Ajker Patrika

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ১১
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন

১৯২২ সালে পঙ্কজকুমার মল্লিক ছিলেন কলেজের ছাত্র। সে সময় রবীন্দ্রসংগীত এতটা বিখ্যাত হয়ে ওঠেনি। অল্পস্বল্প গান করতেন পঙ্কজ। একসময় গান গাইতে গিয়ে দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে পড়েছিলেন তিনি। দুর্গাদাস বাবুর কাছেই নিধুবাবুর টপ্পা শিখতে শুরু করেছিলেন পঙ্কজ। তাঁর সংগীতজীবনের ভিত্তিভূমি গড়ে দিয়েছিলেন এই দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।

দুর্গাদাস বাবু অবশ্য ‘রবিবাবুর গান’ করতেন না। বৌবাজারের মদন বড়াল লেনে ছিল তাঁর বাড়ি। কাছেই ফকির দে লেনে ছিল বিখ্যাত সাংস্কৃতিক সংস্থা ‘আনন্দ পরিষদ’। এরা শৌখিন নাটক করত। একদিন দুর্গাদাস বাবুর বাড়ির তক্তপোষে দেখলেন রবীন্দ্রনাথের ‘চয়নিকা’। বইটি খুলেই চোখে পড়ল একটা কবিতা, ‘চির আমি’। প্রথম পঙ্‌ক্তি পড়েই মুগ্ধ হয়ে গেলেন তিনি। কবিতাটি যেন তাঁকে টেনে নিয়ে যেতে থাকল। কী অসাধারণভাবেই না কথাগুলো লিখেছেন কবি! যখন তাঁর পায়ের চিহ্ন পড়বে না এই পরিচিত পথে, তখনকার কথা কী মমতার সঙ্গেই না বলেছেন তিনি!

কখন কীভাবে যেন গুনগুন করে কবিতাটার কথায় সুর দিতে শুরু করেছেন পঙ্কজ। পাশেই ছিল গণেশ পার্ক। সেখানে একটি বেঞ্চিতে বসে সুর দিতে লাগলেন। শেষ কলি পর্যন্ত সুর দিয়ে আনন্দে ভরে উঠল মন। আনন্দ পরিষদে গিয়ে অর্গানের সামনে বসলেন। সেটি বাজিয়ে আস্তে আস্তে গলা মেলাতে শুরু করলেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় সুর! এ সময় কে যেন পেছন থেকে বললেন, ‘উঁহু, একটু যেন অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে।’

‘এটা তো রবিঠাকুরের কবিতা, আজ আমিই সুর লাগিয়েছি।’

‘সে কী, এটা তো রবিবাবুর গান। তাঁর নিজেরই সুর দেওয়া আছে। তাই তো মনে হচ্ছে অন্য রকম হচ্ছে মাঝে মাঝে।’

পঙ্কজ বিস্মিত হয়ে বসে রইলেন। রবিঠাকুরের সুর আর তাঁর নিজের দেওয়া সুর মিলে গেছে!

সূত্র: পঙ্কজকুমার মল্লিক, আমার যুগ আমার গান, পৃষ্ঠা ৭-৯

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত