Ajker Patrika

শ্যাম

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৭ জুন ২০২২, ১১: ৩৭
শ্যাম

শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ছিলেন বিজ্ঞানের ছাত্র। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গণিত এবং রসায়নশাস্ত্র ও পদার্থবিদ্যায় ডাবল অনার্সসহ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। বিজ্ঞানের ছাত্র তিনি, কিন্তু ইংরেজিতে ছিল গভীর দখল। সংসদে অথবা সওয়াল জবাবে, রাজনৈতিক বিবৃতি বা ভাষণে তিনি যে ইংরেজি ব্যবহার করতেন, তা হয়ে উঠত সাহিত্যের ভাষা। গান্ধীজি আর জিন্নাহকে লেখা তাঁর দুটি চিঠিকে স্টেটম্যান পত্রিকা বলেছিল, চিঠি দুটি ইংরেজি পত্রসাহিত্যে স্থান পাবে।

সেই হক সাহেব যখন কলকাতা থেকে বরিশালে যেতেন, তখন তিনি স্টিমারঘাট থেকে হেঁটে সার্কিট হাউসে গিয়ে উঠতেন। হেঁটে যাওয়ার সময় মানুষজন দাঁড়িয়ে থাকত রাস্তার ধারে। সেটাই ছিল তাঁর গণসংযোগ। এ সময় তদবিরকারীরাও ভিড় করত। অনেক বড় শরীরের মানুষ ছিলেন, তাই বেশিক্ষণ একনাগাড়ে হাঁটতে পারতেন না। তপন রায়চৌধুরীদের বাড়িতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতেন।

একবার তিনি দল বদল করার পর বরিশালে এসেছেন। বিশ্রাম নিচ্ছেন তপন রায়চৌধুরীদের বাড়িতেই। এ সময় তাঁর বন্ধু, স্কুলের সহপাঠী ইন্দুগুপ্ত বলে উঠেছিলেন, ‘ফজলু, তর লইগ্‌গা ভদ্দরসমাজে আর মুখ দ্যাহান্ যায় না।’

নিরুদ্বিগ্ন ফজলুল হকের জবাব, ‘ভদ্দরসমাজে মুখ দ্যাহাইতে পারিস না? তয় “নিতম্ব” দ্যাহাইস!’

তিনি অবশ্য নিতম্ব শব্দটি ব্যবহার করেননি, করেছিলেন বরিশালসহ পূর্ববঙ্গের অনেকখানেই ব্যবহৃত একটি চোখা শব্দ, যা এখানে প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

কৃষক প্রজা পার্টি ছেড়ে মুসলিম লীগে যোগ দিলে কিছু লোককে কালো পতাকা হাতে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল পথে। বলে দেওয়া হয়েছিল, স্টিমার থেকে ফজলুল হক নামলে পতাকা নাড়িয়ে বলতে হবে, ‘শেম, শেম’।

যাদের হাতে পতাকা ছিল, তারা ‘শেম’ শব্দের মানে জানত না। ফজলুল হকের দিকে তাকিয়ে তারা বলে যেতে লাগল, ‘শ্যাম, শ্যাম’।

শ্রীরাধিকাও নাকি এর চেয়ে মধুর স্বরে শ্যামকে ডাকতে পারত না।

সূত্র: সাজ্জাদ শরিফ, আলাপে ঝালাতে, পৃষ্ঠা ১৯৯

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত