Ajker Patrika

‘আমার স্বপ্ন পুড়ে গেছে’

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২১, ১৩: ১১
‘আমার স্বপ্ন পুড়ে গেছে’

গাজীপুরের টঙ্গীর হাজী মাজার বস্তিতে আগুন লেগে প্রায় এক হাজার বসতঘর পুড়ে গেছে। গতকাল শনিবার ভোর পৌনে চারটার দিকে এ লাগে। টঙ্গী, উত্তরা, কুর্মিটোলা ও পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিসের মোট নয়টি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীবাজার সেনাকল্যাণ ভবনের পাশের এই বস্তিতে আগুন লাগলে ইয়াসিন, মিনু, আতিকসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এক শিশু নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে বস্তির বাসিন্দারা। তবে শিশু নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি ফায়ার সার্ভিস।

বস্তির বাসিন্দারা বলেন, শনিবার ভোরে আগুন আগুন চিৎকারে ঘুম ভাঙে তাঁদের। এ সময় বস্তির কয়েকটি ঘরে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পান তাঁরা। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নেভাতে চেষ্টা করেন। মুহূর্তেই আগুন আশপাশের বসতিতে ছড়িয়ে পড়লে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়।

ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বস্তির মধ্যে কোনো রাস্তা না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। আর এ সময়েই প্রায় এক হাজার ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

আগুনে বসতি পুড়ে যাওয়ার ঘটনার পর বস্তির পরিবারগুলো পার্শ্ববর্তী তিনটি শাখা সড়কের পাশে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে চট ও পলিথিন বিছিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকছেন তাঁরা।

বস্তির পূর্বপাশে পঞ্চাশ ফুট জায়গায় টিন শেডের দুই তলা ঘর নির্মাণ করে চার মেয়ে ও দুই নাতিকে নিয়ে বাস করতেন উমেছা বেগম। সংসার চালাতে নিজ ঘরের এক পাশে মুদি দোকান দিয়েছিলেন তিনি। রাতে আগুনে তাঁর ঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। জীবনের শেষ সম্বল ঘরটুকু হারিয়ে পুড়ে যাওয়া পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে কোথায় যাবেন, এমন দুশ্চিন্তায় বসতঘরের দিকে তাকিয়ে শুধু কাঁদছেন তিনি।

আরেক বাসিন্দা আব্দুর রহিম। ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে বিদেশে যাওয়ার কথা তাঁর। বিদেশে যেতে জোগাড় করেছিলেন তিন লাখ টাকা। শুক্রবার রাতে জোগাড় করা টাকা মা রহিমা বেগমের কাছে দেন তিনি। সেই টাকা বস্তিতে তাঁদের নিজ ঘরে রাখেন রহিমা। বসতঘরে আগুন লেগে পুড়ে গেছে সব। আব্দুর রহিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার স্বপ্ন পুড়ে গেছে।’

পুড়ে যাওয়া ঘরের পাশে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন রাহেলা বেগম। টঙ্গীর একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন তিনি। বাবা-মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন বস্তির একটি ঘরে। পরিবারে একমাত্র কর্মক্ষম নারী তিনি। আগুনে বসতি পুড়ে যাওয়ায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।

টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইকবাল হাসান বলেন, শনিবার ভোরে বস্তিতে আগুন লাগার খবর পেয়ে টঙ্গী থেকে তিনটি, উত্তরা থেকে তিনটি, কুর্মিটোলা থেকে দুটি ও পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিসের আরও একটি ইউনিটসহ মোট নয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন। বস্তিতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ইকবাল হাসান বলেন, বস্তির অধিকাংশ ঘর জলাশয়ের ওপর কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। শনিবার বেলা দেড়টায় ডাম্পিংয়ের কাজ শেষ করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। গভীর রাতে শীতের তীব্রতায় আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানান তিনি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন বলেন, বস্তির ওই এক হাজার ঘরে প্রায় দশ হাজার মানুষ বাস করতেন। আগুনে পুড়ে যাওয়া বসতিগুলো পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে। বসতি পুড়ে যাওয়া পরিবারদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগামী সাত দিন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের জন্য তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গতকাল আগুনে পুড়ে যাওয়া বস্তি পরিদর্শনে এসে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন বলেন, ‘স্থানীয় সাংসদের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুতই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য পুনর্বাসন ও আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালদূষণকারী কারখানা পেল পরিবেশবান্ধব পুরস্কার

ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভারতের সংসদীয় কমিটির দীর্ঘ বৈঠক

ইস্পাহানে বাংকার বাস্টার মারেনি যুক্তরাষ্ট্র, অক্ষত ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম

গোষ্ঠীস্বার্থে বহু মানুষের স্বপ্ন নষ্ট করেছে এই প্ল্যাটফর্ম: দায়িত্ব ছেড়ে উমামা ফাতেমার পোস্ট

অপারেশন রেড ওয়েডিং ও নার্নিয়া: ইরানের সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীদের হত্যায় ইসরায়েলি অভিযান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত