Ajker Patrika

তিনটি রাইফেল

সম্পাদকীয়
তিনটি রাইফেল

২৩ মার্চ ঢাকা টেলিভিশনের সমাপনী অনুষ্ঠানে পাকিস্তানি পতাকা ওড়ানো হয়নি। ২৪ মার্চে ঢাকা ছিল মিছিলের শহর। ২৫ তারিখের ঢাকা ছিল থমথমে। সামরিক হামলা আসতে পারে বলে একটা সন্দেহ ভেসে বেড়াচ্ছিল বাতাসে। সেদিন মুস্তাফা মনোয়ার রাত ৯টার দিকে টিভি ভবন থেকে ফিরে এলেন বাড়িতে। এ সময় এক সহকর্মী ফোন করে বললেন, ‘আজ রাতে টেলিভিশনের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। রাতে বাড়িতে থাকবেন না।’

মেজ বোনের বাড়িতে চলে গেলেন মুস্তাফা মনোয়ার। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ব্যারাকের সামনে সেই বাড়ি। বাড়িটির নাম ‘ছায়ানীড়’। সে রাতে বাড়িটির নাম পরিহাসের মতো লেগেছিল তাঁর কাছে। ‘না রইল নীড়, না পেলাম ছায়া’—লিখেছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার।

রাত ১০টার দিকে পুলিশ লাইনসের পুলিশের একটি দল অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে এসেছিল রাস্তায়। আশপাশের বড় দালানগুলোয় অস্ত্র হাতে প্রতিরোধের জন্য পজিশন নিচ্ছিল। ছাদে পানি রাখা হলো। মেয়েরা ফার্স্ট এইডের সরঞ্জাম জোগাড় করে রেখেছিল। থমথমে পরিবেশের মধ্যে হঠাৎ এগিয়ে এল পাকিস্তানি বাহিনীর কনভয়।

গুলিতে গুলিতে কায়েম হলো ত্রাসের রাজত্ব। কান্না-আর্তনাদে ভরে গেল চারপাশ। এরই মধ্যে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের থ্রি নট থ্রি রাইফেল থেকে গুলি চালাচ্ছিলেন, তার বিপরীতে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি আসতে লাগল পাকিস্তানিদের দিক থেকে।

রাতটাকে দীর্ঘতম রাত বলে মনে হলো মুস্তাফা মনোয়ারের। ভোরের দিকে প্রতিরোধ ভেঙে পাকিস্তানিরা ঢুকে গেল পুলিশ লাইনসে। গোলাগুলি বন্ধ হলে মুস্তাফা মনোয়ার বাড়ির ছাদে দেখলেন তিনটি রাইফেল পড়ে আছে। দুদিন পর কারফিউ শিথিল হলে শার্ট গায়ে লুঙ্গি পরা দু-তিনটি ছেলে এসে বলল, ‘এগুলো আমাদের রাইফেল। আমরা ফেলে গিয়েছিলাম। নিতে এসেছি।’

একটা বস্তায় সেই রাইফেলগুলো নিয়ে পেছনের পাঁচিল টপকে তারা চলে গেল।

কারা এরা? পুলিশ সদস্য? মুক্তিযোদ্ধা?  
কোন বছরের ২৫ মার্চ? সেটা কি আর বলে দিতে হবে?

সূত্র: মুস্তাফা মনোয়ার, মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ, সম্পাদনা হাবিবুর রহমান, পৃষ্ঠা ৪৭-৫০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত