Ajker Patrika

দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, দুর্নীতিও রয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২২, ১৬: ৩১
দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, দুর্নীতিও রয়েছে

‘দেশে দুর্নীতির সমস্যা আছে। এটি ক্যানসারের মতো। উন্নয়ন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এসব নেতিবাচক দিক আছে, তা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। তবে তা দূর করার চেষ্টা করছি।’ এমন মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। তিনি গতকাল রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘পরবর্তী উন্নয়নযাত্রায় বাংলাদেশ জাপানের অংশীদারত্ব’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। সঞ্চালনা করেন নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদ, জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদ, জাইকা প্রধানসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষক সৈয়দ ইউসুফ।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি হচ্ছে আঠার মতো। দেশে উন্নয়ন হচ্ছে বলেই এর উপসর্গ তৈরি হচ্ছে। দেশে দুর্নীতি প্রতিকারে আইন রয়েছে জানিয়ে বলেন, ‘এখন দেশে প্রচুর উন্নয়নকাজ হচ্ছে। এতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির সুযোগও তৈরি হচ্ছে। কোথাও দুর্নীতি হলে সেখানে আমরা প্রতিকারের ব্যবস্থা করি, এ ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন অনুসারে কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাই এতে অনেক সময় পার হয়।’

মন্ত্রী বলেন ‘জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। তাদের সঙ্গে আমাদের কখনো সম্পর্ক খারাপ হয়নি। বাংলাদেশ সরকারও তাদের সব সময় উচ্চমর্যাদা দিয়ে থাকে। আর দেশটি নানা আঙ্গিকে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে থাকে। আর স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের উন্নয়নের বড় অংশীদার হলো জাপান।’

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন দেশের সব জায়গায় জাপানি বিনিয়োগ রয়েছে। মাতারবাড়ী, মেট্রোরেল, আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চল সর্বক্ষেত্রেই জাপান কাজ করছে। চলমান এসব কাজ শেষ হলে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলবে।

এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সম্ভাবনা দেখছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, রপ্তানি বাড়াতে সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) দিকে যাচ্ছে। জাপানের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য করা যায় কি না, বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। যদিও এখানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ প্রতিবছর বাড়ছে। গত ১০ বছরে বিনিয়োগ বেড়েছে ৩ গুণের বেশি। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অনেক জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা করতে চায়।

অর্থনীতিতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে নাওকি বলেন, উন্নত দেশ হওয়ার পথে বাংলাদেশকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। শিল্পকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হবে। জনশক্তির দক্ষতা বাড়াতে হবে। তরুণদের উদ্ভাবনী দিকে জোর দিতে হবে।

জাপানের রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পর চলমান বাণিজ্যসুবিধা অব্যাহত রাখতে চায় জাপান। এ জন্য মুক্তবাণিজ্য চুক্তি অথবা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন এবং উভয় দেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে একটি যৌথ কার্যদল গঠন করা যেতে পারে।

জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার স্বপ্নে জাপান অন্যতম সারথি। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রার প্রতিটি স্তরে জাপানের সহযোগিতার কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

কাজী নাবিল আহমেদ এমপি বলেন, বাংলাদেশের ৫০ বছরের উন্নয়নে জাপান একটি বড় অংশীদার। দেশটি এফডিআই, গবেষণাসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) বাংলাদেশ অফিসের প্রধান ইউহো হায়াকাওয়া বলেন, জাইকা ভবিষ্যতে আরও ঘনিষ্ঠভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায়। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পর চলমান বাণিজ্য-সুবিধা অব্যাহত রাখতে চায় জাপান। উভয় দেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা যেতে পাবে।

জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আসিফ এ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার জাপানকে বিনিয়োগের যেমন সুযোগ দিচ্ছে, তেমনি সেই দেশের সরকারও ব্যবসা-বাণিজ্যে আমাদের বিশেষ সুযোগ দিচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত