Ajker Patrika

বিদ্যালয় নয়, নদীমুখী শিশুরা

সাইফুল ইসলাম, চরফ্যাশন (ভোলা)
আপডেট : ১৪ জুন ২০২২, ১৩: ২৬
বিদ্যালয় নয়, নদীমুখী শিশুরা

ঝুঁকি নিয়ে মেঘনা নদীতে মাছ ধরে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার উপকূলবর্তী এলাকার প্রায় তিন হাজার শিশু। অভাবের কারণেই শিশুরা এ কাজ করে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পড়ালেখা। ওই শিশুদের অভিভাবকদের দাবি, একজনের রোজগারে সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা সন্তানদের মাছ ধরার কাজে পাঠাচ্ছেন।

তবে জেলে পেশায় জড়িয়ে যাওয়া শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে কাজ করবে উপজেলা সমাজসেবা অফিস। এসব শিশুকে উপবৃত্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মামুন হোসেন।

উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্যমতে, উপজেলার তিন হাজার শিশু জেলে পেশায় নিয়োজিত। এসব শিশুর বয়স ৭ থেকে ১৪ বছর। শিশু ছাড়া উপজেলায় প্রায় ৯০ হাজার জেলে রয়েছে। নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ২৮১। অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার। এসব জেলে নদী ও সাগরে মাছ শিকার করেন। এ অঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার ট্রলার ও নৌকা রয়েছে। এ ছাড়া গভীর সমুদ্রগামী ৭ হাজার ট্রলারও রয়েছে।

মেঘনা নদীতে মাছ ধরেন আরিফ (১১) ও ইব্রাহিম (১৪)। তারা উপজেলার আসলামপুর এলাকার কালাম মাঝির ছেলে। বাবা কালাম মাঝির সঙ্গে মাছ ধরতে যায় নদীতে। কোনো কোনো সময় বাবার অনুপস্থিতিতে তারা নৌকার হাল ধরে।

তাদের বাবা কালাম মাঝি (৫৬) বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্য ছয়জন। একজনের রোজগারে সংসার চলে না। নদীতে জাল ফেলা, মাছ ধরা, ঘাটে বেচাসহ এত কাজ একা করা সম্ভব হয় না। ফলে বাধ্য হয়ে দুই ছেলেকে নিজের সঙ্গে কাজে নিয়ে যাই।’

এদের মতো জেলে পরিবারের শিশুরা ব্যস্ত সময় কাটায় নদীতে। জেলে নৌকায় বড়দের সঙ্গে শ্রম দিচ্ছে এমন শিশুর বয়স সাত-চৌদ্দ বছর। তারা এ বয়সেই পরিণত হয় একজন দক্ষ মাঝি বা জেলেরূপে। দারিদ্র্যের কারণে উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশায় যুক্ত হচ্ছে।

সামরাজ মৎস্যঘাট এলাকার জেলে কাদির বলেন, ‘আমরা বাপ-দাদার পেশায় থেকেই মাছ ধরে আয়রোজগার করছি। আমাদের ছেলেদেরও এই কাজই করতে হবে। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ আমরা। মাছ না পেলে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। সন্তানদের লেখাপড়া করানোর সামর্থ্য নেই।’

চর মাদ্রাজ এলাকার ট্রলারমালিক লোকমান হোসেন বলেন, ‘সংসারের অভাবের তাড়নায় শিশুরা নৌকা ও ট্রলারে কাজ করে। এসব শিশু বাবুর্চির সহকারী, জাল টানা ও জাল থেকে মাছ বাছাই করাসহ প্রক্রিয়াজাতকরণে কাজ করে থাকে।’

চর কুকরিমুকরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, অভিভাবকদের মধ্যে নেই সচেতনতা। তাছাড়া অভিভাবকেরা জেলে পেশায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। অনেকেই পৈতৃক পেশার সূত্র ধরে মাছ ধরছে। এর ওপর পরিবারে আর্থিক অনটন তো আছেই। এসব কারণেই জেলে পরিবারের শিশুরা স্কুলে না গিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যায়।

চরফ্যাশন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশ্রাফ হোসেন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে উপবৃত্তির টাকা, বিনা মূল্যের বই ওদের জন্যও বরাদ্দ থাকে। এসব অনুদান নিয়েও পরিবারের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে কাজে নামে শিশুরা। স্কুলের হাজিরা খাতায় নাম থাকলেও দিন কাটে নদীর বুকে। এসব শিশুকে স্কুলমুখী করতে শিগগির স্কুলের পাঠদানের চলমান সময়সূচির পরিবর্তন আসতে পারে। পৌরসভাসহ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৬২ হাজার ৮০৬। এসব শিক্ষার্থীর ৩০-৪০ শতাংশ উপকূলীয় এলাকার।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, দারিদ্র্যের কারণে জেলে পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকেরই স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয় না। চরফ্যাশন উপজেলায় শিশুজেলের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। এ পেশায় শিশুদের যুক্ত না করতে অভিভাবকদের সচেতন করা হচ্ছে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মামুন হোসেন জানান, মা-বাবার অসচেতনতার কারণে এসব শিশুর ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। শিশুজেলেদের স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করা গেলে এদের উপবৃত্তির আওতায় আনা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আইএসআইপ্রধান

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত