Ajker Patrika

লাভ-লোকসানের হিসাবে কমছে পলাশ-শিমুলগাছ

রোবেল মাহমুদ, গফরগাঁও
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২২, ১২: ০১
লাভ-লোকসানের হিসাবে কমছে পলাশ-শিমুলগাছ

বসন্তের আগমনীতে আগে চোখে পড়ত পলাশ-শিমুলের ডালে থোকায় থোকায় ফুল। কিন্তু এখন যেন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিমুল-পলাশ। এ শোভায় মোহিত হতে এখন নগর ছেড়ে যেতে হয় নিভৃত পল্লিতে। এক দশক আগেও গফরগাঁওয়ে প্রচুর শিমুল গাছের দেখা মিলত। প্রকৃতিকে রাঙিয়ে ফুটে উঠত নয়নাভিরাম পলাশ-শিমুল ফুল। এখন লাভ-লোকসানের হিসাবে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে এসব গাছ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের সরস্বতী পূজার অন্যতম অনুষঙ্গ পলাশ ফুল, যা এখন পাওয়া দুষ্কর। অনেকের মতে, ইটভাটায় অবাধে পোড়ানোয় খেজুর গাছের মতো শিমুল-পলাশও বিলুপ্তির পথে। এ ছাড়া ফলদ বৃক্ষ না হওয়ায় এবং কাঠের মূল্য কম হওয়ায় কেউ রোপণে উৎসাহী হন না। এক সময় গ্রামে প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেত। তবে শিমুল গাছের কাঠ হয় বেশ নরম। তেমন কোনো কাজে আসে না।

অবশ্য শিমুল তুলার বালিশ ও তোশকের কদর রয়েছে। এখনো আরামদায়ক বালিশ, লেপ, তোশকের জন্য সবার পছন্দ শিমুলের তুলা। তবে গাছ কমে যাওয়ার কারণে এখন আর পর্যাপ্ত শিমুল তুলা পাওয়া যায় না। প্রতি কেজি শিমুল তুলা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি হলেও পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

গফরগাঁও সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর উল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণত রোপণের পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে শিমুল গাছে ফুল ফোটে। শিমুল গাছ দেড় শ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। শীতের শেষে পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। ফুল থেকেই হওয়া ফল চৈত্রের শেষে পুষ্ট হয়। বৈশাখে ফল পেড়ে শুকিয়ে তুলা সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া গাছ থেকে তুলার সঙ্গে উড়ে পড়া বীজ থেকে গাছের জন্ম হয়।’

এর ভেষজ গুণ রয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর উল ইসলাম বলেন, ‘পলাশ-শিমুল বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে বীজ সংগ্রহ করে উদ্যোগী হয়ে রোপণ করতে হবে।’

স্থানীয় পরিবেশবাদীরা বলছেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় পলাশ-শিমুল রোপণের উদ্যোগ নিলে অস্তিত্ব সংকট কাটিয়ে প্রকৃতিতে টিকে থাকবে এই উদ্ভিদ। গফরগাঁও লৌহিত্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি নাহিয়ান তমাল বলেন, ‘বর্ষায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পলাশ-শিমুলসহ শোভা বর্ধনকারী দুই শতাধিক গাছ রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রোপণের পর রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্ব নিলে এ উদ্যোগ সফল হবে।’

উস্থি ইউনিয়নের কান্দিপাড়া গ্রামের বৃক্ষপ্রেমিক দুদু মিয়া বলেন, ‘পণের অভাবে এ ভেষজ গুনসম্পন্ন উদ্ভিদ আজ বিলুপ্তির পথে। দিনে দিনে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পলাশ আর শিমুল ফুল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত