Ajker Patrika

একটি ঘোড়া ও কান্না

আসাদুজ্জামান নূর
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ৪৬
একটি ঘোড়া ও কান্না

বাকের ভাই চরিত্রটি আসাদুজ্জামান নূরকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকটি নিয়ে যে আলোড়ন উঠেছিল দর্শকদের মধ্যে, সে এক ইতিহাস।

সত্তর বছর বয়স হলো যখন, তখন তিনি সাক্ষাৎকারে খুলে ধরেছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার ঝাঁপি। নিয়মিত মঞ্চনাটক কেন করেন না, তার জবাব দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘মঞ্চনাটকে যতটুকু অর্জন করেছি, তার চেয়ে বেশি কিছু করতে পারতাম না। এটাই আমার ক্ষমতার শেষ সীমা। মঞ্চে অভিনয় করতে শারীরিক শক্তি, কণ্ঠের শক্তি লাগে।’ সে রকম শারীরিক শক্তি এখন আর নেই।

তবে এরপর আবার দু-একটি নাটকে তাঁকে মঞ্চে দেখা গেছে। নতুনভাবে গ্যালিলিও নাটকে অভিনয় করেছেন আলী যাকেরের সঙ্গে।

জীবনটাকে আনন্দে ভরে তুলেছেন তিনি। জীবনে সমস্যা ছিল অনেক, প্রিন্টিং প্রেসের টেবিলের ওপর খবরের কাগজ বিছিয়ে সারা রাত ঘুমিয়েছেন। দেড়-দুই শ টাকা বেতনে চাকরি করেছেন। কিন্তু দুঃখবোধ নিয়ে আহা-উঁহু করেননি।

বিদেশে গেলে তিনি মঞ্চনাটক দেখতে ছাড়েন না। কিছুটা মন খারাপ হয়। তাঁরা মঞ্চকে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন, তা ভাবলে অবাক হতে হয়। সেটা টেকনিক্যাল পার্ট নয়, অভিনয়কেই তাঁরা অন্য এক মাত্রায় নিয়ে গেছেন। এ প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ টানলেন তিনি। ‘ওয়ার হর্স’ বলে একটা নাটক দেখেছিলেন তিনি ইংল্যান্ডে। একটা কাঠের ঘোড়া চারজন লোক চালায়। কিন্তু দর্শকের কাছে মনে হয়, সেটা একেবারে জলজ্যান্ত ঘোড়াই। এক বাচ্চা ঘোড়াটাকে খুঁজে বেড়ায়। শেষে যখন ঘোড়াটাকে খুঁজে পায়, তখন সে অন্ধ। ঘোড়ার ডাক শুনে সে বুঝতে পারে, এটাই তার ঘোড়া।

এটুকু বলার পর আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘ব্রিটিশরা তো ইমোশনাল হয় না। কিন্তু এই নাটক দেখতে গিয়ে পুরো হল কাঁদতে থাকে। একজন লোককেও দেখিনি যে কাঁদেনি। অভিনয়ের যে মুহূর্তগুলো তৈরি করা হয়, তাতে কান্না অনিবার্য।’

সূত্র: জাহীদ রেজা নূর, চোখের আলোয়-২, পৃষ্ঠা ৪৭-৪৮

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত