সৈয়দ রুহুল আমীন
সৈয়দ মুজতবা আলী বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর বই পড়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিল না। যখন সময় পেতেন, তখনই বই পড়তেন।
দেশ-বিদেশের প্রবীণ-নবীন সাহিত্যিক সবার লেখা পড়তেন, পড়ে ভালো লাগলে বইয়ের লেখককে চিঠি দিয়ে তাঁর ভালো লাগার কথাও জানাতেন।
এই বই পড়ার ভেতর দিয়ে মুজতবা আলী আরেক রম্য সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীর লেখার সঙ্গে পরিচিত ও চমৎকৃত হন এবং ভাবেন, আহা! কী চমৎকার লেখা। আলাপের সুযোগ হলে ভালো হতো, অনেক কিছু জানা যেত।
আর ওই দিকে শিবরাম বই লিখেই খালাস, নিজের বা অন্য কারওরই লেখা পড়তেন না। শিবরাম নিজেকে মেহনতি মজদুর লেখক ভাবতেন। লিখে যাই, খেয়ে লিখি, লিখতে গেলে পড়া নাস্তি। তাই বই পড়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। লেখার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ ছাড়া আর কিছুই রাখতেন না, কোনো নোট বা ডায়েরি কিছুই ছিল না তাঁর। প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর, ঠিকানা অন্যান্য তথ্য সবকিছু দেয়ালে লিখে রাখতেন তিনি, তবে কীভাবে যেন সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘দেশে বিদেশে’, ‘চাচা কাহিনী’, ‘পঞ্চতন্ত্র’ ইত্যাদি পড়ে ফেলেছিলেন।
সব মিলিয়ে এই ছিলেন আমাদের প্রিয় লেখক শ্রী শিবরাম চক্রবর্তী ওরফে শিব্রাম চক্কোত্তী।
একদা কি করিয়া মিলন হ’লো দোঁহে। অমোঘ নিয়মে জগতের প্রত্যাশিত এবং নির্ধারিত ব্যাপারগুলি যেভাবে ঘটে যায়, সেই নিয়মেই বসুমতী অফিসে, প্রাণতোষ ঘটকের আড্ডায় সৈয়দ মুজতবা আলীর সঙ্গে শ্রী শিবরাম চক্রবর্তীর পরিচয়টা হয়েই গেল। প্রাথমিক আলাপচারিতার পর মুজতবা আলী পরম আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার অফুরন্ত এত গল্প আপনি পান কোত্থেকে? নিশ্চয়ই আপনার গ্রন্থসংগ্রহটি খুব বিরাট হবে, দেখতে ইচ্ছা করে।’
‘কী করে দেখবেন? একখান বইও নেই আমার। এমনকি আমার নিজের বইও না। বই পড়ার সময়ই নেই আমার!’ অকপট উক্তি শিবরামের।
প্রথম পরিচয়েই দেখা গেল আচার-আচরণে দুজনের ভেতরে বিস্তর ফারাক।
কিন্তু ‘কী ছিল বিধাতার মনে’? পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই এই দুজনের ভেতরে এক শ্রদ্ধা আর স্নেহের এক গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
শিবরামের আত্মজীবনমূলক অসাধারণ গ্রন্থ ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’।
কেউ যদি মানুষ শিবরামকে জানতে চান, তাহলে তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’ পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবেন। তবে ওখানে দুটি তথ্য খুবই প্রাসঙ্গিক।
প্রথমটি হচ্ছে, তাঁর প্রিয়তম খাবার হচ্ছে রাবড়ি।
দ্বিতীয়টি কিঞ্চিৎ বেদনাদায়ক। এই বিশাল পৃথিবীতে শিবরাম ছিলেন বড়ই নিঃসঙ্গ। অসংখ্য ভক্ত আর অনুরাগী; কিন্তু বন্ধু ভাবতেন মোটে ছয়জনকে—সৈয়দ মুজতবা আলী, অখিল নিয়োগী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বনফুল, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ও বিশু মুখোপাধ্যায়।
শিবরাম চক্রবর্তীর সংবর্ধনা সভা।
শিবরাম চক্রবর্তী কখনো সভা-সমিতিতে যেতেন না আর নিজের সংবর্ধনা সভায়? প্রশ্নই ওঠে না! কিন্তু তারপরও যেতে হলো জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্র মঞ্চে সংবর্ধনা নিতে। মঞ্চে শিবরামকে বসানো হয়েছে। পাশেই বসেছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু অখিল নিয়োগী ওরফে স্বপর বুড়ো, সম্ভবত তাঁরই একান্ত অনুরোধে শিবরাম রাজি হয়েছিলেন এই সংবর্ধনা নিতে।
মানপত্র পাঠ হলো, একে একে বক্তারা শিবরাম সম্পর্কে খুব ভালো ভালো কথা বলছেন। কিন্তু শিবরামের কিছুই ভালো লাগছে না, উসখুস করছেন, শেষে পাশে বসা অখিল নিয়োগীকে বলেই ফেললেন, ‘এসব মানপত্রটত্র দিয়ে আমার কী হবে, তার চাইতে আমাকে বরং এক হাঁড়ি রাবড়ি আনিয়ে দিন, বসে বসে খাই, খিদে পেয়েছে কিনা।’
অখিল নিয়োগী খুব ভালো করে তাঁর বন্ধুর নাড়ি-নক্ষত্রের খবর জানতেন। এক্ষুনি রাবড়ি আনিয়ে না দিলে যেকোনো কিছু যে ঘটে যেতে পারে, তা তিনি বিলক্ষণ জানতেন। তাই তাড়াতাড়ি করে রাবড়ি আনিয়ে দিলেন, মঞ্চে বসেই সবার সামনে শিবরাম রাবড়ি সাবাড় করলেন।
রাবড়ির জুড়ি নেই।
ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা থেকে
শিবরাম চক্রবর্তী এবং ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের গল্প।
অনেক আগের কথা। শিবরাম চক্রবর্তীর সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছিল। কিছুতেই কোনো কাজ পাচ্ছেন না। বেশ কিছু লেখা ছাপা হচ্ছে কিন্তু তাঁরা একটি পয়সাও দিচ্ছেন না, অর্ধাহারে আর অনাহারে দিন কাটছে তাঁর।
হঠাৎ করে ভাবলেন আচ্ছা, ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে গেলে কেমন হয়।
অনেক আগে শিবরাম যখন স্বদেশি আন্দোলনে ভলান্টিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তাঁদের কাজ ছিল কংগ্রেসের মিটিংয়ের সময় প্যান্ডেলের গেটে দাঁড়িয়ে নেতাদের আগমন-নির্গমনের সময় জয়ধ্বনি দেওয়া, তখন গান্ধী, নেহরু, সুভাষচন্দ্র, বিধান রায় বড় নেতাদের থেকে শুরু করে সবার জন্য জয়ধ্বনি করাই ছিল তাঁদের কাজ।
কত দিন আগের কথা যদি চিনতে না পারেন, তবে পরিচয় দিলে নিশ্চয়ই চিনবেন—এই আশায় দেখা করলেন।
না, পরিচয় দিতে হলো না, দেখেই চিনতে পারলেন, ‘কংগ্রেস মণ্ডপে দেখেছি তোমায়। আমার খুব ভালো মনে আছে, তা কী হয়েছে তোমার?’
‘মারাত্মক কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট পরিষ্কার হচ্ছে না।’
‘তাহলে এই ওষুধটা নিয়ে যাও, শোবার আগে গরম দুধের সঙ্গে খেয়ে ঘুমিও। সকালেই পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
‘দুধ পাব কোথায়?’ অর্থসংকটের ইঙ্গিত দিলেন শিবরাম।
‘অসুবিধা নেই, গরম পানির সঙ্গে খেয়ো, তাহলেও কাজ হবে।’
দীর্ঘদিন পর প্রথম আলাপে এর পর কিছু বলা যায় না তাই উঠে পড়লেন শিবরাম।
পরে আরও দুদিন গেলেন। একই সমস্যা।
এবার মানবদরদি ডা. বিধান রায় বুঝলেন; তবে শিবরামকে অপ্রস্তুত বা বিব্রত করতে চাইলেন না। তাই চিকিৎসকসুলভ স্বাভাবিক গলায় বললেন, ‘এবার ধরেছি তোমার ব্যারাম, এই নাও তার ওষুধ!’ বলে ড্রয়ার থেকে খান কয়েক দশ টাকার নোট বের করে বললেন, ‘পেট ভরে খাও, খেলে পরেই তো বেরোবে। আহারের পরেই না বাহার।’
ডা. রায়ের বাড়ি থেকেই বেরিয়ে শিবরাম খুশিতে ফেটে পড়লেন। মনে সাধ হলো আমিনিয়ায় গিয়ে বিরিয়ানি খেতে। কিন্তু আমিনিয়া তো অনেক দূর। খিদে পেটে সবুর সইছে না। তাই সামনেই শিবরামের আরেক প্রিয় রেস্তোরাঁ সাবীরে ঢুকে পড়লেন।
প্রশস্ত ভোজনের পর ম্যাটিনি শো দর্শন করে খোশমেজাজে মেসের পথ ধরলেন শিবরাম। বহুদিন পর আজ সবকিছু ভালো লাগছে। আহা কী আনন্দ আজ আকাশে-বাতাসে।
ফিরোজের গল্প।
সৈয়দ মুজতবা আলীর জ্যেষ্ঠপুত্র সৈয়দ মোশাররফ আলী যার ডাক নাম ফিরোজ, সে ছোটবেলা থেকেই খুব বই পড়ত। তার পিতা লক্ষ করলেন, ফিরোজ বেশ কয়েকজনের লেখা পড়ে, তবে বেশি পড়ে শিবরাম চক্রবর্তীর বই। তাই একদিন জিজ্ঞেস করলেন, ‘শিবরামের বই বুঝি তোমার খুব ভালো লাগে?’
‘খু-উ-ব।’ ফিরোজের পরিষ্কার উত্তর।
‘যাবে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করতে? আমার সঙ্গে তাঁর খুব ভালো বন্ধুত্ব আছে।’
পিতার লেখক প্রতিভা সম্পর্কে ফিরোজের কোনো ধারণা ছিল না, শিবরামের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথাও জানত না। তাই সে অবাক হয়ে বলল, ‘অত বড় লেখক, তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে কী করে?’
‘কী করে হলো তা তো জানি না। তবে তুমি চাইলে তোমাকে নিয়ে যেতে পারি।’
ফিরোজ সঙ্গে সঙ্গেই রাজি।
শিবরাম চক্রবর্তী সেদিন মুজতবা আলী ও তাঁর ছেলে ফিরোজকে কী কী দিয়ে আপ্যায়ন করবেন অনেক কিছু ভেবে রেখেছিলেন। তবে মুজতবা আলী এসে সবকিছু ভেস্তে দিলেন। বললেন, ‘শিবরাম, তুমি ব্যস্ত হয়ো না। ফিরোজ কিছু খেতে আসেনি। ও এসেছে তোমাকে দেখতে, তুমি বরং তার সঙ্গে কথা বলো, সে তাতেই খুশি হবে।’
‘ওসব তো হবেই; কিন্তু ফিরোজকে কিছু খাওয়াব না তা তো হয় না। ফিরোজ তো আর ফি-রোজ আসে না।’
মুজতবা আলী এবার হার মানলেন, তবে শর্ত জুড়ে দিলেন, ‘ঠিক আছে তুমি যেকোনো একটি আইটেম আনাও।’
কোন দোকানের কোন আইটেম আনা হলো? তা জানা গেল সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা তাঁর বন্ধু শ্রী চারুচন্দ্র চক্রবর্তীকে (জরাসন্ধ) লেখা চিঠিতে, শিবরাম সেদিন ফ্লুরিজ থেকে কেক আনিয়েছিলেন। ইতালিয়ান বনেদি ব্র্যান্ডের কলকাতার অন্যতম সেরা কনফেকশনারির সেরা আইটেম।
সেদিন ফিরোজ কেক কেটেছিল, অনেক আনন্দ করেছিল তার প্রিয় লেখক শ্রীশিবরাম চক্রবর্তীকে নিয়ে।
তবে ফিরোজ আজও কেক কাটবে, অনেক আনন্দ করবে তার পুরো পরিবারের সঙ্গে। কারণ, আজ ফিরোজের জন্মদিন।
সৈয়দ মুজতবা আলী বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর বই পড়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিল না। যখন সময় পেতেন, তখনই বই পড়তেন।
দেশ-বিদেশের প্রবীণ-নবীন সাহিত্যিক সবার লেখা পড়তেন, পড়ে ভালো লাগলে বইয়ের লেখককে চিঠি দিয়ে তাঁর ভালো লাগার কথাও জানাতেন।
এই বই পড়ার ভেতর দিয়ে মুজতবা আলী আরেক রম্য সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীর লেখার সঙ্গে পরিচিত ও চমৎকৃত হন এবং ভাবেন, আহা! কী চমৎকার লেখা। আলাপের সুযোগ হলে ভালো হতো, অনেক কিছু জানা যেত।
আর ওই দিকে শিবরাম বই লিখেই খালাস, নিজের বা অন্য কারওরই লেখা পড়তেন না। শিবরাম নিজেকে মেহনতি মজদুর লেখক ভাবতেন। লিখে যাই, খেয়ে লিখি, লিখতে গেলে পড়া নাস্তি। তাই বই পড়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। লেখার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ ছাড়া আর কিছুই রাখতেন না, কোনো নোট বা ডায়েরি কিছুই ছিল না তাঁর। প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর, ঠিকানা অন্যান্য তথ্য সবকিছু দেয়ালে লিখে রাখতেন তিনি, তবে কীভাবে যেন সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘দেশে বিদেশে’, ‘চাচা কাহিনী’, ‘পঞ্চতন্ত্র’ ইত্যাদি পড়ে ফেলেছিলেন।
সব মিলিয়ে এই ছিলেন আমাদের প্রিয় লেখক শ্রী শিবরাম চক্রবর্তী ওরফে শিব্রাম চক্কোত্তী।
একদা কি করিয়া মিলন হ’লো দোঁহে। অমোঘ নিয়মে জগতের প্রত্যাশিত এবং নির্ধারিত ব্যাপারগুলি যেভাবে ঘটে যায়, সেই নিয়মেই বসুমতী অফিসে, প্রাণতোষ ঘটকের আড্ডায় সৈয়দ মুজতবা আলীর সঙ্গে শ্রী শিবরাম চক্রবর্তীর পরিচয়টা হয়েই গেল। প্রাথমিক আলাপচারিতার পর মুজতবা আলী পরম আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার অফুরন্ত এত গল্প আপনি পান কোত্থেকে? নিশ্চয়ই আপনার গ্রন্থসংগ্রহটি খুব বিরাট হবে, দেখতে ইচ্ছা করে।’
‘কী করে দেখবেন? একখান বইও নেই আমার। এমনকি আমার নিজের বইও না। বই পড়ার সময়ই নেই আমার!’ অকপট উক্তি শিবরামের।
প্রথম পরিচয়েই দেখা গেল আচার-আচরণে দুজনের ভেতরে বিস্তর ফারাক।
কিন্তু ‘কী ছিল বিধাতার মনে’? পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই এই দুজনের ভেতরে এক শ্রদ্ধা আর স্নেহের এক গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
শিবরামের আত্মজীবনমূলক অসাধারণ গ্রন্থ ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’।
কেউ যদি মানুষ শিবরামকে জানতে চান, তাহলে তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’ পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবেন। তবে ওখানে দুটি তথ্য খুবই প্রাসঙ্গিক।
প্রথমটি হচ্ছে, তাঁর প্রিয়তম খাবার হচ্ছে রাবড়ি।
দ্বিতীয়টি কিঞ্চিৎ বেদনাদায়ক। এই বিশাল পৃথিবীতে শিবরাম ছিলেন বড়ই নিঃসঙ্গ। অসংখ্য ভক্ত আর অনুরাগী; কিন্তু বন্ধু ভাবতেন মোটে ছয়জনকে—সৈয়দ মুজতবা আলী, অখিল নিয়োগী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বনফুল, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ও বিশু মুখোপাধ্যায়।
শিবরাম চক্রবর্তীর সংবর্ধনা সভা।
শিবরাম চক্রবর্তী কখনো সভা-সমিতিতে যেতেন না আর নিজের সংবর্ধনা সভায়? প্রশ্নই ওঠে না! কিন্তু তারপরও যেতে হলো জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্র মঞ্চে সংবর্ধনা নিতে। মঞ্চে শিবরামকে বসানো হয়েছে। পাশেই বসেছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু অখিল নিয়োগী ওরফে স্বপর বুড়ো, সম্ভবত তাঁরই একান্ত অনুরোধে শিবরাম রাজি হয়েছিলেন এই সংবর্ধনা নিতে।
মানপত্র পাঠ হলো, একে একে বক্তারা শিবরাম সম্পর্কে খুব ভালো ভালো কথা বলছেন। কিন্তু শিবরামের কিছুই ভালো লাগছে না, উসখুস করছেন, শেষে পাশে বসা অখিল নিয়োগীকে বলেই ফেললেন, ‘এসব মানপত্রটত্র দিয়ে আমার কী হবে, তার চাইতে আমাকে বরং এক হাঁড়ি রাবড়ি আনিয়ে দিন, বসে বসে খাই, খিদে পেয়েছে কিনা।’
অখিল নিয়োগী খুব ভালো করে তাঁর বন্ধুর নাড়ি-নক্ষত্রের খবর জানতেন। এক্ষুনি রাবড়ি আনিয়ে না দিলে যেকোনো কিছু যে ঘটে যেতে পারে, তা তিনি বিলক্ষণ জানতেন। তাই তাড়াতাড়ি করে রাবড়ি আনিয়ে দিলেন, মঞ্চে বসেই সবার সামনে শিবরাম রাবড়ি সাবাড় করলেন।
রাবড়ির জুড়ি নেই।
ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা থেকে
শিবরাম চক্রবর্তী এবং ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের গল্প।
অনেক আগের কথা। শিবরাম চক্রবর্তীর সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছিল। কিছুতেই কোনো কাজ পাচ্ছেন না। বেশ কিছু লেখা ছাপা হচ্ছে কিন্তু তাঁরা একটি পয়সাও দিচ্ছেন না, অর্ধাহারে আর অনাহারে দিন কাটছে তাঁর।
হঠাৎ করে ভাবলেন আচ্ছা, ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে গেলে কেমন হয়।
অনেক আগে শিবরাম যখন স্বদেশি আন্দোলনে ভলান্টিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তাঁদের কাজ ছিল কংগ্রেসের মিটিংয়ের সময় প্যান্ডেলের গেটে দাঁড়িয়ে নেতাদের আগমন-নির্গমনের সময় জয়ধ্বনি দেওয়া, তখন গান্ধী, নেহরু, সুভাষচন্দ্র, বিধান রায় বড় নেতাদের থেকে শুরু করে সবার জন্য জয়ধ্বনি করাই ছিল তাঁদের কাজ।
কত দিন আগের কথা যদি চিনতে না পারেন, তবে পরিচয় দিলে নিশ্চয়ই চিনবেন—এই আশায় দেখা করলেন।
না, পরিচয় দিতে হলো না, দেখেই চিনতে পারলেন, ‘কংগ্রেস মণ্ডপে দেখেছি তোমায়। আমার খুব ভালো মনে আছে, তা কী হয়েছে তোমার?’
‘মারাত্মক কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট পরিষ্কার হচ্ছে না।’
‘তাহলে এই ওষুধটা নিয়ে যাও, শোবার আগে গরম দুধের সঙ্গে খেয়ে ঘুমিও। সকালেই পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
‘দুধ পাব কোথায়?’ অর্থসংকটের ইঙ্গিত দিলেন শিবরাম।
‘অসুবিধা নেই, গরম পানির সঙ্গে খেয়ো, তাহলেও কাজ হবে।’
দীর্ঘদিন পর প্রথম আলাপে এর পর কিছু বলা যায় না তাই উঠে পড়লেন শিবরাম।
পরে আরও দুদিন গেলেন। একই সমস্যা।
এবার মানবদরদি ডা. বিধান রায় বুঝলেন; তবে শিবরামকে অপ্রস্তুত বা বিব্রত করতে চাইলেন না। তাই চিকিৎসকসুলভ স্বাভাবিক গলায় বললেন, ‘এবার ধরেছি তোমার ব্যারাম, এই নাও তার ওষুধ!’ বলে ড্রয়ার থেকে খান কয়েক দশ টাকার নোট বের করে বললেন, ‘পেট ভরে খাও, খেলে পরেই তো বেরোবে। আহারের পরেই না বাহার।’
ডা. রায়ের বাড়ি থেকেই বেরিয়ে শিবরাম খুশিতে ফেটে পড়লেন। মনে সাধ হলো আমিনিয়ায় গিয়ে বিরিয়ানি খেতে। কিন্তু আমিনিয়া তো অনেক দূর। খিদে পেটে সবুর সইছে না। তাই সামনেই শিবরামের আরেক প্রিয় রেস্তোরাঁ সাবীরে ঢুকে পড়লেন।
প্রশস্ত ভোজনের পর ম্যাটিনি শো দর্শন করে খোশমেজাজে মেসের পথ ধরলেন শিবরাম। বহুদিন পর আজ সবকিছু ভালো লাগছে। আহা কী আনন্দ আজ আকাশে-বাতাসে।
ফিরোজের গল্প।
সৈয়দ মুজতবা আলীর জ্যেষ্ঠপুত্র সৈয়দ মোশাররফ আলী যার ডাক নাম ফিরোজ, সে ছোটবেলা থেকেই খুব বই পড়ত। তার পিতা লক্ষ করলেন, ফিরোজ বেশ কয়েকজনের লেখা পড়ে, তবে বেশি পড়ে শিবরাম চক্রবর্তীর বই। তাই একদিন জিজ্ঞেস করলেন, ‘শিবরামের বই বুঝি তোমার খুব ভালো লাগে?’
‘খু-উ-ব।’ ফিরোজের পরিষ্কার উত্তর।
‘যাবে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করতে? আমার সঙ্গে তাঁর খুব ভালো বন্ধুত্ব আছে।’
পিতার লেখক প্রতিভা সম্পর্কে ফিরোজের কোনো ধারণা ছিল না, শিবরামের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথাও জানত না। তাই সে অবাক হয়ে বলল, ‘অত বড় লেখক, তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে কী করে?’
‘কী করে হলো তা তো জানি না। তবে তুমি চাইলে তোমাকে নিয়ে যেতে পারি।’
ফিরোজ সঙ্গে সঙ্গেই রাজি।
শিবরাম চক্রবর্তী সেদিন মুজতবা আলী ও তাঁর ছেলে ফিরোজকে কী কী দিয়ে আপ্যায়ন করবেন অনেক কিছু ভেবে রেখেছিলেন। তবে মুজতবা আলী এসে সবকিছু ভেস্তে দিলেন। বললেন, ‘শিবরাম, তুমি ব্যস্ত হয়ো না। ফিরোজ কিছু খেতে আসেনি। ও এসেছে তোমাকে দেখতে, তুমি বরং তার সঙ্গে কথা বলো, সে তাতেই খুশি হবে।’
‘ওসব তো হবেই; কিন্তু ফিরোজকে কিছু খাওয়াব না তা তো হয় না। ফিরোজ তো আর ফি-রোজ আসে না।’
মুজতবা আলী এবার হার মানলেন, তবে শর্ত জুড়ে দিলেন, ‘ঠিক আছে তুমি যেকোনো একটি আইটেম আনাও।’
কোন দোকানের কোন আইটেম আনা হলো? তা জানা গেল সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা তাঁর বন্ধু শ্রী চারুচন্দ্র চক্রবর্তীকে (জরাসন্ধ) লেখা চিঠিতে, শিবরাম সেদিন ফ্লুরিজ থেকে কেক আনিয়েছিলেন। ইতালিয়ান বনেদি ব্র্যান্ডের কলকাতার অন্যতম সেরা কনফেকশনারির সেরা আইটেম।
সেদিন ফিরোজ কেক কেটেছিল, অনেক আনন্দ করেছিল তার প্রিয় লেখক শ্রীশিবরাম চক্রবর্তীকে নিয়ে।
তবে ফিরোজ আজও কেক কাটবে, অনেক আনন্দ করবে তার পুরো পরিবারের সঙ্গে। কারণ, আজ ফিরোজের জন্মদিন।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৪ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৪ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৪ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫