Ajker Patrika

শক্তি বাড়াতে ছাত্রলীগে বহিরাগত

তাসনীম হাসান ও মিনহাজ তুহিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২২, ১০: ২৫
শক্তি বাড়াতে ছাত্রলীগে বহিরাগত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই নন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তাঁদের থাকার কথা না। কিন্তু তাঁরাই দাবড়ে বেড়ান ক্যাম্পাস। ছড়ি ঘোরান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর। সুযোগ বুঝে ছাত্রী হেনস্তা-নিপীড়ন আর ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটান।

মূলত ছাত্রলীগের নেতাদের আশীর্বাদেই তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও কর্মসূচিতে অংশ নেন। এক ছাত্রীকে নিপীড়নের ঘটনায় বহিরাগতদের বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। কেননা এই নিপীড়নের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনের মধ্যে চারজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন।

অভিযোগ উঠেছে, ক্যাম্পাসভিত্তিক রাজনীতিতে নিজেদের শক্তি বাড়াতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের নেতারা এই বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই বহিরাগতদের বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অবস্থিত ‘বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের’ প্রাক্তন ছাত্র। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়েই তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেলেও ক্যাম্পাস এলাকায় থাকার সুবাদে আগের মতোই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে আসছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হওয়ায় বহিরাগতরা কোনো অপরাধ করতেও ভয় পান না। কেননা, তাঁরা ভাবেন–ছাত্র না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে না।

প্রতিটি পক্ষেই বহিরাগতরা
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি প্রধানত দুই ধারায় বিভক্ত। একটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, আরেকটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। আবার এই দুটি পক্ষ ১১টি উপ-পক্ষে বিভক্ত।

ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটা পক্ষের হয়ে নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন অন্তত ১০ জন বহিরাগত ছাত্র। এদের মধ্যে কেউ হাটহাজারী কলেজের ছাত্র আবার কেউ বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র। আবার কেউ কেউ কলেজের গণ্ডিই পেরোতে পারেননি। তবে তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকার বাসিন্দা। বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের সন্তান।

বহিরাগতরা কেন ছাত্রলীগে
একাধিক পক্ষ থাকলেও একটা সময় ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে যেকোনো সংঘাতে এক জোট হয়ে প্রতিরোধ করতেন ছাত্রলীগের সব পক্ষের নেতা-কর্মীরা। ২০১৩ সালের পর থেকে ক্যাম্পাসে আধিপত্য হারাতে থাকে ছাত্রশিবির। হলগুলো থেকে বিতাড়িত হন তাদের নেতা-কর্মীরা। এরপর হলগুলো দখলে নেয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষ। ক্যাম্পাসে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত হওয়ার পর ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন টেন্ডার, নিয়োগ-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। স্বাভাবিকভাবে ক্যাম্পাসে আধিপত্য ধরে রাখতে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর জন্য দল ভারী করার প্রয়োজন পড়ে তাঁদের। এ জন্যই বহিরাগতদের দলে ভেড়ানো শুরু হয়। আর রাজনৈতিক নেতাদের ছায়া পেয়ে এই বহিরাগতরা কিছু ছাত্রলীগের কর্মী নিয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রী নিপীড়ন থেকে ছিনতাই–মাদকের কারবারসহ সব ধরনের অপকর্ম করে বেড়ান। তাঁদের মধ্যে অনেকে হলেও অনিয়মিতভাবে অবস্থান করেন বলে অভিযোগ আছে।

সাম্প্রতিক ছাত্রী নিপীড়নে চার বহিরাগত ধরা পড়ার পরও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের দলে ভেড়ানোর বিষয়টি অস্বীকার করছেন।

নাম প্রকাশ না করে ছাত্রলীগের এক পক্ষের এক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সব পক্ষেই বহিরাগতরা আছেন। দল ভারী করতে ও স্থানীয় শক্তি কাজে লাগাতেই এদের দলে ভেড়ানো হয়। কেউ কেউ বহিরাগতদের তাড়িয়ে দিলে দেখা যায়, অন্য পক্ষ তাঁদের লুফে নেয়। সে জন্য সবাই তাঁদের সঙ্গেই রাখেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছাত্রী হেনস্তায় জড়িত দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও ভিএক্সের রাজনীতি করত। বিশ্ববিদ্যালয় লোকাল এরিয়ায় অবস্থিত। এখানে বহিরাগতরা বিভিন্ন কারণে আসতেও পারে। তবে তারা যেন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে না পারে, সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রনেতাদের সজাগ থাকতে হবে।’

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল টিপু জানান, কেউ বহিরাগতদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বহিরাগতদের তাড়াতে বিভিন্ন সময় টহল ও অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোনোভাবেই ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের বরদাশত করব না। আমরা বহিরাগতদের তাড়াতে বিভিন্ন সময় টহল দিই, অভিযান পরিচালনা করি। এ ক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের সচেতন হওয়া উচিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা, রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন

ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এবি ব্যাংক

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত