Ajker Patrika

গভর্নর মালিক আত্মসমর্পণের জন্য ব্যাকুল

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৪৫
গভর্নর মালিক আত্মসমর্পণের জন্য ব্যাকুল

বৃদ্ধ গভর্নর আব্দুল মালিক প্রাণভয়ে আত্মসমর্পণের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি তিনি চেয়েছিলেন রেডক্রসের মাধ্যমে হোটেল ইন্টার-কন্টিনেন্টালে আশ্রয় নেবেন। জেনারেল নিয়াজী অবশ্য বলে যাচ্ছিলেন, প্রাণ থাকতে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না। এদিন যৌথ বাহিনীর সামরিক কর্মকর্তারা যুদ্ধের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেন। বাংলাদেশের নানা খণ্ডে পাকিস্তানি বাহিনী বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তারা রয়েছে অবরুদ্ধ অবস্থায়। ঢাকার দিকে যাওয়ার কোনো পথ তাদের কাছে খোলা ছিল না।

বঙ্গোপসাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠানো হবে কি হবে না, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এদিন সকালে আলোচনা করেন। ভারতের ওপর তিনভাবে চাপ প্রয়োগের ব্যাপারে তাঁরা আলোচনা করেন। জর্ডানের মাধ্যমে পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান সরবরাহ করা, বঙ্গোপসাগরে রণতরি প্রেরণ করা এবং ভারতকে আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত করা—এই ছিল তাঁদের আলোচনার মুখ্য বিষয়। চীনাদের সঙ্গে সেনাসমাবেশ নিয়ে আলোচনা ও রণতরি পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব রাখেন নিক্সন। কিসিঞ্জার বলেন, এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বিমান হস্তান্তর ও রণতরি প্রেরণ বিষয়ে নিক্সনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর।

পাকিস্তান-ভারত প্রশ্নে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১০৪-১১ ভোটে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বানের প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়। ব্রিটেন, ফ্রান্স, আফগানিস্তান, নেপাল, সিঙ্গাপুর, ওমান, ডেনমার্ক, মালয়ি, সেনেগাল ও চিলি—এই ১০টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। ১২ ঘণ্টা ধরে বিতর্কের পর সাধারণ পরিষদ এই কার্যক্রম গ্রহণ করে। কূটনীতিকেরা অবশ্য জানান যে নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত যেমন বাধ্যতামূলক হতে পারত, সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত তেমন হবে না।

এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান মানেক শ বলেন, আত্মসমর্পণ করলে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতি জেনেভা কনভেনশনের রীতি অনুসারে সম্মানজনক ব্যবহার করা হবে। জেনারেল মানেক শর বলা ‘হাতিয়ার ডাল দো’ (অস্ত্র সমর্পণ কর) কথাগুলো বারবার ভারতীয় প্রচারমাধ্যমে প্রচার করা হয়। তিনি পাকিস্তানিদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখন আপনারা বরিশাল এবং নারায়ণগঞ্জের কয়েক জায়গায় জড়ো হচ্ছেন। আমি এও জানি, এখান থেকে আপনাদের উদ্ধার করা হবে বা পালাতে পারবেন—এই আশাতেই আপনারা এসব জায়গায় এসে মিলিত হচ্ছেন। কিন্তু আমি সমুদ্রপথে আপনাদের পলায়নের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছি। এ জন্য নৌবাহিনীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখনো যদি আপনারা আমার পরামর্শ না শোনেন এবং ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ না করেন, তাহলে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে কেউ আপনাদের রক্ষা করতে পারবে না।’

এই দিন আবার ঢাকায় কারফিউ জারি করা হয়। রেডিওতে বলা হয়, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৫টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ বলবৎ করা হয়। কুমিল্লা, গৌরীপুর, চাঁদপুর, পিরোজপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই দিন শত্রুমুক্ত হয়।

সূত্র: হাসান ফেরদৌস, মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত বন্ধুরা; ৯ ডিসেম্বরের ইত্তেফাক ও আনন্দবাজার পত্রিকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত