Ajker Patrika

সব বিদ্বেষ দূরে যায়

সম্পাদকীয়
সব বিদ্বেষ দূরে যায়

ভদ্র ঘরের বয়স্ক নারীদের নিয়ে জনসমক্ষে নৃত্য পরিবেশন করায় সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের প্রবীণেরা রবীন্দ্রনাথের তীব্র নিন্দা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ১৯২৬ ও ১৯২৭ সালে করেছিলেন এই নাচের আয়োজন। শুধু কি ব্রাহ্মসমাজের প্রবীণেরা! বেশ কয়েকটি পত্রিকাও রবীন্দ্রনাথের কঠোর সমালোচনা করেছিল।

বলে রাখা ভালো, সেই সময় ব্রাহ্মসমাজের তিনটি ভাগ ছিল। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ছিল আদি ব্রাহ্মসমাজ, মেছুয়াবাজার স্ট্রিটে ছিল কেশবচন্দ্র সেনের অনুরাগী ও ভক্তদের সমাজ আর কর্নওয়ালিস স্ট্রিটে ছিল সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের মন্দির। কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের প্রবীণেরাই রবীন্দ্রনাথের সমালোচনা করেছিলেন। ফলে ১৯২৮ সালে যখন রবীন্দ্রনাথকে এখানে আমন্ত্রণ জানানো হলো, তখন তিনি অসুস্থ হওয়ায় অনুষ্ঠানে যোগ না দিলেও পারতেন। অসুস্থতার সঙ্গে আগের দুই বছরে রবীন্দ্রনাথের সমালোচনাকে যুক্ত করে অনেকেই ভাবলেন তিনি এই অনুষ্ঠানে রাগ বা অভিমান করেই আসবেন না।

কিন্তু ১৯২৮ সালে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকীতে ভাদ্রোৎসব করার এই আয়োজনে অসুস্থ শরীর নিয়েই হাজির হলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁকে আচার্যের কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

সত্যিই তিনি ছিলেন অসুস্থ। দুর্বল কণ্ঠে উপাসনার কাজ করেছিলেন তিনি, গেয়েছিলেন একটি ব্রহ্মসংগীত। দেবব্রত বিশ্বাস তখন একেবারেই নবীন। গানের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ারও সুযোগ ছিল না তাঁর। কিন্তু তিনি একটি ব্যাপার লক্ষ করলেন। অসুস্থ শরীর নিয়েও তাঁদেরই কাছে এসেছেন রবীন্দ্রনাথ, যাঁরা তাঁর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। তিনি তো অসুস্থ ছিলেনই, সুতরাং ‘না’ করে দেওয়া মোটেই কঠিন কিছু ছিল না। তাহলে তিনি এলেন কেন?

উত্তরটা তিনি পেয়েছিলেন বয়স বাড়ার পর। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘সব বিদ্বেষ দূরে যায় যেন তব মঙ্গলমন্ত্রে।’ যিনি এ কথা লিখতে পারেন এবং জীবনে তার প্রয়োগ ঘটাতে পারেন, তিনি ছোটখাটো ব্যাপারে অভিমান করে থাকবেন, তা তো হতেই পারে না। বলে রাখা ভালো, সেদিন ছিল ৬ ভাদ্র। সেদিনই রবীন্দ্রনাথকে প্রথম দেখেছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস। 

সূত্র: দেবব্রত বিশ্বাস, ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত, পৃষ্ঠা ৩২-৩৩

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত