Ajker Patrika

পুরোনো অস্ত্র-গুলিতে নতুন করে উত্তপ্ত নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি

বিশেষ প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ থেকে
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩: ২৪
পুরোনো অস্ত্র-গুলিতে নতুন করে উত্তপ্ত নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি

প্রকৃতিতে বইছে পৌষের হিমেল হাওয়া। এর মধ্যেই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বেশ তপ্ত হাওয়া বইতে শুরু করেছে। পুরোনো এক অস্ত্র-গুলি-মামলায় সিটি করপোরেশনের মেয়র এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন যে তিনি নিজের শহরের নাম বদলে ওসমানীনগর করার প্রস্তাবও দিয়েছেন। এই নাম কেন আসছে তা নারায়ণগঞ্জের মানুষ যেমন বোঝে, দেশবাসীরও অজানা নয়।

ঘটনা পাঁচ বছর আগের। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি শহরের ফুটপাতে হকার বসানো নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় নারায়ণগঞ্জে। দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা ওই সংঘর্ষে শামীম ওসমানের সমর্থকেরা আইভীর ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। আইভীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার অভিযোগ ছিল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম এবং প্রকাশ্যে অস্ত্র দেখানোর অভিযোগ ছিল নিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সেই অস্ত্র মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে দুজনকে। এ নিয়েই ক্ষুব্ধ মেয়র আইভী।

ওই সময় গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় নিয়াজুল ইসলামের পিস্তল উঁচিয়ে ধরা ছবি এবং শামীম অনুসারী শাহ নিজামের গুলি করার ঘটনা।

পরে এ ঘটনায় মামলা নিয়েও হয় নাটক। স্থানীয় থানা মামলা না নেওয়ায় ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর আদালতে মামলা করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন আইন কর্মকর্তা জি এম এ সাত্তার। আদালতের আদেশে সদর থানা তদন্ত শুরু করলে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা চলে যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে। কয়েক দফা তদন্ত কর্মকর্তা বদলের পর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন পিবিআই পরিদর্শক আতাউর রহমান ভূঁইয়া।

সেই প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, ঘটনার দিন নিয়াজুল ও শাহ নিজামের হাতে পিস্তল দেখা গেছে। প্রথমজনের পিস্তল লাইসেন্স করা। দ্বিতীয়জনের বন্দুকের লাইসেন্স থাকলেও পিস্তলের নেই। শাহ নিজাম বিনা লাইসেন্সে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন করলে তা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেলেও জামিনে থাকায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি এবং অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাই দুজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের ধারা প্রমাণ করা যাচ্ছে না।

তবে দুজনের অব্যাহতির বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে আসে গত শনিবার মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর বক্তব্যের সূত্র ধরে। সেদিন এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারির কথা মনে আছে হয়তো নারায়ণগঞ্জবাসীর। হকার ওঠানোকে কেন্দ্র করে আমার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। আমাকে গুলিও করা হয়েছিল। আমাকে মানবঢাল করে বাঁচানো হয়েছিল। পুলিশ রিপোর্ট দিয়েছে শাহ নিজামের অস্ত্র দেখেছে। কিন্তু ওনার সাক্ষাৎকার নেওয়া গেল না বিধায় অস্ত্র মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়।’

গতকাল সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে কথা হয় আইভীর সঙ্গে। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনকে মনগড়া ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি। বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সাজানো নাটক বানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রভাবশালী মহলের কারণে এ শহরে অপরাধ করে সবাই পার পেয়ে যাচ্ছে। তারা এখানকার রাজা, আমরা সবাই প্রজা। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওসমানীনগরী নামের প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দেব।’

প্রকাশ্যে হাজারো মানুষ গুলি করতে দেখলেও আলামতের কারণে পিবিআই দুজনকে অস্ত্র মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে কাদের ইন্ধনে, সেটি সবাই জানে বলে মন্তব্য করেন মেয়র আইভী।

এ বিষয়ে পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলাটি দায়ের হয়েছে ঘটনার অনেক পরে। থানার পুলিশের হাত ধরে আমাদের কাছে এসেছে। অস্ত্র মামলার তদন্ত পিবিআই করেনি। যে দুজনের কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা কিন্তু তদন্তে অভিযুক্ত হয়েছেন। গুলি ও অস্ত্রের বিষয়ে আমরা যা পেয়েছি, তা-ই আদালতে জমা দিয়েছি। কারও ইন্ধন কিংবা প্রভাব এখানে কাজ করেনি।’

এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, তিনি ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছেন।

শাহ নিজাম প্রসঙ্গে পুলিশের অভিযোগের সমালোচনা করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ শহরে হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে মেয়র আইভীর ওপর শামীম ওসমান বাহিনীর সশস্ত্র হামলার ছবি আমরা সবাই দেখেছি। অস্ত্রসহ হামলার সেই ছবি সারা দেশের মানুষ দেখেছে। প্রতিটি পত্রিকা ও টিভিতে প্রকাশিত হয়েছে।

অথচ সেই মামলা থেকে অস্ত্রধারীদের নাকি দেখতেই পায়নি পুলিশ। তাদের ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হলো। নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন, পুলিশ ওসমান পরিবারের পক্ষ হয়ে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সে জন্যেই প্রকাশ্যে অস্ত্রসহ হামলা করলেও পুলিশ তা দেখে না।’

নারায়ণগঞ্জের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর জেলা কমিটির সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অবস্থান উদ্বেগজনক আকার ধারণ করেছে। একদিকে মেয়র আইভীর ওপর হামলার ঘটনায় মামলা থেকে অস্ত্রধারীদের অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি যেমন উদ্বেগের, অন্যদিকে শহরজুড়ে মাঝে মাঝেই মোটরসাইকেল বাহিনীর মহড়াতেও নগরবাসী ভীত।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৫ দেশে সফর বাতিল করলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনি

স্ত্রীকে হতে হবে নোরা ফাতেহির মতো, না খাইয়ে রেখে তিন ঘণ্টা করে ব্যায়াম করান স্বামী

বাংলা বলায় কলকাতার মার্কেটে ছুরি, বন্দুকের বাঁট ও হকিস্টিক নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা

ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুর, আবারও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, পুলিশের টিয়ার শেল-সাউন্ড গ্রেনেড

২০২৬ সালের পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনার নামের আগে গণহত্যাকারী, ফেসবুকে আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত