সাজিদ মোহন
২০১০ সালে ঐতিহ্য-গোল্লাছুট গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় ‘গ’ গ্রুপে দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে ২০ হাজার টাকার বই জিতেছিল আমার ছোট বোন। সেই বইগুলো হয়তো পুরস্কার না পেলে কখনোই কেনা হতো না, পড়া হতো না, জানা হতো না নাম। ঢাউস সাইজ আর দামি সব বইয়ের মধ্যে ছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচনাবলী, শামসুর রাহমানসমগ্র, বেহেস্তি জওর, ফিকহুস সিরাত, আবদুশ শাকুর রচনাবলী, দিল্লি: সিটি অব জিনস, আইজ্যাক অজিমভের সায়েন্স ফিকশনসমগ্র। পরিবারের বাইরেও আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীরা পড়েছিলেন বইগুলো, এখনো পড়ছেন, পড়বেন ভবিষ্যতেও।
বইয়ের সঙ্গে একটি ক্রেস্টও পেয়েছিল পুরস্কার। দুঃখজনক হলেও সত্য, ১৩ বছর পর ক্রেস্টটি এখন আর নেই। ক্রেস্টটি সংরক্ষণ করতে না পারা আমাদেরই দুর্বলতা। কিন্তু সংরক্ষণ করলেও শেলফে সাজিয়ে রেখে ড্রয়িং রুমের শোভাবর্ধন করা ছাড়া বিশেষ কোনো কাজে আসত না সেটি।
পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট বনাম বইয়ের বিষয়টি মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল কয়েক বছর ধরে। বিষয়টি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে কয়েক দিন আগে। বাংলাদেশে একটি বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ব্লেন্ডার। এর আগে বাংলাদেশে খেলতে এসে ব্লেন্ডার পুরস্কার পেয়েছিলেন সাবেক ইংরেজ ক্রিকেটার লুক রাইট, যা জনমনে হাস্যরসের খোরাক জুটিয়েছিল। টুকটাক বই লিখি বলে বডিবিল্ডার বা ক্রিকেটারদের ব্লেন্ডারের বদলে বই উপহার দেওয়ার হাস্যকর সুপারিশ করব না। খেলাধুলায় কী পুরস্কার দেবে, সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই ভালো বুঝবে। তবে ব্লেন্ডারের পরিবর্তে ক্রীড়াবিদেরা নিশ্চয়ই আরও ভালো কিছু প্রত্যাশা করেন।
বছরখানেক আগে একটা জিনিস দেখে ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল। চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা মোড়ে পুরোনো একটা বইয়ের দোকান ছিল। ছোটখাটো দোকান, দুর্লভ আর ভালো ভালো বই পাওয়া যেত। কয়েক বছর আগে উধাও হয়ে গেছে দোকানটা। তার জায়গায় বসেছে একটা ক্রেস্ট বানানোর দোকান। বইয়ের চেয়ে ক্রেস্টের চাহিদা যে বেশি, বইয়ের দোকানকে ক্রেস্টের দোকানের গিলে খাওয়ার ঘটনার চেয়ে বড় উদাহরণ আর হতে পারে না।
কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে ক্রেস্টের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠানে কেউ যোগদান করলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট, অবসর গ্রহণ করলেও ক্রেস্ট। ভালো কাজের জন্য কাউকে সম্মানিত করবেন—ক্রেস্ট। জন্মদিন, বিয়ে, বিবাহবার্ষিকীতে ক্রেস্ট। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়টি হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ক্রেস্ট দেওয়ার প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলছে। ক্রীড়া-সংস্কৃতি-বিতর্ক-কুইজ প্রতিযোগিতায় ক্রেস্ট, ভালো ফলাফলে ক্রেস্ট, সংবর্ধনায় ক্রেস্ট। বই এখন সেকেলে, ক্রেস্টই আধুনিক!
কী হয় এই ক্রেস্ট দিয়ে? শেলফে পড়ে থাকে, কিছুদিন পর নষ্ট হয়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, এরপর ময়লার ঝুড়িতে। পরিচিত অনেকের আলমারিতে ক্রেস্ট রাখার আর জায়গা হচ্ছে না। ফেলে রেখেছেন ঘরের কোনায়, চূড়ান্ত গন্তব্য ময়লার ঝুড়ি। লেখক আনিসুল হক তো একবার অনুরোধ করেছেন, তাঁর বাসায় এবং অফিসে ক্রেস্ট রাখার জায়গা নেই। ওই পয়সা দিয়ে যেন তাঁকে যেকোনো একটা বই উপহার দেওয়া হয়।
বই! ওমর খৈয়ামের বিখ্যাত উক্তিটি তো সবারই জানা, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা, যদি তেমন বই হয়।’
এক যুগ আগেও আমাদের দেশে ‘ক্রেস্ট মহামারি’ ছিল না। স্কুলের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় উপহার পেয়েছিলাম ডা. লুৎফর রহমানের ‘উন্নত জীবন’, ‘মহৎ জীবন’। বার্ষিক পরীক্ষায় ক্লাসে প্রথম হয়ে পেয়েছিলাম ‘বাংলা অভিধান’। পুরোনো বইয়ের দোকানে দেখা মেলে কতশত পুরোনো বই। জন্মদিনে, বিবাহবার্ষিকী বা বিয়ে, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় উপহার, পুরস্কার হিসেবে দেওয়া বইগুলো স্মৃতিকাতর করে তোলে।
একটি ভালো বই একটি জীবন পাল্টে দিতে পারে। বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছেন, ‘সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভেতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভেতর ডুব দেওয়া। যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।’
অর্থাৎ সাহিত্যে সান্ত্বনা না পেলে দর্শন, দর্শনে কুলিয়ে উঠতে না পারলে ইতিহাস, ইতিহাস হার মানলে ভূগোল—আরও কত-কী! এই অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি করি কি প্রকারে? বই পড়ে।
ক্রেস্ট প্রদানের সংস্কৃতি থেকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী। সম্মাননার নিদর্শন হিসেবে বই বা ছোট একটা গাছের কথা বলেছেন তিনি। বিজ্ঞজনেরা বলছেন, পুরস্কার বা উপহার হিসেবে ক্রেস্ট নয় বই, ট্রফি নয় বই, কাপ-পিরিচ-বদনা নয় বই দিন।
লেখক: সাজিদ মোহন, শিশুসাহিত্যিক
২০১০ সালে ঐতিহ্য-গোল্লাছুট গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় ‘গ’ গ্রুপে দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে ২০ হাজার টাকার বই জিতেছিল আমার ছোট বোন। সেই বইগুলো হয়তো পুরস্কার না পেলে কখনোই কেনা হতো না, পড়া হতো না, জানা হতো না নাম। ঢাউস সাইজ আর দামি সব বইয়ের মধ্যে ছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচনাবলী, শামসুর রাহমানসমগ্র, বেহেস্তি জওর, ফিকহুস সিরাত, আবদুশ শাকুর রচনাবলী, দিল্লি: সিটি অব জিনস, আইজ্যাক অজিমভের সায়েন্স ফিকশনসমগ্র। পরিবারের বাইরেও আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীরা পড়েছিলেন বইগুলো, এখনো পড়ছেন, পড়বেন ভবিষ্যতেও।
বইয়ের সঙ্গে একটি ক্রেস্টও পেয়েছিল পুরস্কার। দুঃখজনক হলেও সত্য, ১৩ বছর পর ক্রেস্টটি এখন আর নেই। ক্রেস্টটি সংরক্ষণ করতে না পারা আমাদেরই দুর্বলতা। কিন্তু সংরক্ষণ করলেও শেলফে সাজিয়ে রেখে ড্রয়িং রুমের শোভাবর্ধন করা ছাড়া বিশেষ কোনো কাজে আসত না সেটি।
পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট বনাম বইয়ের বিষয়টি মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল কয়েক বছর ধরে। বিষয়টি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে কয়েক দিন আগে। বাংলাদেশে একটি বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ব্লেন্ডার। এর আগে বাংলাদেশে খেলতে এসে ব্লেন্ডার পুরস্কার পেয়েছিলেন সাবেক ইংরেজ ক্রিকেটার লুক রাইট, যা জনমনে হাস্যরসের খোরাক জুটিয়েছিল। টুকটাক বই লিখি বলে বডিবিল্ডার বা ক্রিকেটারদের ব্লেন্ডারের বদলে বই উপহার দেওয়ার হাস্যকর সুপারিশ করব না। খেলাধুলায় কী পুরস্কার দেবে, সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই ভালো বুঝবে। তবে ব্লেন্ডারের পরিবর্তে ক্রীড়াবিদেরা নিশ্চয়ই আরও ভালো কিছু প্রত্যাশা করেন।
বছরখানেক আগে একটা জিনিস দেখে ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল। চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা মোড়ে পুরোনো একটা বইয়ের দোকান ছিল। ছোটখাটো দোকান, দুর্লভ আর ভালো ভালো বই পাওয়া যেত। কয়েক বছর আগে উধাও হয়ে গেছে দোকানটা। তার জায়গায় বসেছে একটা ক্রেস্ট বানানোর দোকান। বইয়ের চেয়ে ক্রেস্টের চাহিদা যে বেশি, বইয়ের দোকানকে ক্রেস্টের দোকানের গিলে খাওয়ার ঘটনার চেয়ে বড় উদাহরণ আর হতে পারে না।
কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে ক্রেস্টের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠানে কেউ যোগদান করলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট, অবসর গ্রহণ করলেও ক্রেস্ট। ভালো কাজের জন্য কাউকে সম্মানিত করবেন—ক্রেস্ট। জন্মদিন, বিয়ে, বিবাহবার্ষিকীতে ক্রেস্ট। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়টি হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ক্রেস্ট দেওয়ার প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলছে। ক্রীড়া-সংস্কৃতি-বিতর্ক-কুইজ প্রতিযোগিতায় ক্রেস্ট, ভালো ফলাফলে ক্রেস্ট, সংবর্ধনায় ক্রেস্ট। বই এখন সেকেলে, ক্রেস্টই আধুনিক!
কী হয় এই ক্রেস্ট দিয়ে? শেলফে পড়ে থাকে, কিছুদিন পর নষ্ট হয়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, এরপর ময়লার ঝুড়িতে। পরিচিত অনেকের আলমারিতে ক্রেস্ট রাখার আর জায়গা হচ্ছে না। ফেলে রেখেছেন ঘরের কোনায়, চূড়ান্ত গন্তব্য ময়লার ঝুড়ি। লেখক আনিসুল হক তো একবার অনুরোধ করেছেন, তাঁর বাসায় এবং অফিসে ক্রেস্ট রাখার জায়গা নেই। ওই পয়সা দিয়ে যেন তাঁকে যেকোনো একটা বই উপহার দেওয়া হয়।
বই! ওমর খৈয়ামের বিখ্যাত উক্তিটি তো সবারই জানা, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা, যদি তেমন বই হয়।’
এক যুগ আগেও আমাদের দেশে ‘ক্রেস্ট মহামারি’ ছিল না। স্কুলের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় উপহার পেয়েছিলাম ডা. লুৎফর রহমানের ‘উন্নত জীবন’, ‘মহৎ জীবন’। বার্ষিক পরীক্ষায় ক্লাসে প্রথম হয়ে পেয়েছিলাম ‘বাংলা অভিধান’। পুরোনো বইয়ের দোকানে দেখা মেলে কতশত পুরোনো বই। জন্মদিনে, বিবাহবার্ষিকী বা বিয়ে, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় উপহার, পুরস্কার হিসেবে দেওয়া বইগুলো স্মৃতিকাতর করে তোলে।
একটি ভালো বই একটি জীবন পাল্টে দিতে পারে। বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছেন, ‘সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভেতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভেতর ডুব দেওয়া। যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।’
অর্থাৎ সাহিত্যে সান্ত্বনা না পেলে দর্শন, দর্শনে কুলিয়ে উঠতে না পারলে ইতিহাস, ইতিহাস হার মানলে ভূগোল—আরও কত-কী! এই অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি করি কি প্রকারে? বই পড়ে।
ক্রেস্ট প্রদানের সংস্কৃতি থেকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী। সম্মাননার নিদর্শন হিসেবে বই বা ছোট একটা গাছের কথা বলেছেন তিনি। বিজ্ঞজনেরা বলছেন, পুরস্কার বা উপহার হিসেবে ক্রেস্ট নয় বই, ট্রফি নয় বই, কাপ-পিরিচ-বদনা নয় বই দিন।
লেখক: সাজিদ মোহন, শিশুসাহিত্যিক
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১১ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫