Ajker Patrika

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

সম্পাদকীয়
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গেলেন। আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর বৈঠক হবে। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে যে মতপার্থক্য রয়েছে, সমঝোতার মাধ্যমে তার কতটা নিরসন হয়, সেটা দেখার জন্য দুই দেশের জনগণই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে দেশগুলো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাংলাদেশের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিল সহযোগিতার হাত, তার মধ্যে ভারতের নাম আসে সর্বাগ্রে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নও বাংলাদেশ-পাকিস্তান প্রশ্নে বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ শেষে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা হয়, তা নানা কারণে কখনো কখনো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। বড় দেশ হিসেবে ভারতের আচরণের কারণে কখনো কখনো বাংলাদেশ অস্বস্তিতেও পড়েছে। সেই অস্বস্তির অনেকটাই এখনো দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে বিরাজমান।

দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক উদারতার পরিচয় দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় না দেওয়া, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতকে ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিটের সুবিধা করে দেওয়ার মতো বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ বন্ধুত্ব বিকশিত করার সদিচ্ছার পরিচয় দিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের পক্ষ থেকে এমন কিছু ব্যাপারে মৌন থাকার ঘটনা ঘটেছে, যা সম্পর্কের মধ্যে শীতলতা আনে। তিস্তা নদীর পানিবণ্টনে ভারতের গড়িমসি সে রকম একটি ঘটনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যথার্থই বলেছেন, ‘সমস্যা ভারতে’। তিস্তা নদীসহ অভিন্ন ৫৩টি নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়টির আশু সমাধান না হলে পানির অভাবে নদীতীরবর্তীর মানুষই শুধু নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষই তাতে ভুগবে। তিস্তা নদীর পানিবণ্টনের ব্যাপারে দিল্লি আন্তরিক বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বাধার কারণে কাজটি এগোচ্ছে না বলে মনে করে মোদি সরকার। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের এই বিরোধের বলি হচ্ছে বাংলাদেশ, এটা কাজের কথা নয়।

আরেকটি বড় সমস্যা হলো সীমান্ত সংঘাত। এই সংঘাতের উৎসও একপক্ষীয়। মূলত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা করে। বিভিন্ন সময় সে খবরগুলো পত্রিকা আর বৈদ্যুতিন মাধ্যমে জানা যায়। সীমান্তে এ রকম কাণ্ড ঘটানো হবে না—ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। এ ছাড়া আরও কিছু বিষয় রয়েছে, যা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে আলোচনার টেবিলে তুলবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে বেশ কিছু বিষয় কাঁটার মতো ছড়িয়ে আছে। কখনো কখনো ভারতের বড়ভাইসুলভ আচরণ বাংলাদেশের জনগণকে ভারত সম্পর্কে নেতিবাচক সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য করে। দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক সংহত হলে উভয় দেশের মানুষই লাভবান হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কতটা সফল হন, সেটা দেখার জন্যই বাংলাদেশের জনগণ অপেক্ষা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

২ ম্যাচ খেলেই মোস্তাফিজ কীভাবে ৬ কোটি রুপি পাবেন

দুটি নোবেলের গৌরব বোধ করতে পারে চবি: প্রধান উপদেষ্টা

বিড়াল নির্যাতনের ঘটনায় গ্রামীণফোন ও অ্যারিস্টোফার্মা কেন আলোচনায়

বাগ্‌বিতণ্ডার মধ্যে সাম্যকে ইট ও ধারালো অস্ত্রের আঘাত করা হয়: ডিএমপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত