Ajker Patrika

১০ মাসে নির্যাতনের শিকার ৩ হাজার ১২৮ নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ২৭
১০ মাসে নির্যাতনের শিকার ৩ হাজার ১২৮ নারী

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নানা আইন থাকলেও তা বাস্তবায়নে ত্রুটির কারণে মামলা নিষ্পত্তি হয় না। অনেক ভুক্তভোগীই আইন সম্পর্কে জানেন না। আইনি সহায়তা যাঁরা চান, তাঁদের অনেকের যাতায়াত ব্যয় বহনের ক্ষমতাটুকুও থাকে না। এ জন্য অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েও আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য উঠে আসে।

‘নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ কর, সম-অধিকার নিশ্চিত কর’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মুনিরা খান মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

সভায় জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নারী ও কন্যার প্রতি নির্যাতনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়, ২০২১ সালে ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে। এ সময় ৩ হাজার ১২৮ জন নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ সময় নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসন, ডাক্তার, আইনজীবী, সমাজকর্মী, গবেষক, গণমাধ্যম, বিচারকদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে নারী ও কন্যার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ২০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে—নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সেবা প্রদানকারী সব সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করা, নির্যাতনের শিকার নারীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার করা, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায় ও নির্দেশনাসমূহের ব্যাপক প্রচার ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭-এর কন্যার বিয়ের বয়স-সংক্রান্ত বিশেষ বিধান বাতিল করে আইনের বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, বিচার শুধু একটি প্রক্রিয়ায় হয় না। বিচারের রায় দেওয়ার আগে অনেকের ওপর নির্ভর করতে হয়। বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো একটি চেইন ইচ্ছা ও অনিচ্ছাকৃতভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে মামলা দ্রুত শেষ হয় না।

যে সমাজে নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, যৌতুক থাকবে সেই সমাজ কখনোই উন্নত হতে পারে না বলে জানিয়ে শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কেবলমাত্র আইনগত পরিবর্তনই নয়, মাইন্ডসেটের (মানসিকতা) পরিবর্তনও প্রয়োজন।

সভায় বিশেষ অতিথি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মানিত যুগ্ম সচিব সাবিরুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বলেও জানান তিনি।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতার ক্রমাগত হার বৃদ্ধি, নারীর ইতিবাচক অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে। সহিংসতা মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি যৌথ কার্যক্রম থাকা সত্ত্বেও সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যার বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিচ্ছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের একটাই চাওয়া, সহিংসতা কীভাবে নির্মূল করা যায়। নারীর প্রতি অসম্মান করে কোনো সমাজ এগোতে পারে না। সমাজের মূলভিত্তি হচ্ছে আইন। আইন বাস্তবায়নে নানা ত্রুটি আছে। নারী নির্যাতনের বিচার চাওয়ার জন্য এখন আন্দোলন করতে হচ্ছে। সম্পত্তির অধিকার নারীকে না দিলে পরিবারে সে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে পরিগণিত হবে। এ জন্য সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় অভিন্ন পারিবারিক আইনের বিকল্প নেই।’

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার, (উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন) লায়লা ফেরদৌসী, সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমীন প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত