতভাবে নিজেদের মধ্যে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে কাজ করে, তাহলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি তৈরি হবে। তবে একটি জটিলতা হলো, বেসরকারি খাতের ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীদের তথ্য চাওয়ার এখতিয়ার তো এনবিআর ছাড়া আর কারও নেই। সেটি করতে হলে আইনে সেই অধিকার দিতে হবে। কারণ, কারও আয়-ব্যয়ের তথ্য সংবেদনশীল। এটা বিধিবদ্ধ সংস্থা ছাড়া আর কারও নজরদারি করার সুযোগ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত