Ajker Patrika

ধর্ষণচেষ্টার মূল্য লাখ টাকা!

সম্পাদকীয়
ধর্ষণচেষ্টার মূল্য লাখ টাকা!

আট বছরের এক শিশু। বাড়ি তাদের রংপুরের পীরগাছায়, ছাওলা ইউনিয়নের একটি গ্রামে। খেলাধুলা-পড়াশোনার বয়স তার। এই বয়সী ফুটফুটে শিশুর জন্য মায়া জাগার কথা। কামনা জাগার তো কথা না। অথচ ৩৫ বছর বয়সী হাফিজুল ইসলামের কামনাই জেগেছিল। তাহলে বলাই যায়, হাফিজুল কোনো সাধারণ মানুষ নন, সমাজকে কুরে খাওয়া কীটগুলোর মধ্যে একজন তিনি! ওই আট বছরের শিশুকে তিনি ধর্ষণের চেষ্টা চালান।

আজকের পত্রিকার রংপুর সংস্করণের একটি খবর থেকে জানা যায়, হাফিজুল ওই শিশুকে একা পেয়ে শ্লীলতাহানি করতে গেলে শিশুটি চিৎকার করে ওঠে। হাফিজুল তাঁর অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে না পেরে পালিয়ে যান। এলাকায় এ ঘটনায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে সালিস বসে। সালিস ডাকেন ইউনিয়ন পরিষদের  (ইউপি) সদস্য ইসমাইল হোসেন, এক সংরক্ষিত নারী সদস্যের স্বামী আবু তালেবসহ স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি। তাঁরা হাফিজুলের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে বিষয়টির মীমাংসা করেন। ব্যাপারটা কি এত সহজেই মিটে যেতে পারে? এটাই কি ধর্ষণচেষ্টার সুবিচার? পুলিশের ইনচার্জকে নাকি ঘটনাটি অবহিত করা হয়। পুলিশ কি আসলে কোনো ঘটনার বিচার করতে পারে কিংবা এমন ধরনের আপসে সম্মতি দিতে পারে? অনেক মানুষের উপস্থিতিতে নাকি বিষয়টির আপসরফা হয়েছে। অনেক মানুষ সালিসে উপস্থিত থাকলেই কি শ্লীলতাহানির সুবিচার হয়ে যায়?

শুধু ধর্ষণ নয়, ধর্ষণচেষ্টাও যে ফৌজদারি অপরাধ, গুরুতর অপরাধ, তা সবারই জানা। বাংলাদেশি আইনে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার সুস্পষ্ট ধারা রয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ১০ বছর এবং সর্বনিম্ন ৫ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়। আর এ ধরনের ঘটনার বিচার করতে পারেন কেবল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। সালিস ডেকে শ্লীলতাহানির বিচার যাঁরা করছেন, তাঁরা কি ভেবে দেখেছেন, কী অন্যায়টা করছেন?

গ্রামাঞ্চলেই মূলত সালিস ডেকে বিচারের চল রয়েছে। প্রায়ই এ ধরনের খবর প্রকাশিত হয় যে ধর্ষণচেষ্টার শাস্তি কান ধরে ওঠবস, জুতার বাড়ি কিংবা অর্থদণ্ড। গ্রামের মুরব্বি, ইউপি চেয়ারম্যান বা সদস্য ও অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তি, যাঁরা সালিস ডেকে কোনো ঘটনার বিচার করেন, তাঁরা কি আদৌ ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণচেষ্টা সম্পর্কে, এসবের শাস্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল? তাঁরা কি ভেবে দেখেছেন, তাঁদের ঘরের কন্যাশিশুটি কিংবা নারীটি এমন ঘটনার শিকার হলে তাঁরা কি এভাবেই সালিস ডেকে অভিযুক্তকে কয়েক ঘা বেত, কান ধরে ওঠবস কিংবা লাখ টাকা জরিমানার শাস্তি দিয়ে বিদায় করতেন? নাকি আইনের আশ্রয় নিতেন?

ফৌজদারি কোনো অপরাধের বিচার সালিস ডেকে করা যায় না। আইনের আশ্রয় নিতে হয়। এ কথাটা শিখবেন সালিসকারীরা এবং একই সঙ্গে নালিশকারীরা, সেই আশা আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেটা না হলে হাতে নগদ ১ লাখ টাকা থাকলে যে কারও যে কাউকে ধর্ষণ করার ইচ্ছা জেগে উঠতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

ভারতসহ একসঙ্গে তিন দেশ সামলাবেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, দিল্লিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নারীর সঙ্গে ঝগড়ার পর রূপসা সেতু থেকে নিচে লাফ দেন সাংবাদিক বুলু: কোস্ট গার্ড

ডাকসু প্রার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের হুমকি, সমালোচনার ঝড়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত