Ajker Patrika

চলে যাওয়া

মুনীর চৌধুরী
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৫২
চলে যাওয়া

ভাষা আন্দোলনের সময়ই, ২৬ ফেব্রুয়ারি জননিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মুনীর চৌধুরী। এক বছর পর জেলখানাতেই রণেশ দাশগুপ্তের কাছ থেকে পেয়েছিলেন একটা চিরকুট। তাতে ছিল একটি নাটক লেখার আহ্বান। মুনীর চৌধুরী সেই নাটক লিখেছিলেন এবং নারী চরিত্রবর্জিত সে নাটকটি রাত ১০টায় আলো নিভে গেলে জেলখানাতেই হয়েছিল অভিনয়।

১৯৫৩ ও ৫৪ সালে কারাগার থেকেই বাংলায় এমএ প্রথম পর্ব ও দ্বিতীয় পর্ব পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। ১৯৫৫ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন তুখোড় এই অধ্যাপক। তাঁর বক্তৃতা শোনার জন্য অন্যান্য বিভাগ থেকেও শিক্ষার্থীরা এসে ভিড় জমাত তাঁর ক্লাসে। ভাষার ওপর তাঁর অতল দখল ছিল। ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত এলে তিনি সব সময়ই তার প্রতিবাদ করেছেন। রেডিও ও টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার নিষিদ্ধ করা হলে তিনি তার লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

একাত্তর সালে তাঁকে সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল, তিনি যেন রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজে যোগ না দেন। তখন তিনি থাকতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের স্টাফ কোয়ার্টারে। হুমকি পাওয়ার পর তিনি চলে এসেছিলেন সেন্ট্রাল রোডের পৈতৃক বাড়িতে। দেড় মাস সেখানে ছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে গোসল করেছিলেন। ঠিকমতো শরীর মোছেননি। পিঠ দিয়ে বিন্দু বিন্দু জল গড়িয়ে পড়ছিল। এরই মধ্যে মা আফিয়া বেগমকে খাবার দিতে বলেছিলেন। মা ছেলের জন্য ভাত বেড়ে দিলেন। গরম ভাতে ধোঁয়া উঠছে। খেতে বসবেন মুনীর, ওই সময় একটা জিপ এসে থামল বাড়ির সামনে। আরোহীদের সবার মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা। শুধু চোখ দুটো দেখা যায়। তারা বলল, ‘আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে।’ ভয়ার্ত মানুষদের তারা অভয় দিয়ে বলল, ‘আপনারা শুধু শুধু ভয় পাচ্ছেন। আমাদের কমান্ডারের সঙ্গে দেখা করে এক্ষুনি তিনি ফিরে আসবেন।’

লুঙ্গি আর গেঞ্জি ছিল পরনে। ওরা বলল, আর কিছু গায়ে দিতে হবে না স্যার! ওদের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেননি তিনি।

সূত্র: গুণীজনডটওআরজিডটবিডি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত