Ajker Patrika

‘কার্ডে সহজে পণ্য কিনতে পারছি, সময়ও বাঁচছে’

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২২, ১৮: ০৪
‘কার্ডে সহজে পণ্য কিনতে পারছি, সময়ও বাঁচছে’

‘আগে সারা দিন অপেক্ষা করার পরও পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছি। কিন্তু এখন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যেকোনো সময় কার্ড আর টাকা নিয়ে এলে সহজে পণ্য কিনতে পারছি। এতে সময়ও বাঁচছে।’

তারাগঞ্জের মাঝেরহাট দাখিল মাদ্রাসা মাঠে গতকাল সোমবার ফ্যামিলি কার্ড দেখিয়ে টিসিবির পণ্য কিনতে এসে কথাগুলো বলছিলেন ইকরচালী কাচনা গ্রামের মহেশ চন্দ্র।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে গত রোববার থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হলেও তারাগঞ্জে এই কার্যক্রম চালু করা হয় গতকাল। এ দিন পাঁচ ইউনিয়নের মধ্যে কুর্শা বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠ, হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর, আলপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর, ইকরচালী মাঝেরহাট দাখিল মাদ্রাসা মাঠ ও সয়ার ইউনিয়নের ডারারপার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ৩ হাজার ৩৭৬ জনকে টিসিবির পণ্য দেওয়া হয়।

প্রতিটি পয়েন্টে দুজন ট্যাগ অফিসার, পুলিশ, গ্রাম পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মাধ্যমে কার্ডের বিপরীতে প্রতিজনকে দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি চিনি ও দুই কেজি ডাল দেওয়া হয়। প্যাকেজ মূল্য ধরা হয় ৪৬০ টাকা। ৩০ মার্চের মধ্যে এ সুবিধা ১০ হাজার ১১৯টি পরিবার পাবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, টিসিবির পণ্য নিতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। নারী ও পুরুষদের পৃথক সারি করে ট্যাগ অফিসারেরা মূল কার্ড ও ফটোকপি কার্ডে উপকারভোগীদের টিপসই নিয়ে একটি সংরক্ষণ করে মূল কার্ড ফেরত দেন। সেই কার্ড দেখে টাকা নিয়ে ডিলারেরা ট্রাক থেকে তেল, চিনি, ডাল ব্যাগে ভরে দিচ্ছিলেন। পণ্য বিক্রি উপলক্ষে কেন্দ্রগুলোর আশপাশে গড়ে উঠেছিল অস্থায়ী খাবারের দোকান।

কথা হয় ডারারপার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পণ্য কিনতে আসা কুঠিপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অ্যালাও মোর বিশ্বাস হওচে কম দামে সরকারি মাল কিনার পাইম। মুই জানোংয়ে না মোর নামে কার্ড হইছে। কাইল রাইতোত চৌকিদার বউয়ের হাতোত কার্ড দিয়া আসছে। সেই কার্ড ধরি তেল, ডাল, চিনি নিবার আসছুং।’

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান মিতু জানান, শুধু আনোয়ারই নয়, তাঁর মতো অনেকেই কার্ড পেয়ে অবাক হয়েছেন। করোনার সময়ে প্রণোদনার তালিকায় নাম থেকেও যাঁরা টাকা পাননি তাঁরাও সরকারি ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য কেনার জন্য ফ্যামিলি কার্ড পেয়েছেন। কার্ড দিয়ে তেল, ডাল, চিনি কিনতে পেরে খুশি তাঁরা।

মৌলভীপাড়া গ্রামের গৃহবধূ রিক্তা বেগম বলেন, ‘এর আগোতো ট্রাকোত করি সরকারি তেল, ডাল বেচাইছে। কম মাল ট্রাকোত নিয়া আসি এক-দেড় ঘণ্টাতে শেষ করছে। হামরা অর্ধেক মানুষ ঘুরি খালি হাতে ঘুরি গেছি। কিন্তু আইজ ডিলারেরা সেই বুদ্ধি শ্যাষ। কারচুপি কইরার পাবার নেয়। হামাক মাল বুঝি দিবার নাগবে। এটে চেয়ারম্যান-মেম্বার, পুলিশ-চৌকিদার, সরকারি অফিসারেরা বসি থাকি হামার টিপ সই নিয়া তেল, চিনি, ডাল দেওছে।’

বিকেল ৩টায় কথা হয় হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে টিসিবি পণ্য নিতে আসা সরকারপাড়া গ্রামের গৃহবধূ বিলকিস বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রথমে সকাল ১০টায় এসেছিলেন, ভিড় দেখে বাড়িতে গিয়ে সংসারের কাজ গুছিয়ে ফের এলেন। এখন পণ্য কিনে বাড়িতে যাচ্ছেন। কার্ড না থাকলে সংসারের কাজে যে সময়টা তিনি ব্যয় করতে পারলে তা ঠেলাঠেলি আর পণ্য কার আগে কে নিতে পারবেন সেই প্রতিযোগিতাতেই শেষ হতো বলে জানান এই গৃহবধূ।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইউএনও রাসেল মিয়া বলেন, ‘পরিবার পরিচিতি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিতরণের কারণে মানুষের দুর্ভোগ কমেছে। উপকারভোগীরা কার্ড দেখিয়ে উৎসব মুখর পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে পণ্য কিনে বাড়িতে ফিরছেন। আমরা প্রতিটি পয়েন্ট সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত