Ajker Patrika

বৃষ্টির মধ্যেই চলছে কার্পেটিং

বাপ্পী শাহরিয়ার, চকরিয়া (কক্সবাজার)
আপডেট : ১৭ জুন ২০২২, ১২: ২৪
বৃষ্টির মধ্যেই চলছে কার্পেটিং

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী-পশ্চিম বড় ভেওলা-ঢেমুশিয়া-কোনাখালীর বাগগুজরা সড়কের ২ কিলোমিটার ২০০ মিটার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শুধু তা-ই নয়, প্রতিষ্ঠানটি নিয়ম না মেনে বৃষ্টির মধ্যে কার্পেটিংয়ের কাজ করছে। এ ছাড়া সড়কে নিম্নমানের উপকরণ ও খোয়া ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, পল্লী সড়ক ও কালভার্ট মেরামত কর্মসূচি প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বদরখালী থেকে পশ্চিম বড় ভেওলা-ঢেমুশিয়া-কোনাখালীর বাগগুজরার পেকুয়া কানেকটিং সড়ক পর্যন্ত ২ হাজার ২০০ মিটার ভাঙাচোরা জায়গা মেরামত ও কার্পেটিং করা হচ্ছে। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে এ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়।

২ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকার এই কাজটি পায় চকরিয়া ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শুরু করে ২০২২ সালের ১৪ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার কথা। এ সময়ে বিল উত্তোলন করেছে প্রায় ৫৯ লাখ টাকা। তবে গত মে মাসে এলজিইডির মাসিক প্রতিবেদনে ওই কাজের ৫০ শতাংশ অগ্রগতি দেখানো হয়। কিন্তু তড়িঘড়ি করে জুন ফাইনালে ৯৫ শতাংশ দেখালেও কাজের অগ্রগতি নেই।

কিন্তু চুক্তির মেয়াদ পার হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি শেষ করতে পারেনি। ডিসেম্বরে শুরুর কথা থাকলেও দেড় মাস পর কাজ আরম্ভ করে প্রতিষ্ঠানটি। এই সড়কের নির্মাণকাজে অনিয়ম, নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার ও নকশা না মেনে সংস্কার করার বিষয়ে অভিযোগ উঠলেও এলজিইডি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এলজিইডির পক্ষে কাজটি তদারকি করছেন উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফ আলী।

এর আগে ২০২১ সালে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা চুক্তিমূল্যে বদরখালী ইউনিয়ন থেকে কোনাখালী-বাগগুজরা সড়কের বদরখালী অংশে প্রায় চার কিলোমিটার বিটুমিন পিচঢালাই করে এই একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তখন সড়কটি পিচঢালাই করার এক দিনের মাথায় কার্পেটিং ভেদ করে আগের পুরোনো পাথর ও ইটের খোয়া বের হয়ে এসেছিল। এলজিইডি তখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং সড়কটির পরের অংশের কাজও ওই একই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ায় এলাকায় ক্ষোভ দেখা দেয়। ২০২১ সালের ৩ জুলাই এই নিয়ে দৈনিক আজকের পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে এলজিইডি। পরে ওই ঠিকাদারকে দিয়ে কাজটি করিয়ে নেয়।

উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফ আলী বলেন, ‘ভাঙাচোরা সড়কের খানাখন্দ ও গর্ত ঠিকঠাক করে মেরামত ও কার্পেটিং দ্বারা সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে। কার্পেটিং প্রায় শেষ হয়েছে। কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ।’ বৃষ্টির মধ্যে কীভাবে কার্পেটিং করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে না। তবে কয়েক দিন আগে হতে পারে। তবুও বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, গত সোমবার বৃষ্টির মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির নিয়োজিত লোকজন ও শ্রমিকেরা সড়কে কাজ করছিলেন। যেখানে সংস্কার চলছিল, সেখানে রাস্তার পাশে নিম্নমানের উপকরণ ও ইটের খোয়া পড়ে আছে। রাস্তায় বসানো ইটের খোয়া গাড়ি চলাচলে উঠে যাচ্ছে। বালু মেশানোর কথা থাকলেও ভাঙা ইটের রাবিশ মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। দরপত্রে বেশি ভাঙা অংশে চার ইঞ্চি, তিন ইঞ্চি ও কম ভাঙা অংশে দুই ইঞ্চি করে মেকাডমের কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু কোনো কোনো অংশে মেকাডম এক ইঞ্চির কম দেখা গেছে।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, গত রবি ও সোমবার বৃষ্টির মধ্যে কার্পেটিংয়ের কাজ করা হয়েছে। বাধা দিলেও তাঁরা শোনেননি। এই ঠিকাদার গত বছরও এ সড়ক সংস্কার করেছিল। বদরখালী বাজারে কার্পেটিং করার এক দিন পরই পিচঢালাই উঠে যায়।

‘চকরিয়ার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ফরিদুল আলমকে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে তাঁকে প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও সাড়া দেননি।

এলজিইডির চকরিয়া কার্যালয়ের প্রকৌশলী মো. জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘দু-এক দিনের মধ্যে সাইট পরিদর্শনে যাব। সংস্কারে কোনো ত্রুটি থাকলে অবশ্যই ঠিকাদারকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে। শিডিউল অনুযায়ী কাজ করতে হবে। বৃষ্টির সময় কাজ করেছে কি না তা খোঁজ নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত