Ajker Patrika

আফগানিস্তানের হারে ভারতের বিদায়

রানা আব্বাস, দুবাই থেকে
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২১, ১২: ৩৭
আফগানিস্তানের হারে ভারতের বিদায়

গুলবাদিন নাইবের স্লোয়ার বলে ডেভন কনওয়ে উইনিং শট খেলার পর গ্যালারিতে তাঁর বাবা-মা ডেন্টন ও স্যান্ডি কনওয়ের হাসিমুখ ধরা পড়ল টিভি ক্যামেরায়। এ দৃশ্য দেখে ধারাভাষ্যকার সাইমন ডুল বলে উঠলেন, ‘মামি-ড্যাডি হ্যাপি, নিউজিল্যান্ড হ্যাপি…।’

তাঁদের ‘হ্যাপি’ হওয়ার মতোই ঘটনা। আবুধাবিতে গতকাল রোববার আফগানিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে নিউজিল্যান্ড। কিউই ফাস্ট বোলারদের দুর্দান্ত বোলিং আর অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে আফগানদের সাহসী ক্রিকেটের প্রদর্শনী গতকাল আর দেখা যায়নি। নাজিবুল্লা জাদরানের ৭৩ রানের সৌজন্যে স্কোরটা কোনোভাবে ৮ উইকেটে ১২৪ হয়েছে। যতই তাদের বোলিং আক্রমণে রশিদ খান কিংবা মুজিবুর রহমানের মতো বিশ্বমানের স্পিনার থাক, ১২৫ কি আর নিউজিল্যান্ডের সামনে বড় বাধা। ৮ উইকেট আর ১১ বল বাকি থাকতেই কিউইরা লক্ষ্যটা পেরিয়ে গেছে। আর তাতে বড় ভূমিকা রেখেছে কেন উইলিয়ামসন আর কনওয়ের অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেট জুটিতে তোলা ৬৮ রান।

আফগানদের সঙ্গে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় ঘণ্টা বেজেছে ভারতেরও। ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এই প্রথম কোনো আইসিসির টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে যেতে পারল না ভারত। গতকাল ম্যাচের আগে একটা দুঃসংবাদ, আবুধাবির শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কিউরেটর মোহন সিংয়ের

রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এ দুঃসংবাদ ছাপিয়ে ম্যাচে আফগানিস্তান সমর্থন পেয়েছিল পুরো ভারতের। দুবাইয়ের বহুল প্রচারিত দৈনিক ‘খালিজ টাইমস’ পর্যন্ত তাদের প্রিভিউয়ের শিরোনাম করেছে, ‘টিকে থাকার লড়াই।’ গত কদিনে রবিচন্দ্রন অশ্বিন টুইটে আফগানদের কতভাবে যে সাহস-সমর্থন জুগিয়েছেন। কিছুতেই কিছু হয়নি! কোনো নাটকীয়তা, অঘটনের সুযোগ না দিয়ে আফগানিস্তানকে উড়িয়ে নিউজিল্যান্ড ঠিকই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে। সেমিফাইনালে তাদের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড; গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও শেষ চারের লড়াইয়ে একই প্রতিপক্ষ পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড।

সময়মতো নিজেরা জ্বলে উঠলে অন্যদের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে হয় না—২০০৭ বিশ্বকাপের পুরোনো যন্ত্রণা যেন আরেকবার ফিরে এসেছে ভারতীয় দলে। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতকে ধাক্কা দিয়েছিল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। এবার সেটি দিয়েছে পাকিস্তান আর নিউজিল্যান্ড। আজ নামিবিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা বিরাট কোহলিদের কাছে তাই নিছকই ‘ডেড রাবার’।

করোনার ধাক্কায় হঠাৎ টুর্নামেন্ট মরুর দেশে চলে এলেও আয়োজক ভারতই। গত কদিনে আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিয়মিত লেখা হয়েছে, ‘যদি আয়োজক দেশ ভারত সেমিফাইনালে ওঠে, তারা দুবাইয়ে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল খেলবে।’ আয়োজক দেশ শেষ চারে উঠলেই কেন পছন্দের ভেন্যুতে খেলার সুযোগ পাবে, সেটির কোনো ব্যাখ্যা নেই। পুরো টুর্নামেন্টে কোহলিরা মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছেন দুবাই থেকে সড়কপথে দুই ঘণ্টা দূরত্বের আবুধাবিতে। বাকি সব দল অবশ্য এই বাসভ্রমণের যন্ত্রণা একাধিকবার নিতে হয়েছে। মজাটা হচ্ছে, স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে সেমিফাইনালে খেললে ভারতের ‘পছন্দের মাঠ’ দুবাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে কিন্তু পাকিস্তান। আর ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড খেলবে আবুধাবিতে।

এখন ভারতের ভূমিকা ‘কমিউনিটি সেন্টারে’র স্বত্বাধিকারীর মতো—তারা শুধুই আয়োজক। তাদের তৈরি রঙিন মঞ্চে আগামী কদিন পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড হাসবে–কাঁদবে। নিরপেক্ষ আয়োজক হিসেবে ১৪ নভেম্বরের ফাইনালে শিরোপাজয়ী দলকে শুভেচ্ছা-অভিনন্দন জানিয়ে দুবাইয়ের আকাশে কনফেত্তি কিংবা আতশবাজির ফোয়ারা ছোটাতে হবে।

অবশ্য নিজেদের মাঠে ‘দর্শক’ হয়ে ফাইনাল দেখার অভিজ্ঞতা ভারতের আছে। ইডেন গার্ডেনে হওয়া গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোমাঞ্চকর ফাইনালের স্মৃতি খুব পুরোনো নয়। কিন্তু যাদের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সবচেয়ে আকর্ষণীয় হিসেবে বিবেচিত, ২০০৮ সালে সেই আইপিএল আমদানি হওয়ার পর ভারতীয়রা এখনো টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারছে না কেন?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত