প্রশান্ত মৃধা
এক পরিচিতজন বলেছিলেন, ‘কাছেই একটা জায়গা আছে, সেখানে এক বাড়ির ওপরে দুই দেশের সীমানা, যাবেন দেখতে?’
এ কথা শোনামাত্র শুধু বিস্ময়ের সঙ্গে তাঁর মুখের দিকে তাকাইনি, সঙ্গে ভেবে নিয়েছিলাম, এমন সৃষ্টিছাড়া র্যাডক্লিফি-কাণ্ডের কথা শুনেছি, কিন্তু তা দেখার সুযোগ এভাবে আসবে!
এমনিতে বাঙালির মতো এমন গার্হস্থ্যজীবনে অভ্যস্ত জাতি কারও বাড়ির সীমানাপ্রাচীর কিংবা বেড়া একটু আলগা হলেই যেখানে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার মতো ঘটনা আকছার শোনা যায়, সেখানে একই বাড়ির উঠোন দুটো দেশের ভেতরে ভাগাভাগি হয়ে আছে, এ সত্যি বিচিত্র বিস্ময়! আর তা জানার পর সুযোগ থাকলে অবশ্য দ্রষ্টব্য। ওদিকে, এই প্রস্তাবে রাজি হতে না হতেই এ কথাও ভেবেছি, আমাদের কাছে যা দর্শনীয় ও কৌতূহলকর, তা ওই ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের কাছে এত দিনে স্থায়ী ক্ষত। তবু এমন ভূগোল দর্শনের সুযোগ, তাদের জন্য যত বেদনারই হোক, ওই প্রস্তাবের পর তা কোনোভাবে হাতছাড়া না করার জন্যই সেখানে যাওয়া।
সত্যি, ওই দাগ বাড়িটির বাসিন্দাদের কাছে স্থায়ী ক্ষত! একটি বাড়ি, এর প্রায় মাঝখানে যে পুকুর, সেই পুকুরের মাঝামাঝি দিয়ে চলে গেছে ওই কল্পিত র্যাডক্লিফ-রেখা। উঠোনও দুই ভাগে বিভক্ত। এদিকের দুটো ঘরের বাসিন্দারা বাংলাদেশের নাগরিক, উঠোনের ওই দিকের ‘ওরা’ ভারতীয়। তারা শরিক আর একই বংশের। রাষ্ট্র তাদের যা-ই হোক, সামাজিক আর পারিবারিক সব সম্পর্ক চলমান। সেখানে ব্রিটিশরাজের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই, এত দিনে যদি কিছু ঘটেও থাকে, মেনেছে কে? একই ধারা বংশপরম্পরায় চলমান। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, বাড়ির উঠোনের প্রায় মাঝখানে যে কাছারি, সেটি এখনো দুই দেশের। ওখানে পারিবারিক আলোচনা বৈঠক ইত্যাদি যথারীতি চলে।
ওই কাছারিঘরটা ডানের হাতায় রেখে উঠোন ধরে এগিয়ে আমরা ওই বাড়ির ভারতীয় সীমানায় ঢুকে পড়েছিলাম অনায়াসে। তাঁদেরই একজন সীমানা পিলার দেখানোর জন্য বাংলাদেশ থেকে ওই মিনিট পাঁচেকের জন্য আমাদের ‘অবৈধ’ অনুপ্রবেশকারী বানিয়ে ছেড়েছেন। এরও একটি কারণ আছে। জানতে চেয়েছিলাম, এই যে পুকুর-কাছারির মাঝখান থেকে দুই দেশ ভাগ হয়েছে, তা তাঁরা জানলেন কী করে? তাই, এই বাড়ির বাংলাদেশ অংশের সীমানায় ঢোকার সময় দেখিয়েছিলেন সীমান্তস্মারক, আর সেই বরাবর পুব-উত্তরে অন্য পিলারটা না দেখালে, তাঁর কথা তো আমাদের কাছে অনুমানই রয়ে যায়। আমাদের অভয় দিয়ে নিয়ে গেলেন তিনি। উঠোন ছাড়িয়ে, সেদিকের ঘরেরও বেশ পেছনে দেখালেন আর একটি পিলার। হ্যাঁ, তাহলে এই বরাবর, দু-দুটো স্মারকের একটি থেকে অন্যটিতে দড়ি কি ফিতে ধরলে, তাদের হিসাব পুরোপুরি সত্যি। পুকুরটা দুই ভাগেই পড়ে, পড়ে কাছারিঘরও। এরপর একটু পশ্চিম আর উত্তরে আঙুল দিয়ে দেখালেন নো ম্যানস ল্যান্ড, ওই না-মানুষি জমির পর শুরু ভারতের মূল ভূখণ্ড।
সঙ্গী জানতে চাইলেন, এমনও তো আছে কোথাও যেখানে আসল বাড়ি বাংলাদেশে আর রান্নাঘর ভারতে। শুনে, ভদ্রলোক হাসলেন। স্বাভাবিক, যেখানে উঠোন আর এজমালি কাছারি দুই দেশের ভাগে, সেখানে রান্নাঘর ভিনদেশে পড়বে—এ আর অস্বাভাবিক কী? এবার আঙুল তুলে সামনের সীমানাস্মারকের পরে একটি বাড়ির দিকে নির্দেশ করলেন। তাতে আমরা ঠিকঠাক চিনে নিতে পারি আর না-ই পারি, নির্দেশিত ভূগোলের তথ্যে কোনো ভ্রান্তি নেই। দেখলাম সেদিকে। এখান থেকে স্পষ্ট বোঝার উপায় নেই।
হাটবাজারের প্রশ্ন তুলতেই জানা গেল, ছোটখাটো সদাই সবই বাংলাদেশে হয়। যিনি বলছেন, তিনিও বাংলাদেশের। আর বড়সড়? কিংবা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে? জানালেন, তখন এই বাড়ির উত্তরের লোকেরা আরও উত্তর দিকে যান, ভারতীয় রক্ষীরা তাঁদের চেনেন তাই কোনো সমস্যা হয় না।
ভাষ্যকার বাংলাদেশের বলেই জানতে চাওয়া, ওনাদের এভাবে থাকতে অসুবিধা হয় না? প্রশ্নটা করার পর মনে হলো, এটি জিজ্ঞাসা অবান্তরই। সমস্যায় যাঁর দিনযাপন, যাঁর জন্ম, তাঁর কাছে এই বাড়তি প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক। তবু তিনি তাঁর আত্মীয়স্বজনের হয়ে কী উত্তর দেন, তা শোনা যেতে পারে। জানালেন, তা তো হয়। কিন্তু এভাবেই বাপ-দাদার আমল থেকে চলছে। চলতেই থাকবে। প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে যেন জানতে চাইলেন, সমস্যা হলেও এর কোনো সমাধান আছে?
এই প্রশ্নের উত্তর অসম্ভব!
লেখক: কথাসাহিত্যিক
এক পরিচিতজন বলেছিলেন, ‘কাছেই একটা জায়গা আছে, সেখানে এক বাড়ির ওপরে দুই দেশের সীমানা, যাবেন দেখতে?’
এ কথা শোনামাত্র শুধু বিস্ময়ের সঙ্গে তাঁর মুখের দিকে তাকাইনি, সঙ্গে ভেবে নিয়েছিলাম, এমন সৃষ্টিছাড়া র্যাডক্লিফি-কাণ্ডের কথা শুনেছি, কিন্তু তা দেখার সুযোগ এভাবে আসবে!
এমনিতে বাঙালির মতো এমন গার্হস্থ্যজীবনে অভ্যস্ত জাতি কারও বাড়ির সীমানাপ্রাচীর কিংবা বেড়া একটু আলগা হলেই যেখানে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার মতো ঘটনা আকছার শোনা যায়, সেখানে একই বাড়ির উঠোন দুটো দেশের ভেতরে ভাগাভাগি হয়ে আছে, এ সত্যি বিচিত্র বিস্ময়! আর তা জানার পর সুযোগ থাকলে অবশ্য দ্রষ্টব্য। ওদিকে, এই প্রস্তাবে রাজি হতে না হতেই এ কথাও ভেবেছি, আমাদের কাছে যা দর্শনীয় ও কৌতূহলকর, তা ওই ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের কাছে এত দিনে স্থায়ী ক্ষত। তবু এমন ভূগোল দর্শনের সুযোগ, তাদের জন্য যত বেদনারই হোক, ওই প্রস্তাবের পর তা কোনোভাবে হাতছাড়া না করার জন্যই সেখানে যাওয়া।
সত্যি, ওই দাগ বাড়িটির বাসিন্দাদের কাছে স্থায়ী ক্ষত! একটি বাড়ি, এর প্রায় মাঝখানে যে পুকুর, সেই পুকুরের মাঝামাঝি দিয়ে চলে গেছে ওই কল্পিত র্যাডক্লিফ-রেখা। উঠোনও দুই ভাগে বিভক্ত। এদিকের দুটো ঘরের বাসিন্দারা বাংলাদেশের নাগরিক, উঠোনের ওই দিকের ‘ওরা’ ভারতীয়। তারা শরিক আর একই বংশের। রাষ্ট্র তাদের যা-ই হোক, সামাজিক আর পারিবারিক সব সম্পর্ক চলমান। সেখানে ব্রিটিশরাজের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই, এত দিনে যদি কিছু ঘটেও থাকে, মেনেছে কে? একই ধারা বংশপরম্পরায় চলমান। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, বাড়ির উঠোনের প্রায় মাঝখানে যে কাছারি, সেটি এখনো দুই দেশের। ওখানে পারিবারিক আলোচনা বৈঠক ইত্যাদি যথারীতি চলে।
ওই কাছারিঘরটা ডানের হাতায় রেখে উঠোন ধরে এগিয়ে আমরা ওই বাড়ির ভারতীয় সীমানায় ঢুকে পড়েছিলাম অনায়াসে। তাঁদেরই একজন সীমানা পিলার দেখানোর জন্য বাংলাদেশ থেকে ওই মিনিট পাঁচেকের জন্য আমাদের ‘অবৈধ’ অনুপ্রবেশকারী বানিয়ে ছেড়েছেন। এরও একটি কারণ আছে। জানতে চেয়েছিলাম, এই যে পুকুর-কাছারির মাঝখান থেকে দুই দেশ ভাগ হয়েছে, তা তাঁরা জানলেন কী করে? তাই, এই বাড়ির বাংলাদেশ অংশের সীমানায় ঢোকার সময় দেখিয়েছিলেন সীমান্তস্মারক, আর সেই বরাবর পুব-উত্তরে অন্য পিলারটা না দেখালে, তাঁর কথা তো আমাদের কাছে অনুমানই রয়ে যায়। আমাদের অভয় দিয়ে নিয়ে গেলেন তিনি। উঠোন ছাড়িয়ে, সেদিকের ঘরেরও বেশ পেছনে দেখালেন আর একটি পিলার। হ্যাঁ, তাহলে এই বরাবর, দু-দুটো স্মারকের একটি থেকে অন্যটিতে দড়ি কি ফিতে ধরলে, তাদের হিসাব পুরোপুরি সত্যি। পুকুরটা দুই ভাগেই পড়ে, পড়ে কাছারিঘরও। এরপর একটু পশ্চিম আর উত্তরে আঙুল দিয়ে দেখালেন নো ম্যানস ল্যান্ড, ওই না-মানুষি জমির পর শুরু ভারতের মূল ভূখণ্ড।
সঙ্গী জানতে চাইলেন, এমনও তো আছে কোথাও যেখানে আসল বাড়ি বাংলাদেশে আর রান্নাঘর ভারতে। শুনে, ভদ্রলোক হাসলেন। স্বাভাবিক, যেখানে উঠোন আর এজমালি কাছারি দুই দেশের ভাগে, সেখানে রান্নাঘর ভিনদেশে পড়বে—এ আর অস্বাভাবিক কী? এবার আঙুল তুলে সামনের সীমানাস্মারকের পরে একটি বাড়ির দিকে নির্দেশ করলেন। তাতে আমরা ঠিকঠাক চিনে নিতে পারি আর না-ই পারি, নির্দেশিত ভূগোলের তথ্যে কোনো ভ্রান্তি নেই। দেখলাম সেদিকে। এখান থেকে স্পষ্ট বোঝার উপায় নেই।
হাটবাজারের প্রশ্ন তুলতেই জানা গেল, ছোটখাটো সদাই সবই বাংলাদেশে হয়। যিনি বলছেন, তিনিও বাংলাদেশের। আর বড়সড়? কিংবা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে? জানালেন, তখন এই বাড়ির উত্তরের লোকেরা আরও উত্তর দিকে যান, ভারতীয় রক্ষীরা তাঁদের চেনেন তাই কোনো সমস্যা হয় না।
ভাষ্যকার বাংলাদেশের বলেই জানতে চাওয়া, ওনাদের এভাবে থাকতে অসুবিধা হয় না? প্রশ্নটা করার পর মনে হলো, এটি জিজ্ঞাসা অবান্তরই। সমস্যায় যাঁর দিনযাপন, যাঁর জন্ম, তাঁর কাছে এই বাড়তি প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক। তবু তিনি তাঁর আত্মীয়স্বজনের হয়ে কী উত্তর দেন, তা শোনা যেতে পারে। জানালেন, তা তো হয়। কিন্তু এভাবেই বাপ-দাদার আমল থেকে চলছে। চলতেই থাকবে। প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে যেন জানতে চাইলেন, সমস্যা হলেও এর কোনো সমাধান আছে?
এই প্রশ্নের উত্তর অসম্ভব!
লেখক: কথাসাহিত্যিক
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২ ঘণ্টা আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৩ ঘণ্টা আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৫ ঘণ্টা আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫