Ajker Patrika

মেসিদের সামনে ডাচ বাঁধের বাধা

নাজিম আল শমষের, ঢাকা
মেসিদের সামনে ডাচ বাঁধের বাধা

কোয়ার্টার ফাইনালে মেসিকে আটকানোর সামর্থ্য কি নেদারল্যান্ডস রক্ষণের আছে—দ্বিতীয় রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচের পর ডাচ সমর্থকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। ডাচ সমর্থকেরা উত্তর দিয়েছেন, ‘লিওনেল মেসির জন্য আমাদের ভার্জিল ফন ডাইকই যথেষ্ট। সঙ্গে ডেলি ব্লিন্ড থাকলে মেসিকে খুঁজেই পাওয়া যাবে না।’ নিজেদের রক্ষণ নিয়ে কতটা গর্বিত নেদারল্যান্ডসের ফুটবল সমর্থকেরা!

লুসাইল স্টেডিয়ামে আজ শুক্রবার আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচকে এককথায় বিশ্বের সেরা ফরোয়ার্ড বনাম সেরা ডিফেন্ডারের লড়াই বললে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর সম্ভবত এবারের টুর্নামেন্টে সেরা ছন্দে আছেন লিওনেল মেসি। আর সেরা ছন্দে থাকা আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে আটকাতে যে ফন ডাইককে ভরসা মানবেন নেদারল্যান্ডস কোচ লুইস ফন গাল, সেটা না বললেও চলে। মেসিকে কীভাবে বোতলবন্দী করতে হয়, সেটা তো নিজেই ফাঁস করেছেন বিশ্বকাপের সবচেয়ে অভিজ্ঞ কোচ, ‘যখন সে বল হারায় এবং প্রতিপক্ষ বল দখলে নেয়, তখন সে ম্যাচে সেভাবে সক্রিয় থাকতে পারে না। আর আমাদের জন্য এটাই সুযোগ তাঁকে আটকে রাখার।’

কিন্তু আর্জেন্টিনা দলে তো আর মেসি একাই খেলেন না। লাওতারো মার্তিনেজ, আনহেল ডি মারিয়ার মতো তারকারা এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ফ্লপ। কিন্তু তাদের ছন্দপতন বুঝতে দেননি হুলিয়ান আলভারেজ, এনজো ফার্নান্দেজের মতো তরুণেরা। এক মেসিকে আটকাতে গিয়ে বাকিদের কথাও যে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন রক্ষণে ডাচদের অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক।

ফন ডাইকের কথায় স্বস্তিতে থাকার জো নেই আর্জেন্টিনার। আলভারেজ-ফার্নান্দেজরা যদি জ্বলে ওঠার চেষ্টা করেন তো তাঁদের ঠেকানোর যথেষ্ট ক্ষমতা আছে ডাচদের। এবারের বিশ্বকাপে হাতে গোনা যে কটা দলের রক্ষণ-মাঝমাঠ আর আক্রমণ সমান ভারসাম্যপূর্ণ, নেদারল্যান্ডস তাদের একটি। অঘটনের কাতারে যে চারটি দল এখনো অপরাজেয়, লুইস ফন গালের দল তাদের একটি।

ইয়োহান ক্রুইফের শেখানো ‘দশে মিলে করি কাজ’ মন্ত্রের মতো মেনে চলে ডাচরা। আক্রমণে দুর্বলতা থাকায় ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা হয়নি তিনবারের রানার্সআপ দলটির। এবার সেটি তারা কাটিয়ে উঠেছে ভালোভাবেই। তিন গোল করা কোডি গাকপো আছেন দারুণ ফর্মে। মেম্ফিস ডিপাইও জ্বলছেন। আর্জেন্টিনার জন্য বাড়তি যন্ত্রণা হতে পারে ডেনজেল ডামফ্রিস। দ্বিতীয় রাউন্ডে আক্রমণের ডান প্রান্ত ধরে একাই যুক্তরাষ্ট্রকে ধসিয়ে দিয়েছেন ইন্টার মিলান তারকা।

পরিসংখ্যান হেলে আছে নেদারল্যান্ডসের দিকে। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে পাঁচ দেখায় দুবার জিতেছে নেদারল্যান্ডস। আর্জেন্টিনা জিতেছে একবার। ড্র হয়েছে দুটি ম্যাচ। এই ড্র হওয়া দুটি ম্যাচের একটি ছিল ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। যেটিতে আর্জেন্টিনা টাইব্রেকারে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে জায়গা করে নিয়েছিল ফাইনালে। শেষ দুই দেখায় কোনো দলই গোল করতে পারেনি। আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচে নির্দিষ্ট সময়ে সবশেষ গোল হয়েছিল ২৪ বছর আগে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে শেষ মুহূর্তে ডেনিস বার্গক্যাম্পের গোলে আর্জেন্টিনাকে বিদায় করে দিয়েছিল নেদারল্যান্ডস।

অবশ্য স্বস্তি ফিরেছে আর্জেন্টিনা শিবিরেও। দুই দিনের বিরতিতে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ খেলার পর পাঁচ দিনের বিশ্রাম পেয়েছে লিওনেল স্কালোনির দল। এই সময়টাতে ছন্দ হারিয়ে ফেলা লাওতারো মার্তিনেজ ও ডি মারিয়াকে নিয়ে বাড়তি কাজ করেছে আর্জেন্টিনার কোচিং স্টাফ। ডাচদের বিপক্ষে আজ দুজনেই খেলতে পারেন বলে ইঙ্গিত স্কালোনির। চোট ছিল রদ্রিগো ডি পলের। চোট থেকে সেরে ওঠার পর ডাচদের বিপক্ষে খেলতে প্রস্তুত আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার।

দলের বাইরেও আলাদা একটা লড়াই হবে স্কালোনি ও ফন গালের ক্ষুরধার ফুটবল মস্তিষ্কের। লড়াইটা বিশ্বকাপের সবচেয়ে কম বয়সী কোচ বনাম সবচেয়ে অভিজ্ঞ কোচেরও। তারুণ্য বনাম অভিজ্ঞতার লড়াইয়ে ৪৪ বছর বয়সী স্কালোনির হারানোর সুযোগ খুবই কম, পাওয়ার আছে অনেক কিছু। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মধুর প্রতিশোধের অপেক্ষায় ৭১ বছর বয়সী ফন গালের। ২০১৪ বিশ্বকাপে ডাচ ইতিহাসের অন্যতম সেরা দলকে বিদায় করে দিয়েছিল মেসির দল।

প্রশ্ন তাহলে আজ লুসাইলে আর্জেন্টিনার ২০১৪ নাকি নেদারল্যান্ডসের ১৯৯৮ ফিরবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত