Ajker Patrika

ডিজিটাল ‘নকল’!

সম্পাদকীয়
ডিজিটাল ‘নকল’!

সারা বছর পড়ালেখা না করা ‘দুষ্ট’ ছেলেমেয়েরা মাঝে মাঝে খুব গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় ‘নকল’ করার ‘দুঃসাহস’ দেখাত—কখনো পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে কাঠের বেঞ্চে কিংবা ক্লাসের দেয়ালে ছোট ছোট হরফে লিখে, কখনো ছোট ছোট কাগজে ‘টুকলিফাই’ করে বাসা থেকেই জামা-কাপড়ের ভাঁজে লুকিয়ে আনত পরীক্ষার হলে। ধরা পড়লেই সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার...!

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষায় নকল করার এ রকম প্রবণতা আগের তুলনায় এখন অনেক কমেছে বলেই মনে হয়। হতে পারে সেটা শিক্ষাদান পদ্ধতির পরিবর্তনের ফলে। অথবা হতে পারে শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের ফলে। তবে এ কথাও সত্যি যে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলোয় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা অনিয়মিত নয়। হয়তো প্রশ্ন আগে হাতে পেয়ে যাওয়ায় নকল করার প্রয়োজন পড়ে না!

কিন্তু এবার এমন একটি ঘটনার তথ্য ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, যেখানে অবলম্বন করা হয় নকলের দুটি উপায়ই—পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং পরীক্ষার সময় উত্তর জানানো। সেটা আবার স্কুল-কলেজের পরীক্ষা না। সম্ভবত যাঁরা শিক্ষাসনদের পরীক্ষায় নকল করতে পারেননি, তাঁরা এবার চাকরি পাওয়ার পরীক্ষায় নকল করার সুযোগ পেয়েছেন।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘটনাটা মনে করা যাক—একটি চক্র চাকরির অন্তত নয়টি নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রার্থীদের বাইরে থেকে উত্তর বলে দেয়। পরীক্ষা শুরুর আগে কোনো না কোনো কেন্দ্রকে ‘ম্যানেজ’ করে প্রশ্নপত্র বাগিয়ে নিত চক্রটি। ওই কেন্দ্র থেকে প্রশ্নের ফটোকপি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হতো চক্রের সদস্যদের কাছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে প্রশ্নটি সমাধান করে ফেলত ‘প্রশ্ন সমাধান টিম’। এরপর তারা উত্তরগুলো পরীক্ষার্থীদের বলে দিত ওই ডিজিটাল ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইসের মাধ্যমে। নারী পরীক্ষার্থীদের অন্তর্বাস এবং ছেলেদের গেঞ্জির মধ্যে লুকানো থাকত ডিভাইসটি। পরীক্ষার্থীর কানে রাখা হতো ক্ষুদ্রাকৃতির বল, পকেটের মধ্যে থাকত একটি রাউটার। প্রশ্ন সমাধান টিম বাইরে থেকে ফোন করলেই উত্তর শুনতে পেতেন পরীক্ষার্থীরা এবং ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ হতো পরীক্ষা!

এই পুরো প্রক্রিয়ার জন্য চাকরিপ্রত্যাশীরা লাখ লাখ টাকা দিতেন চক্রটিকে। চাকরিভেদে এমসিকিউ পরীক্ষায় টিকিয়ে দিতে ৩-৫ লাখ টাকা এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য মোট ৮-১০ লাখ টাকা পরীক্ষার্থীদের দিতে হতো। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ (তৃতীয় ধাপ), বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট কালেক্টর (গ্রেড ২) ও বুকিং অ্যাসিস্ট্যান্ট (গ্রেড ২), পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অফিস সহায়ক, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক, মৎস্য বিভাগের অফিস সহায়ক, গণপূর্তের হিসাব সহকারী ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অফিস সহায়কসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার জন্য এই পন্থায় উপার্জন করত চক্রটি।

চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী নিশ্চয়ই তাঁদের শাস্তিও হবে। কিন্তু যাঁরা অসদুপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা দিলেন, চাকরি পেলেন, তাঁদের দিকে কি আঙুল উঠবে না? তাঁদের অপরাধ কি শাস্তিযোগ্য নয়?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত