Ajker Patrika

বেকুটিয়া ফেরিঘাটে

প্রশান্ত মৃধা
আপডেট : ২৬ মে ২০২২, ১০: ৪৭
বেকুটিয়া ফেরিঘাটে

কচা নদীতে ফেরির ওপরে থাকলে ঠিক বোঝা যায় না এই ব্রিজটা কত উঁচু! কিন্তু নদীর পুব অথবা পশ্চিম যেকোনো তীরে দাঁড়ালেই বোঝা যায় এর উচ্চতা। তবে পশ্চিম তীরে ফেরিঘাট থেকে ব্রিজটা অনেকটাই দক্ষিণে নির্মিত হচ্ছে, তাই সেদিকে তাকিয়েও উচ্চতাটা ঠিক বোঝা যায় না। কিন্তু ব্রিজটা পুব পাড়ে ফেরিঘাটের বেশ কাছেই। এই পাড়ে ফেরিঘাটে কোনো চায়ের দোকানে বসে দক্ষিণে তাকালেই মনে হয়, এই ব্রিজটাও হয়ে গেল! আর কদিনই-বা, এরপর নদীর দুই পাড়ের এই জনজীবন আর থাকবে না।

এখানে ফেরি ছাড়ার নিয়মটাও অদ্ভুত। প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর ফেরি ছাড়ে। গাড়ির চাপ থাকলে কিছু বদল ঘটে, না হলে ওটাই মোটামুটি নিয়ম। ধরা যাক, পশ্চিম পাড় থেকে ফেরি ছাড়ল ১০টায়। এ পাড়ে আসতে আসতে প্রায় ২০-২৫ মিনিট লাগে, তারপর সাড়ে ১০টায় ছেড়ে যায়। এটা আর থাকবে না।

এই ভেবে, ফেরিতে নদীর পশ্চিম তীর থেকে পুব তীরে এসে, একেবারে পাড়েই, ফেরি থেকে উঠতে হাতের বাঁয়ে চায়ের দোকানটায় বসলাম। বসে তাকালাম ব্রিজটার দিকে। প্রায় বছর বিশেক আগে একদিন অনেক রাতে এই প্রমত্তা নদী ট্রলারে পাড়ি দিয়েছিলাম।

ওই চায়ের দোকানে বসে, এই নির্মীয়মাণ ব্রিজটির দিকে তাকিয়ে সেই শরতের রাতটার কথা ভেবে, হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি শূন্য চায়ের কাপ হাতে। এই সময়ে এক লোক পাশে এসে বসলেন। আমি নদীর ওপরে ব্রিজে এভাবে তাকিয়ে আছি, তিনি হয়তো তা খেয়াল করেছেন। বললেন, ‘ব্রিজ অনেক উঁচা। ওপরে অনেক চওড়া। এইখান দিয়া তাকাইয়া তা কোনোভাবে বোঝা যায় না।’ জানতে চাইলাম, ‘আপনি উঠেছেন এই ব্রিজের ওপরে? মাঝখানে অনেকটা তো এখনো ফাঁকা!’ জানালেন, ‘হুঁ, দুই গাড়ি যাওয়ার চেয়েও অনেক বড়, মনে হয় মাঝখান দিয়ে ট্রেন যাবে।’ ট্রেন যাবে কি যাবে না, এ বিষয়টা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। জানা নেই।

লোকটির সঙ্গে আলাপে জানলাম, তাঁর বাড়ি কাছেই। যে জায়গাটার নাম বললেন, দেখালেন সেদিকটায়, তা পিরোজপুরের একেবারে সীমানায়, ঝালকাঠির কোনো একটি থানার বেশ কাছাকাছি। তাঁর উচ্চারণ যদিও সামান্য মিশেল, এই অঞ্চলের আঞ্চলিক টান খানিকটা কম।

কারও পেশা-পরিচয় জানতে চাওয়া আমার ধাতে নেই। কথায় কথায় এগোলে ভিন্ন কথা। তিনিই জানালেন, ‘গরু-ছাগল কেনাবেচা করি তো তাই দেশ-বিদেশ কত জায়গায় যাই, আর বাড়ির কাছে বিরিজের ওপরে উঠব না?’

তিরিশের কোঠায় বয়স, আমি নান্টু দাস নামের লোকটির দিকে ফেরামাত্র একেবারে স্পষ্ট চোখে তাকালেন। তারপরে তার সেই ‘দেশ-বিদেশে’র পরিচয় দিলেন। দেশ অর্থাৎ নিজের বা এর আশপাশের জেলা। এমনকি নদীর ওপারের বাগেরহাট, খুলনা ইত্যাদি। আর বিদেশ বলতে যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী। জানালেন সম্প্রতি গরু-ছাগলে তাঁদের লাভ কম হয়েছে। এগুলো কুষ্টিয়া থেকে কিনেছিলেন। পার্টির কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়ায়, যে দামে কিনেছেন প্রায় সেই একই দামে ওগুলো ছেড়ে দিতে হয়েছে।

আমার হাতের শূন্য চায়ের কাপ, তাঁর অনুরোধ এখন আর একটি কাপ। খেতেই হবে। তাহলে তিনি খাবেন, নয়তো না। আমি খুঁটিয়ে তাঁর ব্যবসার বিষয়টা জানার চেষ্টা করি। প্রায় কিছুই বুঝি না। বিষয়টা বা তাঁর বলাটা মোটেও দুর্বোধ্য নয়, কিন্তু কোনো বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকলে তা কোনোভাবেই বোঝা যায় না। ফলে কিছু বিষয় মনোযোগ দিয়ে শুনলেও গভীরে প্রবেশ করা যায় না।

আমার ফোন আসে। যারা আমাকে নিতে আসবে, তারা প্রায় এসে গেছে। আমি বিদায় নেওয়ার আগে অবাক করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি বই লেখেন?’ আমি তাঁর দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি। বললাম, ‘কী করে বুঝলেন?’ বললেন, ‘এই নদীর এই পথে কত আসি-যাই, কেউ কোনো দিন আমার মতন গরুর ব্যাপারীর কাছে এত কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চায়নি। এই নদী নিয়েও না।’

প্রশান্ত মৃধা, কথাসাহিত্যিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অপারেশন সিন্দুর ঘিরে আলোচিত কে এই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি

কাশ্মীরে বিধ্বস্ত বিমানের অংশবিশেষ ফরাসি কোম্পানির তৈরি, হতে পারে রাফাল

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

নিজ কার্যালয়ে র‍্যাব কর্মকর্তার গুলিবিদ্ধ লাশ, পাশে চিরকুট

আকাশ প্রতিরক্ষায় কে এগিয়ে, পাকিস্তান কি ভারতের আক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত