Ajker Patrika

সীতাকুণ্ডে ধুঁকছে জাহাজভাঙা শিল্প

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুণ্ড
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২: ২৯
সীতাকুণ্ডে ধুঁকছে জাহাজভাঙা শিল্প

অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ১৪০টি জাহাজভাঙা কারখানা। ১৪টি কারখানা সচল থাকলেও অব্যাহত লোকসানে কয়েকটি বন্ধ হতে চলেছে। কোনো ঘোষণা ছাড়াই ছাঁটাইয়ের কারণে জীবিকা-সংকটে ভুগছেন এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অর্ধ লাখ শ্রমিক। স্ক্র্যাপ জাহাজের পণ্যকে ঘিরে গড়ে ওঠা শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও বিপাকে পড়েছে। অধিকাংশ স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী ঋণের ভারে জর্জরিত। অনেকেই দেউলিয়া হয়ে গেছেন।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) সূত্রে জানা গেছে, আশির দশকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জাহাজভাঙা শিল্পের গোড়াপত্তন হয়। ধীরে ধীরে উপকূলে গড়ে ওঠে ১৫৪টি জাহাজভাঙা কারখানা। তবে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অব্যাহত লোকসানের কবলে পড়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্ধ হয়ে গেছে ১৪০টি কারখানা। বেকার হয়ে গেছেন প্রায় অর্ধ লাখ শ্রমিক।প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বর্তমানে ১৪টি জাহাজভাঙা কারখানা সচল রয়েছে। এর মধ্যে চার-পাঁচটি প্রায় নিষ্ক্রিয়। লোকসান ঠেকাতে শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে এসব কারখানা।

জাহাজভাঙা কারখানার শ্রমিক মোহাম্মদ মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কুমিরা সাগর উপকূলে অবস্থিত মান্নান স্টিল জাহাজভাঙা কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। তবে চার মাস আগে মালিকপক্ষ হঠাৎই জাহাজভাঙা কারখানা বন্ধ করে দেয়। এতে বেকার হওয়ার পাশাপাশি মা-বাবাকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটিং কন্ট্রাক্টর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, তিনি দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে জাহাজভাঙা কারখানায় শ্রমিক দিয়ে স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটানোর কাজ করাতেন। কিন্তু বর্তমানে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি বন্ধ থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে এক-তৃতীয়াংশের অধিক শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। যার ফলে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে যান এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অর্ধ লাখ শ্রমিক। যাঁদের অধিকাংশের বাড়ি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়।

এস এল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লোকমান বলেন, গত বছরের জানুয়ারি থেকে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি ও কাটা বন্ধ ছিল তাঁদের ইয়ার্ডে। তাঁরা টানা আট মাস শ্রমিকদের কাজ ছাড়াই বেতন পরিশোধ করেছেন। তবে ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় জাহাজভাঙা কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। অনেকটা নিরুপায় হয়েই শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। তবে জাহাজ কাটার কাজ শুরু হলে তাঁদের ছাঁটাই করা পুরোনো শ্রমিকদের পুনরায় নিয়োগ দেবেন।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবু তাহের জানান, গত বছরের মে ও জুন মাসে ব্যাংকগুলো ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে জাহাজভাঙা কারখানা মালিকদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে ডলারের অতিরিক্ত মূল্য হিসাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এতে ডলারের অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করতে দেউলিয়া হয়েছেন অনেক জাহাজভাঙা কারখানার মালিক। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত