Ajker Patrika

জোহরার মুখ

সম্পাদকীয়
জোহরার মুখ

ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীমেলা হয়েছিল ১৯৭২ সালে। সে মেলায় অন্যদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন কবি শামসুর রাহমান। সেখানে গিয়ে দেখা হয়েছিল বিষ্ণু দে, আবু সয়ীদ আইয়ুব, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখের সঙ্গে। বিষ্ণু দে শামসুর রাহমানকে তাঁর বাড়িতে থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু অন্য বন্ধুদের বাদ দিয়ে সেখানে থাকার কথা ভাবেননি শামসুর রাহমান। গিয়েছিলেন বিষ্ণু দের বাড়িতে বেড়াতে। তাঁকে ডেকেছিলেন আবু সয়ীদ আইয়ুবও।

কিন্তু যেদিন নৈশভোজে যেতে বলেছিলেন, সেদিন বিকেল বেলায় শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে জমে গেল আড্ডা। ওমর খৈয়ামি ঢঙের সে আড্ডায় পানাহার চলেছিল ভালোই এবং বৈকালিক সে আড্ডা গড়িয়েছিল মধ্যরাত অবধি। সে অবস্থায় আবু সয়ীদ আইয়ুব আর গৌরী আইয়ুবের বাড়িতে যাওয়ার কথা ভাবা যায় না। অবশ্য পরদিন সে বাড়িতে গিয়ে তাঁদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন শামসুর রাহমান।

কলকাতা থেকে জগদীশ ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় বের হতো ‘কবি ও কবিতা’ বলে একটি পত্রিকা। তাঁর সঙ্গে দেখা হলো একদিন। দুপুরে ফিরে এলেন সাউথ পয়েন্ট স্কুলের প্রশস্ত কামরায়। বিখ্যাত সাহিত্যিক ও সেই স্কুলের শিক্ষক কমল কুমার মজুমদার সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। দুপুরে খেয়ে একটু গড়িয়ে নিচ্ছিলেন শামসুর রাহমান। বিকেলে গম্ভীরমুখে সেখানে এলেন আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক সন্তোষ কুমার ঘোষ ও কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়।

সন্তোষ কুমার ঘোষের হাতে একটি চিঠি, যেটি লিখেছেন শামসুর রাহমানের মেজো ভাই আজিজুর রহমান চৌধুরী। তাতে জানা গেল, শামসুর রাহমানের স্ত্রী জোহরা গুরুতর অসুস্থ। শামসুর রাহমান মনে করলেন, জোহরা বুঝি আর বেঁচে নেই। শামসুরকে দ্রুত ঢাকার উদ্দেশে রওনা হতে বলা হয়েছে। জোহরার মুখটা ভেসে উঠল শামসুর রাহমানের মনে। বুক চিড়ে হু হু কান্না বেরিয়ে এল তাঁর। বালিশে মাথা গুঁজে কাঁদলেন অনেকক্ষণ। দ্রুত ঢাকায় ফেরার টিকিটের ব্যবস্থা হলো। প্রবোধ দিতে দিতে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এলেন মহাদেব সাহা।

ঢাকায় পৌঁছে শামসুর রাহমান দেখলেন, ফাঁড়া কেটে গেছে। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন কবি। 

সূত্র: শামসুর রাহমানের গদ্যসংগ্রহ, পৃষ্ঠা ২৮৩-২৮৮ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত