মহিউদ্দিন খান মোহন
গত ২২ অক্টোবর খুলনায় বিএনপির সমাবেশের পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা যখন উচ্ছ্বসিত, তখন একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা রয়ে গেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। আনন্দে উদ্বেল বিএনপির নেতা-কর্মীরা সে ঘটনার কথা সম্ভবত ভাবতেও পারছেন না। কেননা, ঘটনাটি ঘটেছে জনচক্ষুর অন্তরালে। যদিও এর শুরুটা হয়েছিল প্রকাশ্যেই।
সমাবেশের দুদিন আগে খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং অব্যাহতি পাওয়া সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু যখন সংবাদ সম্মেলন ডেকে ঘোষণা করলেন, তিনি তাঁর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন এবং সমাবেশকে সফল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবেন, তখন তাঁর সমর্থকেরা উজ্জীবিত হয়েছিলেন নিঃসন্দেহে। দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে দেশের প্রায় সব জেলাতেই আমার কিছু পরিচিত নেতা-কর্মী রয়েছেন।
তেমনই একজন জানালেন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু সমাবেশ সফল করতে সক্রিয় হওয়ার কথা ঘোষণা করার পর তাঁরা আশাবাদী হয়েছিলেন, অতীতের ভুল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবার হয়তো তাঁকে দলে মর্যাদাপূর্ণ কোনো পদে আসীন করবেন। তাঁদের আশা ছিল, মঞ্জুকে নিশ্চয়ই সমাবেশ-মঞ্চে ডাকা হবে এবং দলের একজন পরীক্ষিত নেতা হিসেবে তাঁকে বক্তব্য রাখারও সুযোগ দেওয়া হবে। এ আশাতেই তাঁরা কয়েক হাজার লোকের একটি মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন।
কিন্তু সমাবেশস্থলে যাওয়ার পরপরই তাদের সে আশার বেলুন চুপসে যায়। নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে মঞ্চে তো ডাকা হলোই না, এমনকি তিনি যে একটি বিশাল মিছিল নিয়ে সেখানে গেলেন, সে কথা একবারের জন্যও উচ্চারণ করা হলো না। হতাশ মঞ্জু-সমর্থকেরা সমাবেশ শেষে চুপচাপ যে যাঁর মতো চলে গেছেন।
নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সংবাদ সম্মেলন করে সমাবেশে অংশগ্রহণের খবরে অনেকের মতো আমিও ভেবেছিলাম, যা-ই হয়ে থাকুক না কেন বিএনপির নেতৃত্ব হয়তো মঞ্জুর মতো নেতাকে পুনরায় সক্রিয় করার এ সুযোগ কাজে লাগাবেন। কিন্তু আমি ছিলাম ভ্রান্ত। এতে অবশ্য আমি খুব একটা অবাক হইনি।
কেননা, এমন ঘটনা বিএনপিতে অনেক ঘটেছে। ২০১২ কি ১৩ সালের কথা। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা তখন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত এবং কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলার সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত। ওই সময় সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নির্বাচন ঘনিয়ে আসছিল। এক রাতে টেলিভিশনের খবরে দেখলাম, ব্যারিস্টার হুদার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। টিভির খবরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর হাস্যোজ্জ্বল ছবিও দেখানো হলো। পরদিন সকালে ফোন করলাম নাজমুল হুদাকে।
তাঁর সঙ্গে আমার অন্তরঙ্গতা আগে থেকেই ছিল। বললাম, ‘বহিষ্কারাদেশ তো প্রত্যাহার করা হলো। কিন্তু আপনাকে স্বপদে পুনর্বহাল করেছে তো?’ এটাও বললাম, ‘ঢাকা জেলার সভাপতি পদ আর পাবেন না। কারণ ওটা আবদুল মান্নান সাহেবকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ভাইস চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহালের চিঠি হাতে নিয়ে বেরিয়েছেন তো ম্যাডামের অফিস থেকে?’ নাজমুল হুদা বললেন, ‘খালেদা জিয়ার একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ওটা পরে পাঠিয়ে দেবে বলেছে।’ আমি তাঁকে বললাম, ‘ভাই, জীবনে হয়তো অনেক ভুলই করেছেন।
তবে এবারেরটা চরম ভুল। ওই চিঠি আপনি আর কোনো দিনই পাবেন না।’ হুদা ভাই বিরক্ত হলেন কি না, জানি না। বললেন, ‘না না, ম্যাডামের সামনে “সে” বলেছে আমাকে।’ বললাম, ‘ভাই, নামের পেছনে “বিশ্বাস” থাকলেই যে তাকে বিশ্বাস করা যাবে—এমনটি কিন্তু নয়।’ নাজমুল হুদা দলের প্যানেলের পক্ষে জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করলেন এবং বিএনপি জিতেও গেল। তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহালের সে চিঠি তাঁর কাছে অধরাই রয়ে গেছে।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু বিএনপির একজন পোড় খাওয়া নেতা। দলটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জড়িত রয়েছেন। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা সম্বন্ধে অবগত হয়েছিলাম ২০০৭ সালে ভয়ংকর সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বাগেরহাট জেলার কয়েকটি এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে। কী রকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সরকারি সংস্থার শ্যেনদৃষ্টি এড়িয়ে তিনি আমাদের নির্বিঘ্নে ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করেছিলেন, তা কোনো দিন ভুলতে পারব না।
সেই নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সঙ্গে দলের এমন নিষ্ঠুর মশকরায় কষ্টই পেলাম। ফোন করলাম তাঁকে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘সমাবেশে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে যে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, তা কার নির্দেশে?’ বললেন, ‘মহাসচিব আমাকে বলেছিলেন এটা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ। তিনি এটাও বলেছিলেন, আমাকে যথাযথ সম্মান দেওয়া হবে। কিন্তু কী সম্মান দেওয়া হলো তা তো দেখলেন।’
মঞ্জু জানালেন, সমাবেশের পরে মহাসচিব তাঁকে ফোন করেছিলেন, তিনি রিসিভ করেননি। এরপর এসএমএস দিয়ে লিখেছেন, আবেগ-ক্ষোভ সংযত রাখতে। আমি বললাম, ‘ভাই, মহাসচিবকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তিনি তো চলেন দলের “মালিক” এবং তাঁর অনুচরদের নির্দেশে। তিনি হয়তো বলেছিলেন আপনার কথা।
কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছ থেকে খুলনা বিএনপির লিজপ্রাপ্তরা সে কথায় হয়তো পাত্তা দেয়নি। কী আর করবেন, এটাকে ভাগ্যলিপি ভেবে মনকে প্রবোধ দিন। শুধু একটি কথা বলব আপনাকে, যদি মনে করেন বিএনপি এখন জিয়া-খালেদার বিএনপি আছে, তাহলে মস্ত ভুল করবেন। তাঁরা প্রবীণ এবং অভিজ্ঞদের মূল্যায়ন করতেন, যথাযোগ্য সম্মান দিতেন। আর এখন বিএনপিতে রাজনীতির চর্চা হয় না, হয় বেয়াদবির ওরিয়েন্টেশন।’ ভগ্ন-মনোরথে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ‘থ্যাংকু’ বলে লাইন কেটে দিলেন।
এদিকে বিএনপির রংপুর মহাসমাবেশের দিন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথা শুনে মনে হচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে তিনি বিএনপিতে যোগ দেবেন। কারণ তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যে সেটা বোঝা যাচ্ছে।’ কোনো রাজনৈতিক দলের উচ্চপদস্থ একজন নেতা এমন বালখিল্য কথা বলতে পারেন, তা ছিল অনেকেরই ধারণার বাইরে। বিষয়টি কদিন ধরে রাজনৈতিক এবং পাড়া-মহল্লার আড্ডায় আলোচিত হচ্ছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ওবায়দুল কাদের কি রিজভীর কাছে তেমন কোনো বার্তা পাঠিয়েছেন? যদিও ওবায়দুল কাদের এখনো রিজভীর কথার প্রত্যুত্তর করেননি। তবে অচিরেই হয়তো তিনিও কোনো অমিয় বাণী হাজির করবেন।
সে যা-ই হোক। আমি ভাবছি অন্য কথা। লক্ষ করা যাচ্ছে, যেদিন বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ থাকে, সেদিনই রিজভী কোনো কারণ ছাড়াই নয়াপল্টনে প্রেস ব্রিফিং করছেন। কেন? এটা কি মহাসমাবেশের খবরকে মিডিয়ায় গৌণ করার প্রয়াস? কারণ আগেও দেখা গেছে, মহাসচিব মির্জা ফখরুল জাতীয় প্রেসক্লাব বা ডিআরইউ মিলনায়তনে বক্তৃতা দিচ্ছেন কিংবা গুলশান অফিসে সংবাদ সম্মেলন করছেন, একই সময়ে রিজভী নয়াপল্টনে প্রেস ব্রিফিং ডেকে সংবাদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন।
কেন যেন এটাকে মহাসচিবের সঙ্গে রিজভীর ঠান্ডা লড়াই মনে হয় আমার। কেননা, প্রচারিত আছে, রিজভী মহাসচিবকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন এবং তাঁকে জনসমক্ষে অগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রতিপন্ন করার প্রয়াস চালাচ্ছেন। আরও লক্ষণীয়, রিজভী তাঁর প্রেস ব্রিফিংয়ে যে কথাগুলো বলছেন, গণসমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা একই কথা বলে থাকেন। তো যে কথাগুলো সিনিয়র নেতারা সমাবেশে বলছেন, সেই একই কথা মিডিয়া ডেকে নয়াপল্টনে বসে রিজভীকে বলতে হবে কেন
বিষয়টি নিয়ে পুরোনো রাজনৈতিক এক সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিনি বললেন, ‘আপনি তো জানেন, এই লোকটি মিডিয়া-ক্রেজি। প্রতিদিন মিডিয়ায় তাঁর উপস্থিতি থাকতেই হবে। তাই কারণে-অকারণে সাংবাদিকদের ডেকে নানা রকম অভিনব তথ্য বিতরণ করেন। আবার কখনো কাকডাকা ভোরে অথবা কখনো গোধূলির আলো-আঁধারিতে ১৫-২০ জন কর্মী নিয়ে দলীয় অফিসের সামনের রাস্তায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মিছিলও করেন। তিনি এটা বোঝেন না যে এতে তাঁর এবং দলের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আর ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে যা বলেছেন, তা কি কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বলতে পারেন?’
বিএনপির ওই কর্মীর কথার কী জবাব দেব, তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। রিজভীকে কখনো অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ মনে হয়নি। তবে সহকর্মীদের পেছন থেকে ল্যাং মারার অভ্যাসটি তাঁর পুরোনো। এটাকে মস্তিষ্কের অসুস্থতা না বলে বরং অসুস্থ মানসিকতা বলাই যুক্তিযুক্ত।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
গত ২২ অক্টোবর খুলনায় বিএনপির সমাবেশের পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা যখন উচ্ছ্বসিত, তখন একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা রয়ে গেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। আনন্দে উদ্বেল বিএনপির নেতা-কর্মীরা সে ঘটনার কথা সম্ভবত ভাবতেও পারছেন না। কেননা, ঘটনাটি ঘটেছে জনচক্ষুর অন্তরালে। যদিও এর শুরুটা হয়েছিল প্রকাশ্যেই।
সমাবেশের দুদিন আগে খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং অব্যাহতি পাওয়া সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু যখন সংবাদ সম্মেলন ডেকে ঘোষণা করলেন, তিনি তাঁর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন এবং সমাবেশকে সফল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবেন, তখন তাঁর সমর্থকেরা উজ্জীবিত হয়েছিলেন নিঃসন্দেহে। দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে দেশের প্রায় সব জেলাতেই আমার কিছু পরিচিত নেতা-কর্মী রয়েছেন।
তেমনই একজন জানালেন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু সমাবেশ সফল করতে সক্রিয় হওয়ার কথা ঘোষণা করার পর তাঁরা আশাবাদী হয়েছিলেন, অতীতের ভুল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবার হয়তো তাঁকে দলে মর্যাদাপূর্ণ কোনো পদে আসীন করবেন। তাঁদের আশা ছিল, মঞ্জুকে নিশ্চয়ই সমাবেশ-মঞ্চে ডাকা হবে এবং দলের একজন পরীক্ষিত নেতা হিসেবে তাঁকে বক্তব্য রাখারও সুযোগ দেওয়া হবে। এ আশাতেই তাঁরা কয়েক হাজার লোকের একটি মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন।
কিন্তু সমাবেশস্থলে যাওয়ার পরপরই তাদের সে আশার বেলুন চুপসে যায়। নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে মঞ্চে তো ডাকা হলোই না, এমনকি তিনি যে একটি বিশাল মিছিল নিয়ে সেখানে গেলেন, সে কথা একবারের জন্যও উচ্চারণ করা হলো না। হতাশ মঞ্জু-সমর্থকেরা সমাবেশ শেষে চুপচাপ যে যাঁর মতো চলে গেছেন।
নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সংবাদ সম্মেলন করে সমাবেশে অংশগ্রহণের খবরে অনেকের মতো আমিও ভেবেছিলাম, যা-ই হয়ে থাকুক না কেন বিএনপির নেতৃত্ব হয়তো মঞ্জুর মতো নেতাকে পুনরায় সক্রিয় করার এ সুযোগ কাজে লাগাবেন। কিন্তু আমি ছিলাম ভ্রান্ত। এতে অবশ্য আমি খুব একটা অবাক হইনি।
কেননা, এমন ঘটনা বিএনপিতে অনেক ঘটেছে। ২০১২ কি ১৩ সালের কথা। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা তখন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত এবং কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলার সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত। ওই সময় সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নির্বাচন ঘনিয়ে আসছিল। এক রাতে টেলিভিশনের খবরে দেখলাম, ব্যারিস্টার হুদার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। টিভির খবরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর হাস্যোজ্জ্বল ছবিও দেখানো হলো। পরদিন সকালে ফোন করলাম নাজমুল হুদাকে।
তাঁর সঙ্গে আমার অন্তরঙ্গতা আগে থেকেই ছিল। বললাম, ‘বহিষ্কারাদেশ তো প্রত্যাহার করা হলো। কিন্তু আপনাকে স্বপদে পুনর্বহাল করেছে তো?’ এটাও বললাম, ‘ঢাকা জেলার সভাপতি পদ আর পাবেন না। কারণ ওটা আবদুল মান্নান সাহেবকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ভাইস চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহালের চিঠি হাতে নিয়ে বেরিয়েছেন তো ম্যাডামের অফিস থেকে?’ নাজমুল হুদা বললেন, ‘খালেদা জিয়ার একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ওটা পরে পাঠিয়ে দেবে বলেছে।’ আমি তাঁকে বললাম, ‘ভাই, জীবনে হয়তো অনেক ভুলই করেছেন।
তবে এবারেরটা চরম ভুল। ওই চিঠি আপনি আর কোনো দিনই পাবেন না।’ হুদা ভাই বিরক্ত হলেন কি না, জানি না। বললেন, ‘না না, ম্যাডামের সামনে “সে” বলেছে আমাকে।’ বললাম, ‘ভাই, নামের পেছনে “বিশ্বাস” থাকলেই যে তাকে বিশ্বাস করা যাবে—এমনটি কিন্তু নয়।’ নাজমুল হুদা দলের প্যানেলের পক্ষে জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করলেন এবং বিএনপি জিতেও গেল। তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহালের সে চিঠি তাঁর কাছে অধরাই রয়ে গেছে।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু বিএনপির একজন পোড় খাওয়া নেতা। দলটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জড়িত রয়েছেন। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা সম্বন্ধে অবগত হয়েছিলাম ২০০৭ সালে ভয়ংকর সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বাগেরহাট জেলার কয়েকটি এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে। কী রকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সরকারি সংস্থার শ্যেনদৃষ্টি এড়িয়ে তিনি আমাদের নির্বিঘ্নে ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করেছিলেন, তা কোনো দিন ভুলতে পারব না।
সেই নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সঙ্গে দলের এমন নিষ্ঠুর মশকরায় কষ্টই পেলাম। ফোন করলাম তাঁকে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘সমাবেশে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে যে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, তা কার নির্দেশে?’ বললেন, ‘মহাসচিব আমাকে বলেছিলেন এটা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ। তিনি এটাও বলেছিলেন, আমাকে যথাযথ সম্মান দেওয়া হবে। কিন্তু কী সম্মান দেওয়া হলো তা তো দেখলেন।’
মঞ্জু জানালেন, সমাবেশের পরে মহাসচিব তাঁকে ফোন করেছিলেন, তিনি রিসিভ করেননি। এরপর এসএমএস দিয়ে লিখেছেন, আবেগ-ক্ষোভ সংযত রাখতে। আমি বললাম, ‘ভাই, মহাসচিবকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তিনি তো চলেন দলের “মালিক” এবং তাঁর অনুচরদের নির্দেশে। তিনি হয়তো বলেছিলেন আপনার কথা।
কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছ থেকে খুলনা বিএনপির লিজপ্রাপ্তরা সে কথায় হয়তো পাত্তা দেয়নি। কী আর করবেন, এটাকে ভাগ্যলিপি ভেবে মনকে প্রবোধ দিন। শুধু একটি কথা বলব আপনাকে, যদি মনে করেন বিএনপি এখন জিয়া-খালেদার বিএনপি আছে, তাহলে মস্ত ভুল করবেন। তাঁরা প্রবীণ এবং অভিজ্ঞদের মূল্যায়ন করতেন, যথাযোগ্য সম্মান দিতেন। আর এখন বিএনপিতে রাজনীতির চর্চা হয় না, হয় বেয়াদবির ওরিয়েন্টেশন।’ ভগ্ন-মনোরথে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ‘থ্যাংকু’ বলে লাইন কেটে দিলেন।
এদিকে বিএনপির রংপুর মহাসমাবেশের দিন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথা শুনে মনে হচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে তিনি বিএনপিতে যোগ দেবেন। কারণ তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যে সেটা বোঝা যাচ্ছে।’ কোনো রাজনৈতিক দলের উচ্চপদস্থ একজন নেতা এমন বালখিল্য কথা বলতে পারেন, তা ছিল অনেকেরই ধারণার বাইরে। বিষয়টি কদিন ধরে রাজনৈতিক এবং পাড়া-মহল্লার আড্ডায় আলোচিত হচ্ছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ওবায়দুল কাদের কি রিজভীর কাছে তেমন কোনো বার্তা পাঠিয়েছেন? যদিও ওবায়দুল কাদের এখনো রিজভীর কথার প্রত্যুত্তর করেননি। তবে অচিরেই হয়তো তিনিও কোনো অমিয় বাণী হাজির করবেন।
সে যা-ই হোক। আমি ভাবছি অন্য কথা। লক্ষ করা যাচ্ছে, যেদিন বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ থাকে, সেদিনই রিজভী কোনো কারণ ছাড়াই নয়াপল্টনে প্রেস ব্রিফিং করছেন। কেন? এটা কি মহাসমাবেশের খবরকে মিডিয়ায় গৌণ করার প্রয়াস? কারণ আগেও দেখা গেছে, মহাসচিব মির্জা ফখরুল জাতীয় প্রেসক্লাব বা ডিআরইউ মিলনায়তনে বক্তৃতা দিচ্ছেন কিংবা গুলশান অফিসে সংবাদ সম্মেলন করছেন, একই সময়ে রিজভী নয়াপল্টনে প্রেস ব্রিফিং ডেকে সংবাদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন।
কেন যেন এটাকে মহাসচিবের সঙ্গে রিজভীর ঠান্ডা লড়াই মনে হয় আমার। কেননা, প্রচারিত আছে, রিজভী মহাসচিবকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন এবং তাঁকে জনসমক্ষে অগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রতিপন্ন করার প্রয়াস চালাচ্ছেন। আরও লক্ষণীয়, রিজভী তাঁর প্রেস ব্রিফিংয়ে যে কথাগুলো বলছেন, গণসমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা একই কথা বলে থাকেন। তো যে কথাগুলো সিনিয়র নেতারা সমাবেশে বলছেন, সেই একই কথা মিডিয়া ডেকে নয়াপল্টনে বসে রিজভীকে বলতে হবে কেন
বিষয়টি নিয়ে পুরোনো রাজনৈতিক এক সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিনি বললেন, ‘আপনি তো জানেন, এই লোকটি মিডিয়া-ক্রেজি। প্রতিদিন মিডিয়ায় তাঁর উপস্থিতি থাকতেই হবে। তাই কারণে-অকারণে সাংবাদিকদের ডেকে নানা রকম অভিনব তথ্য বিতরণ করেন। আবার কখনো কাকডাকা ভোরে অথবা কখনো গোধূলির আলো-আঁধারিতে ১৫-২০ জন কর্মী নিয়ে দলীয় অফিসের সামনের রাস্তায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মিছিলও করেন। তিনি এটা বোঝেন না যে এতে তাঁর এবং দলের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আর ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে যা বলেছেন, তা কি কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বলতে পারেন?’
বিএনপির ওই কর্মীর কথার কী জবাব দেব, তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। রিজভীকে কখনো অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ মনে হয়নি। তবে সহকর্মীদের পেছন থেকে ল্যাং মারার অভ্যাসটি তাঁর পুরোনো। এটাকে মস্তিষ্কের অসুস্থতা না বলে বরং অসুস্থ মানসিকতা বলাই যুক্তিযুক্ত।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৩ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৩ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৩ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫