Ajker Patrika

পদ আঁকড়ে থাকতে মরিয়া

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২২, ১০: ০০
পদ আঁকড়ে থাকতে মরিয়া

কক্সবাজারে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। এরও আগে ৯ উপজেলা, ৪ পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোর সম্মেলন হয়। এসব কমিটি ৩ বছরের জায়গায় ৯ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত সম্মেলন ছাড়াই চলছে। বেশির ভাগ কমিটিই একাধিক ধারা-উপধারায় চলে আসছে।

দলের নেতারা জানান, দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকার কারণে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন, তাঁরা পদ ছাড়তে রাজি নন। আবার তাঁরা জনপ্রতিনিধি হতেও মরিয়া। এ ছাড়া জেলায় বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পে সুযোগ-সুবিধা নেওয়া এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দলে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন নেতা-কর্মীরা। এ জন্য যাঁরা দলের পদে রয়েছেন, তাঁরা একটি বলয় 
তৈরি করেছেন। এতে নেতৃত্বের বাইরে থাকা নেতারা পদে আসতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, করোনাসংকট কাটিয়ে দলের সম্মেলন ও কাউন্সিলের উদ্যোগ নিতেই ঘটেছে বিপত্তি। সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে গিয়েই 
নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে মারামারি, দ্বন্দ্ব ও বিষোদ্গার জড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলন করতে গিয়ে দলের যদি এই হাল হয়, তাহলে উপজেলা ও জেলা সম্মেলনে কী অবস্থা হবে, তা নিয়ে চিন্তিত দলের নেতারা।

জেলা কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মূলত দীর্ঘদিন ধরে দলের সম্মেলন ও কাউন্সিল হচ্ছে না। এতে দলে নতুন নেতৃত্বও সৃষ্টি হয়নি। দলের সম্মেলন শেষ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে দলকে নির্বাচনের জন্য কতটুকু প্রস্তুত করা যাবে, তা নিয়ে শঙ্কিত নেতারা।

আগামী মে মাসের মধ্যে দলের ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা সম্মেলন ও কাউন্সিল শেষ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এরপর জুন মাসের যেকোনো দিন জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। গত ৯ মার্চ জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের প্রতিনিধি সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এই নির্দেশনা দিয়ে যান। তিনি সব উপজেলা ও পৌরসভার কাউন্সিলের তারিখও ঘোষণা করেন।

প্রতিনিধি সভার ঘোষণা অনুযায়ী কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন গত ২৪ মার্চ শেষ করা হয়। ২ এপ্রিল চকরিয়া উপজেলা সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে আগামী ২৩ মে নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি উপজেলাগুলোর সম্মেলনও মে মাসের বিভিন্ন তারিখে নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত ইউনিয়নগুলোর মধ্যে চকরিয়ার বমুবিলছড়ি ও পেকুয়া উপজেলার শীলখালী ইউনিয়ন ছাড়া অন্য কোথাও সম্মেলন শেষ করা যায়নি।

২২ এপ্রিল শীলখালী ইউনিয়নের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আসাদুজ্জামান চৌধুরীকে সভাপতি করা হলে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তিনি বিএনপি নেতা হিসেবে অভিযোগ ওঠায় তোপের মুখে এক দিনের মাথায় ওই কমিটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘মোটা অঙ্কের টাকা বিলিয়ে আসাদ আওয়ামী লীগের পদ ভাগিয়েছিলেন। এ জন্য প্রায় ৫০ জন বিএনপি ঘরানার লোকজনকে কাউন্সিলর বানানো হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ করলে কমিটি বাতিল করতে বাধ্য হয়। ওই সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান দলের স্লোগান দিতে বললেও আসাদ তা পারেননি বলে জানান তিনি।’

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আজিমুল হক আজিম বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের বিরোধিতা করে কোণঠাসা হওয়া নেতারা সম্মেলন নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ ছাড়া দলের একশ্রেণির সুবিধাভোগী ও দল ব্যবহার করে যাঁরা নিজেদের পকেট ভারী করেছেন, তাঁরা যেনতেনভাবে পদ ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে তিন নেতাকে মারধরের ঘটনায় দলের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।’

কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েল জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। দলকে বাঁচাতে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়া ঘোষণা দেন।

প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের বিষয়টি স্বীকার করেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বড় দল হিসেবে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা তো আছেই। তবে দীর্ঘদিন ধরে দল ক্ষমতায় থাকার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু সুবিধাভোগী বলয় তৈরি হয়েছে। এতে আধিপত্য বিস্তার ও নেতৃত্ব ধরে রাখতে অনেকে যা ইচ্ছে তা করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ গণতান্ত্রিক চর্চা ও সাংগঠনিক নিয়মও মানছেন না। সামনে জেলা কমিটির বৈঠকে এসব বিষয় আলোচনা করে সমাধানে বের করা হবে বলে জানান তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দলের সব পর্যায়ের সম্মেলন সম্পন্ন করতে জেলার সাংগঠনিক টিম সমন্বয় করছেন। কোথাও কোনো অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা হলে তা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কেউ নেতৃত্ব ধরে রাখতে দলের শৃঙ্খলা ও নিয়ম ভঙ্গ করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত