Ajker Patrika

খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ

গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৫৫
খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ

ডুমুরিয়ায় দুটি খাল দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার আটলিয়া ও মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের ওড়বুনিয়ার মধুমারী ও বিষের খাল দুটি দখল করে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালীরা।

এর ফলে বর্ষা মৌসুমে খাল দুটি ও এর আশপাশের অন্তত ১০টি বিলের পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, এ অবস্থায় ব্যাহত হচ্ছে হাজারো বিঘা জমির ধান চাষ।

সম্প্রতি খাল দখলের প্রতিকার চেয়ে রবিউল ইসলাম মিঠুসহ ৬৬ জন কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওড়াবুনিয়া বিলে এলাকার সাধারণ মানুষের অন্তত দুই হাজার একর ফসলি জমি রয়েছে। ওই জমিতে ধান ও মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন স্থানীয় কৃষকেরা। বিলের ভেতর দিয়ে বর্ষা মৌসুমে এলাকার পানি নিষ্কাশন এবং শুষ্ক মৌসুমে ধান ও মাছ চাষের জন্য মধুমারী ও বিষের খাল নামক দুটি খাল রয়েছে।

কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ চুকনগর গ্রামের প্রভাবশালী আলতাপ হোসেন শেখ, নরনিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, মালতিয়া গ্রামের জব্বার মল্লিক ও আব্দুল হালিম মোড়ল, মাগুরাঘোনা গ্রামের মোক্তার শেখ, জামাল শেখ ও নুর আলী শেখসহ অনেকেই তাঁদের জমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত খাল দুটির বিভিন্ন অংশে অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ, নেট পাটা দিয়ে ঘের-বেড়ি তৈরি করে মাছ চাষ করছেন। এতে ওই খাল দুটি দিয়ে পানি নিষ্কাশন ও প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আরও জানা গেছে, মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের বেতাগ্রাম, ঘোষড়া, কাঞ্চনপুর, হোগলাডাঙ্গা, মাগুরাঘোনা গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ ওই খাল দুটি। খাল দুটিতে বাঁধ দেওয়ায় পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে বর্ষা মৌসুমে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে যায় এবং স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে বিলের হাজার হাজার কৃষক তাঁদের উৎপাদিত ধান ও মাছ চাষের জন্য পানি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী মাগুরাঘোনা গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম মিঠু, বিমল চন্দ্র দাস, মো. আসাদুজ্জামানসহ অনেকে জানান, ২০০৩ সালের দিকে এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনীর দাপট দেখিয়ে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি নদী-খাল জবর-দখল করে ঘের তৈরি করে মাছ চাষ করে আসছেন। ২০১৮ সালের অতি বর্ষণে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। সে সময় স্থানীয় সাংসদ নারায়ণ চন্দ্র চন্দের নির্দেশনায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানি নিষ্কাশনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

আটলিয়া ও মাগুরাঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও এলাকার সাধারণ মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ অপসারণ করে পানি নিষ্কাশন করা হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই ওই সব অবৈধ দখলদারেরা আবারও খালে বাঁধ দিয়ে মাছ শুরু করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ঘের মালিকদের একজন আলতাপ শেখ বলেন, ‘বিলে আমার অনেক জমি। জমিতে লবণপানি উঠে যাতে ধানের ক্ষতি না হয় তাই খালে বাঁধ দিয়েছি। চার বছর আগে একবার এলাকার লোকজন বাঁধ কেটে দেয়। তখন জমিতে লবণপানি ঢুকে ধানের অনেক ক্ষতি করেছিল। বিষয়টি সাংসদকে জানালে তিনি খাল বেঁধে দিতে বলেন।

সরকারি খালের জমির বৈধ বন্দোবস্ত নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আলতাপ শেখ বলেন, ‘কোনো বন্দোবস্ত নেওয়া নেই। আমার পূর্ব পুরুষেরা এখানে বাঁধ দিয়ে ঘের নির্মাণ করে মাছ ও ধান চাষ করে আসছিল, আমিও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি।’

অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘অভিযোগটি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) (এসিল্যান্ড) মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘তদন্তের জন্য গত শুক্রবার ওই এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। যাঁরা খাল দুটিতে বাঁধ দিয়েছেন তাঁদের ডেকে অল্পদিনের মধ্যে খাল উন্মুক্ত করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে এসেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত