প্রশান্ত মৃধা
কচা নদীতে ফেরির ওপরে থাকলে ঠিক বোঝা যায় না এই ব্রিজটা কত উঁচু! কিন্তু নদীর পুব অথবা পশ্চিম যেকোনো তীরে দাঁড়ালেই বোঝা যায় এর উচ্চতা। তবে পশ্চিম তীরে ফেরিঘাট থেকে ব্রিজটা অনেকটাই দক্ষিণে নির্মিত হচ্ছে, তাই সেদিকে তাকিয়েও উচ্চতাটা ঠিক বোঝা যায় না। কিন্তু ব্রিজটা পুব পাড়ে ফেরিঘাটের বেশ কাছেই। এই পাড়ে ফেরিঘাটে কোনো চায়ের দোকানে বসে দক্ষিণে তাকালেই মনে হয়, এই ব্রিজটাও হয়ে গেল! আর কদিনই-বা, এরপর নদীর দুই পাড়ের এই জনজীবন আর থাকবে না।
এখানে ফেরি ছাড়ার নিয়মটাও অদ্ভুত। প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর ফেরি ছাড়ে। গাড়ির চাপ থাকলে কিছু বদল ঘটে, না হলে ওটাই মোটামুটি নিয়ম। ধরা যাক, পশ্চিম পাড় থেকে ফেরি ছাড়ল ১০টায়। এ পাড়ে আসতে আসতে প্রায় ২০-২৫ মিনিট লাগে, তারপর সাড়ে ১০টায় ছেড়ে যায়। এটা আর থাকবে না।
এই ভেবে, ফেরিতে নদীর পশ্চিম তীর থেকে পুব তীরে এসে, একেবারে পাড়েই, ফেরি থেকে উঠতে হাতের বাঁয়ে চায়ের দোকানটায় বসলাম। বসে তাকালাম ব্রিজটার দিকে। প্রায় বছর বিশেক আগে একদিন অনেক রাতে এই প্রমত্তা নদী ট্রলারে পাড়ি দিয়েছিলাম।
ওই চায়ের দোকানে বসে, এই নির্মীয়মাণ ব্রিজটির দিকে তাকিয়ে সেই শরতের রাতটার কথা ভেবে, হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি শূন্য চায়ের কাপ হাতে। এই সময়ে এক লোক পাশে এসে বসলেন। আমি নদীর ওপরে ব্রিজে এভাবে তাকিয়ে আছি, তিনি হয়তো তা খেয়াল করেছেন। বললেন, ‘ব্রিজ অনেক উঁচা। ওপরে অনেক চওড়া। এইখান দিয়া তাকাইয়া তা কোনোভাবে বোঝা যায় না।’ জানতে চাইলাম, ‘আপনি উঠেছেন এই ব্রিজের ওপরে? মাঝখানে অনেকটা তো এখনো ফাঁকা!’ জানালেন, ‘হুঁ, দুই গাড়ি যাওয়ার চেয়েও অনেক বড়, মনে হয় মাঝখান দিয়ে ট্রেন যাবে।’ ট্রেন যাবে কি যাবে না, এ বিষয়টা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। জানা নেই।
লোকটির সঙ্গে আলাপে জানলাম, তাঁর বাড়ি কাছেই। যে জায়গাটার নাম বললেন, দেখালেন সেদিকটায়, তা পিরোজপুরের একেবারে সীমানায়, ঝালকাঠির কোনো একটি থানার বেশ কাছাকাছি। তাঁর উচ্চারণ যদিও সামান্য মিশেল, এই অঞ্চলের আঞ্চলিক টান খানিকটা কম।
কারও পেশা-পরিচয় জানতে চাওয়া আমার ধাতে নেই। কথায় কথায় এগোলে ভিন্ন কথা। তিনিই জানালেন, ‘গরু-ছাগল কেনাবেচা করি তো তাই দেশ-বিদেশ কত জায়গায় যাই, আর বাড়ির কাছে বিরিজের ওপরে উঠব না?’
তিরিশের কোঠায় বয়স, আমি নান্টু দাস নামের লোকটির দিকে ফেরামাত্র একেবারে স্পষ্ট চোখে তাকালেন। তারপরে তার সেই ‘দেশ-বিদেশে’র পরিচয় দিলেন। দেশ অর্থাৎ নিজের বা এর আশপাশের জেলা। এমনকি নদীর ওপারের বাগেরহাট, খুলনা ইত্যাদি। আর বিদেশ বলতে যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী। জানালেন সম্প্রতি গরু-ছাগলে তাঁদের লাভ কম হয়েছে। এগুলো কুষ্টিয়া থেকে কিনেছিলেন। পার্টির কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়ায়, যে দামে কিনেছেন প্রায় সেই একই দামে ওগুলো ছেড়ে দিতে হয়েছে।
আমার হাতের শূন্য চায়ের কাপ, তাঁর অনুরোধ এখন আর একটি কাপ। খেতেই হবে। তাহলে তিনি খাবেন, নয়তো না। আমি খুঁটিয়ে তাঁর ব্যবসার বিষয়টা জানার চেষ্টা করি। প্রায় কিছুই বুঝি না। বিষয়টা বা তাঁর বলাটা মোটেও দুর্বোধ্য নয়, কিন্তু কোনো বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকলে তা কোনোভাবেই বোঝা যায় না। ফলে কিছু বিষয় মনোযোগ দিয়ে শুনলেও গভীরে প্রবেশ করা যায় না।
আমার ফোন আসে। যারা আমাকে নিতে আসবে, তারা প্রায় এসে গেছে। আমি বিদায় নেওয়ার আগে অবাক করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি বই লেখেন?’ আমি তাঁর দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি। বললাম, ‘কী করে বুঝলেন?’ বললেন, ‘এই নদীর এই পথে কত আসি-যাই, কেউ কোনো দিন আমার মতন গরুর ব্যাপারীর কাছে এত কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চায়নি। এই নদী নিয়েও না।’
প্রশান্ত মৃধা, কথাসাহিত্যিক
কচা নদীতে ফেরির ওপরে থাকলে ঠিক বোঝা যায় না এই ব্রিজটা কত উঁচু! কিন্তু নদীর পুব অথবা পশ্চিম যেকোনো তীরে দাঁড়ালেই বোঝা যায় এর উচ্চতা। তবে পশ্চিম তীরে ফেরিঘাট থেকে ব্রিজটা অনেকটাই দক্ষিণে নির্মিত হচ্ছে, তাই সেদিকে তাকিয়েও উচ্চতাটা ঠিক বোঝা যায় না। কিন্তু ব্রিজটা পুব পাড়ে ফেরিঘাটের বেশ কাছেই। এই পাড়ে ফেরিঘাটে কোনো চায়ের দোকানে বসে দক্ষিণে তাকালেই মনে হয়, এই ব্রিজটাও হয়ে গেল! আর কদিনই-বা, এরপর নদীর দুই পাড়ের এই জনজীবন আর থাকবে না।
এখানে ফেরি ছাড়ার নিয়মটাও অদ্ভুত। প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর ফেরি ছাড়ে। গাড়ির চাপ থাকলে কিছু বদল ঘটে, না হলে ওটাই মোটামুটি নিয়ম। ধরা যাক, পশ্চিম পাড় থেকে ফেরি ছাড়ল ১০টায়। এ পাড়ে আসতে আসতে প্রায় ২০-২৫ মিনিট লাগে, তারপর সাড়ে ১০টায় ছেড়ে যায়। এটা আর থাকবে না।
এই ভেবে, ফেরিতে নদীর পশ্চিম তীর থেকে পুব তীরে এসে, একেবারে পাড়েই, ফেরি থেকে উঠতে হাতের বাঁয়ে চায়ের দোকানটায় বসলাম। বসে তাকালাম ব্রিজটার দিকে। প্রায় বছর বিশেক আগে একদিন অনেক রাতে এই প্রমত্তা নদী ট্রলারে পাড়ি দিয়েছিলাম।
ওই চায়ের দোকানে বসে, এই নির্মীয়মাণ ব্রিজটির দিকে তাকিয়ে সেই শরতের রাতটার কথা ভেবে, হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি শূন্য চায়ের কাপ হাতে। এই সময়ে এক লোক পাশে এসে বসলেন। আমি নদীর ওপরে ব্রিজে এভাবে তাকিয়ে আছি, তিনি হয়তো তা খেয়াল করেছেন। বললেন, ‘ব্রিজ অনেক উঁচা। ওপরে অনেক চওড়া। এইখান দিয়া তাকাইয়া তা কোনোভাবে বোঝা যায় না।’ জানতে চাইলাম, ‘আপনি উঠেছেন এই ব্রিজের ওপরে? মাঝখানে অনেকটা তো এখনো ফাঁকা!’ জানালেন, ‘হুঁ, দুই গাড়ি যাওয়ার চেয়েও অনেক বড়, মনে হয় মাঝখান দিয়ে ট্রেন যাবে।’ ট্রেন যাবে কি যাবে না, এ বিষয়টা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। জানা নেই।
লোকটির সঙ্গে আলাপে জানলাম, তাঁর বাড়ি কাছেই। যে জায়গাটার নাম বললেন, দেখালেন সেদিকটায়, তা পিরোজপুরের একেবারে সীমানায়, ঝালকাঠির কোনো একটি থানার বেশ কাছাকাছি। তাঁর উচ্চারণ যদিও সামান্য মিশেল, এই অঞ্চলের আঞ্চলিক টান খানিকটা কম।
কারও পেশা-পরিচয় জানতে চাওয়া আমার ধাতে নেই। কথায় কথায় এগোলে ভিন্ন কথা। তিনিই জানালেন, ‘গরু-ছাগল কেনাবেচা করি তো তাই দেশ-বিদেশ কত জায়গায় যাই, আর বাড়ির কাছে বিরিজের ওপরে উঠব না?’
তিরিশের কোঠায় বয়স, আমি নান্টু দাস নামের লোকটির দিকে ফেরামাত্র একেবারে স্পষ্ট চোখে তাকালেন। তারপরে তার সেই ‘দেশ-বিদেশে’র পরিচয় দিলেন। দেশ অর্থাৎ নিজের বা এর আশপাশের জেলা। এমনকি নদীর ওপারের বাগেরহাট, খুলনা ইত্যাদি। আর বিদেশ বলতে যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী। জানালেন সম্প্রতি গরু-ছাগলে তাঁদের লাভ কম হয়েছে। এগুলো কুষ্টিয়া থেকে কিনেছিলেন। পার্টির কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়ায়, যে দামে কিনেছেন প্রায় সেই একই দামে ওগুলো ছেড়ে দিতে হয়েছে।
আমার হাতের শূন্য চায়ের কাপ, তাঁর অনুরোধ এখন আর একটি কাপ। খেতেই হবে। তাহলে তিনি খাবেন, নয়তো না। আমি খুঁটিয়ে তাঁর ব্যবসার বিষয়টা জানার চেষ্টা করি। প্রায় কিছুই বুঝি না। বিষয়টা বা তাঁর বলাটা মোটেও দুর্বোধ্য নয়, কিন্তু কোনো বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকলে তা কোনোভাবেই বোঝা যায় না। ফলে কিছু বিষয় মনোযোগ দিয়ে শুনলেও গভীরে প্রবেশ করা যায় না।
আমার ফোন আসে। যারা আমাকে নিতে আসবে, তারা প্রায় এসে গেছে। আমি বিদায় নেওয়ার আগে অবাক করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি বই লেখেন?’ আমি তাঁর দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি। বললাম, ‘কী করে বুঝলেন?’ বললেন, ‘এই নদীর এই পথে কত আসি-যাই, কেউ কোনো দিন আমার মতন গরুর ব্যাপারীর কাছে এত কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চায়নি। এই নদী নিয়েও না।’
প্রশান্ত মৃধা, কথাসাহিত্যিক
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫