Ajker Patrika

এক পায়ে লিখে এইচএসসির গণ্ডি পার হলেন ফজলু

বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ০০
এক পায়ে লিখে এইচএসসির গণ্ডি পার হলেন ফজলু

এক পা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যেতেন। বই-খাতা-কলম বহন করতেন ছোট বোন। বোন না গেলে স্কুলে যাওয়া হতো না। ২০০০ সালে তাঁর জন্ম। তখন থেকেই দুই হাত ও এক পা নেই ফজলু রহমানের। তবে থেমে যাননি। এক পা দিয়েই লিখে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

ফজলু রহমান সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের চরগোপালপুর গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে। বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে মিটুয়ানী উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাঁকে স্কুলে নিয়ে যেতেন ছোট বোন আসমা। বেলকুচির দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ২ দশমিক ৭৫ পেয়ে পাস করেন।

ফজলু রহমান বলেন, ‘দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার ওপর প্রভাব ফেলেছে। তারপরও পরীক্ষায় যে রেজাল্ট হয়েছে তাতে আমি খুশি। এরপরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। প্রতিবন্ধী কার্ড ছাড়া তেমন কোনো সহযোগিতা পাইনি। ফেসবুকের মাধ্যমে মামুন বিশ্বাস ভাই কিছু টাকা ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। সেই টাকা ও প্রতিবন্ধীর ভাতার টাকা দিয়ে পড়াশোনা চালিয়েছি।’

ফজলু রহমান আরও বলেন, ‘সামনে পড়ালেখায় যে খরচ তাতে কীভাবে কী হবে বলতে পারছি না। ছোটবেলা থেকে বাবা, মা, বোন, সহপাঠী ও শিক্ষকদের সহযোগিতা পেয়েছি। এভাবে সবার সহযোগিতা পেলে পড়াশোনা চালিয়ে যাব।’

ফজলুর বাবা সাহেব আলী বলেন, ‘দিনমজুরি করে কোনোরকম সংসার চালাই। এর মধ্যে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাব কীভাবে। টাকার অভাবে কোনো দিন প্রাইভেট পড়াতে পারিনি। বইও কিনে দিতে পারিনি। ফজলুর নামের একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড আছে। তা দিয়েই ওর লেখাপড়ার খরচ চলে।’

সাহেব আলী আরও বলেন, ২০১৭ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ৭৬ হাজার টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন সমাজসেবক মামুন বিশ্বাস। সেই টাকা দিয়েই পড়াশোনা করেন ফজলুর। সে টাকা দিয়েই ছেলের পড়াশোনা করেছে।

ফজলুর মা সারা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলের এই রেজাল্টে সত্যি অনেক খুশি।’

দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ রানা বলেন, ‘ফজলু লেখাপড়ায় দারুণ আগ্রহ, স্মরণশক্তি প্রখর। তাঁর ফলাফলে আমরা খুশি। ফজলু আরও এগিয়ে যাবে এই বিশ্বাস আছে।’

সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস বলেন, ‘ফজলু রহমানের লেখাপড়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছা দেখে এসএসসিতে ফেসবুকের মাধ্যমে ৭৬ হাজার টাকা অনুদান তুলে দিই। এ টাকা দিয়েই তাঁর এত দিন লেখাপড়া চলেছে। সাহায্য সহযোগিতা পেলে সে সামনে ভালো রেজাল্ট করতে পারবে। পাশাপাশি একটা সরকারি চাকরি পেলে জীবন পাল্টে যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত