Ajker Patrika

বেপরোয়া এক মুক্তিযোদ্ধা

আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ১৮
বেপরোয়া এক মুক্তিযোদ্ধা

ঢাকায় আসার আগে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে বদি ছিলেন কিশোরগঞ্জ ও জাওয়ারে। সেখানেই কাজী মোহাম্মদ আলী আনোয়ারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে বদি ছিলেন কাজীর এক বছরের সিনিয়র। কিশোরগঞ্জেই ছোটখাটো অপারেশন করে যাচ্ছিলেন তাঁরা। সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েকজন। একবার তাড়াইল থানা ঘেরাও করলেন। কিন্তু রাইফেলগুলো পেলেন বোল্ট খোলা। কাজ হলো না।

এ সময় তাঁদের গতিবিধি টের পেয়ে যান বদির মা। তিনি কাজীকে ডেকে বলেন, ‘তোরা তো আমাদের কথা শুনবি না। শুনবি বন্ধুদের কথা। শোন, আমার ছেলে দেশের জন্য মরে যাক, আমার তাতে আপত্তি নেই, আফসোসও নেই। কিন্তু সে আনরিকগনাইজ্ড হয়ে রাস্তাঘাটে মরে পড়ে থাকবে, সেটা আমি চাই না। ওকে তোরা বোঝা। ওকে কোনো ট্রেনিং ক্যাম্পের তালিকাভুক্ত হয়ে প্রশিক্ষণ নিতে বল।’

কাজী বদিকে বোঝাতে চেষ্টা করেন। খুব একটা কাজ হয় না। এরপর কাজী যখন টাকাপয়সার জন্য ঢাকায় আসেন, তখন বদিও আসেন সঙ্গে। যেদিন ফিরে যাবেন, সেদিন বদি ঠিক করেন থেকে যাবেন ঢাকায়। এখানে আর্মস আছে, অ্যামুনেশন আছে। স্বপন বলে এক বন্ধু এরই মধ্যে একটা পাওয়ার স্টেশন উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গেই থাকবেন তিনি।

বদি থেকে গেলেন ঢাকায়। বদি এ রকম বেপরোয়া যোদ্ধা হতে পেরেছিলেন তাঁর দুর্দান্ত সাহসের কারণে। মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ ছাড়াই একের পর এক দুঃসাহসিক অভিযানগুলো তিনি চালিয়েছিলেন ইচ্ছাশক্তি আর সাহসিকতার ওপর নির্ভর করে।

কাজীকে একসময় বদি বলেছিলেন, ‘কথা দাও, আমি যদি কখনো আহত হই, তাহলে আমাকে হত্যা করবে। ওদের অত্যাচার আমি সহ্য করতে পারব না।’

অথচ কোনো এক বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতায় তিনি ধরা পড়লেন ২৯ আগস্ট। এরপর পাকিস্তানি বাহিনীর অকথ্য নির্যাতন সহ্য করতে হয় বদিকে। তাঁর লাশ পাওয়া যায়নি। কিন্তু সবাই জানে, তাঁর পরিণতির খবর।

সূত্র: কাজী মোহাম্মদ আলী আনোয়ার (হেলাল), দীপ্র তপন, পৃষ্ঠা ৯৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত