মযহারুল ইসলাম বাবলা
আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে, বিশেষ করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াকে কেন্দ্র করে আমরা সমালোচনা ও কটাক্ষ করে থাকি। জনগণ যদি প্রার্থীকে ভোটই দিতে না পারে তাহলে ওই প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করা নিশ্চয় যুক্তিযুক্ত হওয়ার কোনোই কারণ নেই। জাতীয় নির্বাচন, উপজেলা, সিটি করপোরেশন এবং ইউনিয়ন পরিষদ–প্রতিটি নির্বাচন নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা এক এবং অভিন্নই বলা যায়।
বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যত সম্পূর্ণই ভেঙে পড়েছে। মানুষের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার বলে বাস্তবে কিছু নেই। সর্বক্ষেত্রে অবিরাম চলছে গণতন্ত্রহীনতা। জনগণ তার ভোটাধিকারের অধিকারও প্রায় সম্পূর্ণরূপে হারিয়েছে। এমতাবস্থায় দেশজুড়ে মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ, প্রতিবাদ আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন সংস্থা সম্পর্কে, তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে সমালোচনা অবশ্যই অপ্রাসঙ্গিক নয়। খুবই সত্য কথা যে বর্তমান সরকারের পক্ষে রাষ্ট্র, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন থেকে বিচারিক আদালত—সর্বত্রই আনুগত্যের সংস্কৃতি বিরাজমান। আমরা অভ্যস্তও হয়ে পড়েছি এবং মেনেও নিয়েছি, ক্ষমতায় থাকা সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান অনিরপেক্ষই হবে এবং এটিই অনিবার্য। তাই এ নিয়ে সমালোচনা করলেও, এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বিরোধী দলগুলোকে দেখছি না।
আমাদের অভিন্ন সংস্কৃতি বিরাজ করছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও। সেখানেও ক্ষমতাসীন সরকারের বা সরকারি দলের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব, জবরদখল, ফ্যাসিবাদী শাসন ও শোষণ অবিরাম ঘটে চলেছে। নির্বাচনও সেখানে প্রহসনে পরিণত। হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির শাসনামলে অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী শাসন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোয় দেখা গেছে, আমাদের নির্বাচনব্যবস্থার অভিন্ন রূপও।
গত মাসে ত্রিপুরা রাজ্যের পুরসভা নির্বাচনে রাজ্যের এবং কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা বিজেপি নির্বাচনকে চরম প্রহসনে পরিণত করে ছেড়েছে। বিরোধী দলের প্রার্থীদের বল প্রয়োগে মনোনয়নপত্র দাখিল পর্যন্ত করতে দেয়নি। এতে ১২২ জন বিজেপি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব নিজের জন্মদিনে বিস্ময়কর ভোটারবিহীন পুরসভার নির্বাচন উপহার দিয়েছেন ত্রিপুরাবাসীকে। নির্বাচনের আগের রাত থেকে নির্বাচনের দিনব্যাপী জবরদখল, অনিয়ম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেশুমার ব্যবহার করে একতরফা নির্বাচন সম্পন্ন করেছে বিপ্লব দেবের সরকার। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে না দিয়ে বিজেপির গুন্ডা বাহিনী নির্বিবাদে ব্যালটে সিল মেরে নির্বাচনকে তামাশায় পরিণত করেছে। বিরোধীরা রাজ্যের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর কাছে অভিযোগ জানালে তিনি বলেন, ‘চোপ! সাজানো কথা বলতে এসেছ! বিজেপির গুন্ডা বাহিনী কিছু করলে তোমরা এখানে থাকতে পারতে?’
নির্বাচনের দিন শেষে সিপিএম পুরসভা ভোটকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়েছে। অপরদিকে বিজেপিবিরোধী ভোট খণ্ডিত করতে ত্রিপুরা রাজ্যে আগমন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তারাও একই অভিযোগ করেছে। বিজেপি ও তৃণমূলের গোপন আঁতাতের পরও। অতিসম্প্রতি আরএসএস মুখপাত্র ‘স্বস্তিকা’ পত্রিকার প্রতিবেদনে নরেন্দ্র মোদি ও মমতার রহস্যজোটের বিষয় ফাঁস করেছে। জাতীয় কংগ্রেসকে ভারতীয় রাজনীতি থেকে নির্মূলে তৃণমূল নেত্রী মমতাকে জোটবদ্ধ করেছে বিজেপি, আরএসএস। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কংগ্রেস ঠেকাতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আঁতাতের বিকল্প নেই। ওই সমঝোতা যেকোনো উপায়ে অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। স্মরণ করা যায় পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বিজেপির মতো একই কাণ্ড ঘটিয়েছিল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রহসন, ছাপ্পা ও বল প্রয়োগের নির্বাচনের বিরুদ্ধে সিপিএমের পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসও জবরদস্তির ত্রিপুরা পুরসভার ভোট বাতিলের দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
পুর-নিগম, পুর পরিষদ ও নগর পঞ্চায়েত মিলে ত্রিপুরার ৩৩৬টি আসনের নির্বাচনে ১১২টি আসনে বিজেপি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জয়ী হওয়ার ফলে নির্বাচন হয়েছে ২২৪টি আসনে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রদত্ত হিসাবে ভোট পড়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি। কেননা, রাজ্যের পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপির পেটোয়া বাহিনীর নৃশংস ভূমিকায় বড় কোনো সংঘর্ষ হয়নি সত্য। তবে রাজ্যের সর্বত্রই একতরফা ছাপ্পা ভোট, হিংসা, ভোটকেন্দ্র জবরদখল, বিরোধী দলের ভোটারদের ওপর হামলার অজস্র ঘটনা ঘটেছে। বিরোধী দলের এজেন্টদের বুথে ঢুকতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি, বিরোধীদলীয় প্রার্থীকেও শারীরিক নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে।
২৫ নভেম্বর ভোটের দিনব্যাপী ত্রিপুরাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে শাসক দল বিজেপি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘দিনদুপুরে গণতন্ত্রের ওপর অমাবস্যা নামিয়ে এনেছে বিজেপি জোট সরকার। সরাসরি অমিত শাহের নির্দেশে এই গুন্ডামি হয়েছে। কেউ কোনো সুরক্ষার বন্দোবস্ত করেনি। আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব, জনতার দরবারেও এই ছবি তুলে ধরব।’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিংহের বক্তব্য কিছুটা ব্যতিক্রমী। তিনি বলেছেন, ‘একমাত্র কৈলাসহরে মানুষের প্রতিরোধের মুখে বিজেপি বিশেষ কিছু করতে পারেনি। এ ছাড়া সারা ত্রিপুরায় গণতন্ত্র হত্যার তাণ্ডব চলেছে। শাসক দলের আক্রমণের শিকার প্রধানত সিপিএম এবং বামফ্রন্ট। তবে বাদ পড়েনি তৃণমূল কংগ্রেসও।’ নির্বাচনী প্রহসনের প্রতিবাদে এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় আগরতলার পশ্চিম থানা ঘেরাও করেন সিপিএমের কর্মী, সমর্থকেরা। সিপিএম নেতা পবিত্র করের নেতৃত্বে আগরতলা পূর্ব থানার সামনে অবস্থান নেন সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। এমনকি তৃণমূলের নেতা সুবল ভৌমিকও অংশ নেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের বক্তব্য না শুনে তাঁদের তুলে নিয়ে যায়।
ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, ‘প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্র ছিল। বিরোধীরা নানা কথা বলে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট দিয়েছেন।’ রাজ্য পুলিশের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অরিন্দম নাথ বলেছেন, ‘বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। কিছু ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ অভিযোগের তির যে শাসক দলের দিকে, সেটা মেনে নিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তাটি।
নির্বাচনের দিনটি ত্রিপুরা রাজ্যের গণতন্ত্র হত্যার দিন হিসেবে পরিগণিত হয়েছে, রাজ্যজুড়ে পুলিশ, প্রশাসন, বিজেপির গুন্ডা বাহিনীর হিংস্র তাণ্ডবে ভারতের বর্তমান গণতন্ত্রের দশাটি নগ্নভাবে উন্মোচিত হয়েছে।
সামনে উত্তর প্রদেশের নির্বাচন। ভারতের সবচেয়ে বৃহৎ প্রদেশ সেটি। অতীতের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশের বিধানসভার নির্বাচনে জয়ীরাই কেন্দ্রের ক্ষমতা লাভ করে এসেছেন। ওই বিবেচনাকে আমলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বছরব্যাপী কৃষক আন্দোলনের সব দাবি মেনে নিয়েছেন, বাস্তবতা হচ্ছে, বাধ্য হয়েছেন। কৃষক আন্দোলনে বিজেপির জনপ্রিয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটিই বিজেপির পতন ডেকে আনে কি না, সেটাও সামনের দিনে পরিষ্কার হয়ে যাবে। হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পাওয়ার অভিপ্রায়ে এবং উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের মুখে বিজেপি সরকার কৃষকদের লাগাতার আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করেছে। এতে শেষরক্ষা হয় কি না, আসন্ন উত্তর প্রদেশের বিধানসভার নির্বাচনে প্রমাণ পাওয়া যাবে। অথচ কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে বামপন্থীদের অবস্থান শুরু থেকে লক্ষ করা গেলেও পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস টুঁ শব্দটি করেনি। বিপরীতে কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে মোদি সরকারের সঙ্গে গলা মিলিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের কৃষক আন্দোলনের সংহতি সমাবেশ ও মিছিলে পুলিশ লেলিয়ে চরম নৃশংস নজির রেখেছে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। এসব যৌক্তিক কারণে ঘাসফুল পদ্মফুলকে বিরোধীরা বিজেমূল আখ্যা দিয়েছে, অর্থাৎ বিজেপি ও তৃণমূলের রহস্য জোটের।
আমাদের উপমহাদেশজুড়ে অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী শাসন বহাল তবিয়তে বিরাজ করছে। বুর্জোয়া গণতন্ত্রও উধাও প্রায় সব কটি রাষ্ট্রে। পাকিস্তানের বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। রাষ্ট্রটি জন্ম থেকে এযাবৎ সামরিক আমলাতন্ত্রেরই নিয়ন্ত্রণে। গণতন্ত্র সেখানে অতীতেও ছিল না। আজও নেই। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি উপমহাদেশের প্রতিটি রাষ্ট্রের শাসকশ্রেণির ওপর ভর করে আছে। ওই সংস্কৃতি বদলাতে হলে ঔপনিবেশিক কালাকানুন, আমলাতন্ত্র এবং রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। এটি ওপর থেকে আসবে না। জনগণের সম্মিলিত আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই আসবে। তার জন্য জরুরি কাজটি হবে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বৃহৎ গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা এবং গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত করা। ভারতের কৃষক আন্দোলন যার পথ দেখিয়েছে। তাতেই সব রাষ্ট্রের বিদ্যমান ব্যবস্থা বদল সম্ভব হবে বলেই ভরসা করতে পারি।
মযহারুল ইসলাম বাবলা: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে, বিশেষ করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াকে কেন্দ্র করে আমরা সমালোচনা ও কটাক্ষ করে থাকি। জনগণ যদি প্রার্থীকে ভোটই দিতে না পারে তাহলে ওই প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করা নিশ্চয় যুক্তিযুক্ত হওয়ার কোনোই কারণ নেই। জাতীয় নির্বাচন, উপজেলা, সিটি করপোরেশন এবং ইউনিয়ন পরিষদ–প্রতিটি নির্বাচন নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা এক এবং অভিন্নই বলা যায়।
বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যত সম্পূর্ণই ভেঙে পড়েছে। মানুষের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার বলে বাস্তবে কিছু নেই। সর্বক্ষেত্রে অবিরাম চলছে গণতন্ত্রহীনতা। জনগণ তার ভোটাধিকারের অধিকারও প্রায় সম্পূর্ণরূপে হারিয়েছে। এমতাবস্থায় দেশজুড়ে মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ, প্রতিবাদ আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন সংস্থা সম্পর্কে, তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে সমালোচনা অবশ্যই অপ্রাসঙ্গিক নয়। খুবই সত্য কথা যে বর্তমান সরকারের পক্ষে রাষ্ট্র, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন থেকে বিচারিক আদালত—সর্বত্রই আনুগত্যের সংস্কৃতি বিরাজমান। আমরা অভ্যস্তও হয়ে পড়েছি এবং মেনেও নিয়েছি, ক্ষমতায় থাকা সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান অনিরপেক্ষই হবে এবং এটিই অনিবার্য। তাই এ নিয়ে সমালোচনা করলেও, এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বিরোধী দলগুলোকে দেখছি না।
আমাদের অভিন্ন সংস্কৃতি বিরাজ করছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও। সেখানেও ক্ষমতাসীন সরকারের বা সরকারি দলের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব, জবরদখল, ফ্যাসিবাদী শাসন ও শোষণ অবিরাম ঘটে চলেছে। নির্বাচনও সেখানে প্রহসনে পরিণত। হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির শাসনামলে অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী শাসন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোয় দেখা গেছে, আমাদের নির্বাচনব্যবস্থার অভিন্ন রূপও।
গত মাসে ত্রিপুরা রাজ্যের পুরসভা নির্বাচনে রাজ্যের এবং কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা বিজেপি নির্বাচনকে চরম প্রহসনে পরিণত করে ছেড়েছে। বিরোধী দলের প্রার্থীদের বল প্রয়োগে মনোনয়নপত্র দাখিল পর্যন্ত করতে দেয়নি। এতে ১২২ জন বিজেপি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব নিজের জন্মদিনে বিস্ময়কর ভোটারবিহীন পুরসভার নির্বাচন উপহার দিয়েছেন ত্রিপুরাবাসীকে। নির্বাচনের আগের রাত থেকে নির্বাচনের দিনব্যাপী জবরদখল, অনিয়ম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেশুমার ব্যবহার করে একতরফা নির্বাচন সম্পন্ন করেছে বিপ্লব দেবের সরকার। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে না দিয়ে বিজেপির গুন্ডা বাহিনী নির্বিবাদে ব্যালটে সিল মেরে নির্বাচনকে তামাশায় পরিণত করেছে। বিরোধীরা রাজ্যের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর কাছে অভিযোগ জানালে তিনি বলেন, ‘চোপ! সাজানো কথা বলতে এসেছ! বিজেপির গুন্ডা বাহিনী কিছু করলে তোমরা এখানে থাকতে পারতে?’
নির্বাচনের দিন শেষে সিপিএম পুরসভা ভোটকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়েছে। অপরদিকে বিজেপিবিরোধী ভোট খণ্ডিত করতে ত্রিপুরা রাজ্যে আগমন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তারাও একই অভিযোগ করেছে। বিজেপি ও তৃণমূলের গোপন আঁতাতের পরও। অতিসম্প্রতি আরএসএস মুখপাত্র ‘স্বস্তিকা’ পত্রিকার প্রতিবেদনে নরেন্দ্র মোদি ও মমতার রহস্যজোটের বিষয় ফাঁস করেছে। জাতীয় কংগ্রেসকে ভারতীয় রাজনীতি থেকে নির্মূলে তৃণমূল নেত্রী মমতাকে জোটবদ্ধ করেছে বিজেপি, আরএসএস। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কংগ্রেস ঠেকাতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আঁতাতের বিকল্প নেই। ওই সমঝোতা যেকোনো উপায়ে অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। স্মরণ করা যায় পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বিজেপির মতো একই কাণ্ড ঘটিয়েছিল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রহসন, ছাপ্পা ও বল প্রয়োগের নির্বাচনের বিরুদ্ধে সিপিএমের পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসও জবরদস্তির ত্রিপুরা পুরসভার ভোট বাতিলের দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
পুর-নিগম, পুর পরিষদ ও নগর পঞ্চায়েত মিলে ত্রিপুরার ৩৩৬টি আসনের নির্বাচনে ১১২টি আসনে বিজেপি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জয়ী হওয়ার ফলে নির্বাচন হয়েছে ২২৪টি আসনে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রদত্ত হিসাবে ভোট পড়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি। কেননা, রাজ্যের পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপির পেটোয়া বাহিনীর নৃশংস ভূমিকায় বড় কোনো সংঘর্ষ হয়নি সত্য। তবে রাজ্যের সর্বত্রই একতরফা ছাপ্পা ভোট, হিংসা, ভোটকেন্দ্র জবরদখল, বিরোধী দলের ভোটারদের ওপর হামলার অজস্র ঘটনা ঘটেছে। বিরোধী দলের এজেন্টদের বুথে ঢুকতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি, বিরোধীদলীয় প্রার্থীকেও শারীরিক নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে।
২৫ নভেম্বর ভোটের দিনব্যাপী ত্রিপুরাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে শাসক দল বিজেপি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘দিনদুপুরে গণতন্ত্রের ওপর অমাবস্যা নামিয়ে এনেছে বিজেপি জোট সরকার। সরাসরি অমিত শাহের নির্দেশে এই গুন্ডামি হয়েছে। কেউ কোনো সুরক্ষার বন্দোবস্ত করেনি। আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব, জনতার দরবারেও এই ছবি তুলে ধরব।’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিংহের বক্তব্য কিছুটা ব্যতিক্রমী। তিনি বলেছেন, ‘একমাত্র কৈলাসহরে মানুষের প্রতিরোধের মুখে বিজেপি বিশেষ কিছু করতে পারেনি। এ ছাড়া সারা ত্রিপুরায় গণতন্ত্র হত্যার তাণ্ডব চলেছে। শাসক দলের আক্রমণের শিকার প্রধানত সিপিএম এবং বামফ্রন্ট। তবে বাদ পড়েনি তৃণমূল কংগ্রেসও।’ নির্বাচনী প্রহসনের প্রতিবাদে এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় আগরতলার পশ্চিম থানা ঘেরাও করেন সিপিএমের কর্মী, সমর্থকেরা। সিপিএম নেতা পবিত্র করের নেতৃত্বে আগরতলা পূর্ব থানার সামনে অবস্থান নেন সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। এমনকি তৃণমূলের নেতা সুবল ভৌমিকও অংশ নেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের বক্তব্য না শুনে তাঁদের তুলে নিয়ে যায়।
ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, ‘প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্র ছিল। বিরোধীরা নানা কথা বলে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট দিয়েছেন।’ রাজ্য পুলিশের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অরিন্দম নাথ বলেছেন, ‘বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। কিছু ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ অভিযোগের তির যে শাসক দলের দিকে, সেটা মেনে নিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তাটি।
নির্বাচনের দিনটি ত্রিপুরা রাজ্যের গণতন্ত্র হত্যার দিন হিসেবে পরিগণিত হয়েছে, রাজ্যজুড়ে পুলিশ, প্রশাসন, বিজেপির গুন্ডা বাহিনীর হিংস্র তাণ্ডবে ভারতের বর্তমান গণতন্ত্রের দশাটি নগ্নভাবে উন্মোচিত হয়েছে।
সামনে উত্তর প্রদেশের নির্বাচন। ভারতের সবচেয়ে বৃহৎ প্রদেশ সেটি। অতীতের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশের বিধানসভার নির্বাচনে জয়ীরাই কেন্দ্রের ক্ষমতা লাভ করে এসেছেন। ওই বিবেচনাকে আমলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বছরব্যাপী কৃষক আন্দোলনের সব দাবি মেনে নিয়েছেন, বাস্তবতা হচ্ছে, বাধ্য হয়েছেন। কৃষক আন্দোলনে বিজেপির জনপ্রিয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটিই বিজেপির পতন ডেকে আনে কি না, সেটাও সামনের দিনে পরিষ্কার হয়ে যাবে। হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পাওয়ার অভিপ্রায়ে এবং উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের মুখে বিজেপি সরকার কৃষকদের লাগাতার আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করেছে। এতে শেষরক্ষা হয় কি না, আসন্ন উত্তর প্রদেশের বিধানসভার নির্বাচনে প্রমাণ পাওয়া যাবে। অথচ কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে বামপন্থীদের অবস্থান শুরু থেকে লক্ষ করা গেলেও পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস টুঁ শব্দটি করেনি। বিপরীতে কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে মোদি সরকারের সঙ্গে গলা মিলিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের কৃষক আন্দোলনের সংহতি সমাবেশ ও মিছিলে পুলিশ লেলিয়ে চরম নৃশংস নজির রেখেছে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। এসব যৌক্তিক কারণে ঘাসফুল পদ্মফুলকে বিরোধীরা বিজেমূল আখ্যা দিয়েছে, অর্থাৎ বিজেপি ও তৃণমূলের রহস্য জোটের।
আমাদের উপমহাদেশজুড়ে অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী শাসন বহাল তবিয়তে বিরাজ করছে। বুর্জোয়া গণতন্ত্রও উধাও প্রায় সব কটি রাষ্ট্রে। পাকিস্তানের বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। রাষ্ট্রটি জন্ম থেকে এযাবৎ সামরিক আমলাতন্ত্রেরই নিয়ন্ত্রণে। গণতন্ত্র সেখানে অতীতেও ছিল না। আজও নেই। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি উপমহাদেশের প্রতিটি রাষ্ট্রের শাসকশ্রেণির ওপর ভর করে আছে। ওই সংস্কৃতি বদলাতে হলে ঔপনিবেশিক কালাকানুন, আমলাতন্ত্র এবং রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। এটি ওপর থেকে আসবে না। জনগণের সম্মিলিত আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই আসবে। তার জন্য জরুরি কাজটি হবে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বৃহৎ গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা এবং গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত করা। ভারতের কৃষক আন্দোলন যার পথ দেখিয়েছে। তাতেই সব রাষ্ট্রের বিদ্যমান ব্যবস্থা বদল সম্ভব হবে বলেই ভরসা করতে পারি।
মযহারুল ইসলাম বাবলা: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১৩ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫