অলকানন্দা রায়, ঢাকা
একটানা খটখট আওয়াজ, মাঝখানে কয়েক মিনিটের বিরতি, ফের সেই খটখট খটখট আওয়াজ। ঝুঁকে পড়ে আপন মনে সেলাই করছেন একজন। নিচের পাদানিতে পা দুটি নৃত্যের ভঙ্গিতে ছন্দে ছন্দে ওপর-নিচ হচ্ছে। কখনো কাঁচি দিয়ে ক্যাচ ক্যাচ করে কাটছেন কাপড়। এ দৃশ্য আমাদের চেনা। এই ভূমিকা যিনি পালন করে চলেছেন অক্লান্তভাবে, তিনিও ছিলেন আমাদের খুব কাছের। হয়তো তিনি আমাদের মা, ফুফু, খালা, দাদি, বড় বোন, কখনো বাবা, চাচা। কখনো তিনি কেবলই পরিবারের সদস্যদের জন্য শখে, কখনো নিদারুণ জীবিকার তাগিদে নেমেছিলেন দরজির ভূমিকায়। শখ কিংবা প্রয়োজন—এই দুইয়ের মেলবন্ধন করছে যে যন্ত্র, সেটি সেলাই মেশিন।
সেলাই মেশিন একদিন বদলে দিয়েছিল ফ্যাশন দুনিয়া। বদলে দিয়েছিল বহু মানুষের জীবন। যে জীবন নারীর পাশাপাশি পুরুষও যাপন করতেন, আজও করেন অনেকে। সেলাই মেশিন এ দেশে একদিন নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে দেখা দিয়েছিল। ঘুচিয়েছিল অনেক পরিবারের আর্থিক অনটন, দিয়েছিল সচ্ছলতা।
ফ্যাশনে সেলাই মেশিন
১৭৫৫ সালে সেলাই মেশিনের আদি রূপ পেটেন্ট করা হয়। কিন্তু এটি কর্মক্ষম হয়ে ওঠে প্রায় ৯৫ বছর পর, ১৮৫০ সালে আইজ্যাক সিজারের হাত ধরে। যদিও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে প্রোডাকশন লাইনে প্রথম সেলাই মেশিন ব্যবহার করা হয় ১৮৮৯ সালে। ইতিমধ্যে ১৮৫৭ সালে জেমস গিবস একক সুতায় চেইন-বিচ সেলাই মেশিন পেটেন্ট করেন। হেলেন অগাস্টা ব্লানচার্ড ১৮৭৩ সালে জিগজ্যাগ সেলাই মেশিন পেটেন্ট করান। এটি বাড়িতে পোশাক সেলাইয়ের দরজা খুলে দেয়।
ভারত উপমহাদেশে সেলাই মেশিন আসে সিঙ্গারের হাত ধরে, ১৯০৫ সালে। ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি কারখানা তৈরি করে। এর পরের ইতিহাস প্রায় সবার জানা। এই সেলাই মেশিনের ওপর ভিত্তি করে এখন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে প্রায় ৩ হাজার ১৪৫ কোটি মার্কিন ডলার (২০২০-২১)।
আমাদের সেলাই দিদিমণিরা
জয় গোস্বামীর ‘মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়’ যারা পড়েছেন বা শুনেছেন লোপামুদ্রার কণ্ঠে, তাঁদের মনে আছে নিশ্চয়ই সেই অসাধারণ লাইনগুলো, ‘আজ জুটেছে, কাল কী হবে, কালের ঘরে শনি/ আমি এখন এই পাড়ায় সেলাই দিদিমণি…’। উনিশ শ আশির দশকে যাঁদের ‘কালের ঘরে শনি’র দশা ছিল, তাঁদের অনেকেই পাড়ার সেলাই দিদিমণি হয়েছিলেন। সে সময়কার ‘উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট’ ধারণার প্রভাবে আমাদের প্রান্তিক নারীদের অনেকেই সেলাই মেশিন চালানো শিখেছিলেন। ধীরে ধীরে যাপনে অভ্যস্ত করে নিয়েছিলেন খটখট খটখট শব্দের মাধুরী। কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সংসারের বেশ খানিকটা বোঝা। সেলাই মেশিন এভাবেই আমাদের যাপনের সঙ্গে মিশে গেছে ধীরে ধীরে।
সেলাই মেশিন আবিষ্কারের পর দুটি ঘটনা ঘটে যায় পৃথিবীতে। প্রথমটি হলো, পোশাক তৈরির সময় আশাতীত কমে যাওয়া এবং দ্বিতীয়টি হলো পোশাক উৎপাদনের গতি বেড়ে যাওয়া। এক সময় একটি পুরুষের শার্ট বানাতে প্রায় পনেরো ঘণ্টা লাগত। সেলাই মেশিনের আবিষ্কারে সে সময় এক ঝটকায় নেমে আসে আড়াই তিন ঘণ্টায়। অর্থাৎ পনেরো ঘণ্টায় তৈরি করা যেত প্রায় পাঁচটি পুরুষের পোশাক। নারীর পোশাক বানাতেও সময় সাশ্রয় হয়েছিল প্রায় একই রকম। এই বিশাল সময় বেঁচে যাওয়ায় পোশাকের নকশা ও অন্যান্য বিষয় নিয়েও মানুষ নতুন করে ভাববার অবকাশ পায়। ফলে একই সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিও বড় ও বৈচিত্র্যময় হতে শুরু করে। খুলে যায় সম্ভাবনার বিশাল এক দুয়ার। আমাদের প্রান্তিক নারীরা খানিক হলেও সেই সুযোগ পেয়েছিলেন। আমাদের সেলাই দিদিমণিদের হাত ধরে গ্রামীণ পর্যায়ে পোশাকের নকশায় খানিক বদল এসেছিল। শাড়ির অনুষঙ্গ ব্লাউজে যোগ হয়েছিল নানা রকম নকশা। ফ্রিল দেওয়া হাতা, ঘটি হাতা, বেলবটম, কলসি হাতা, লেস হাতা, পাফ হাতা, ম্যাগি হাতা ইত্যাদি নকশা ও কাট প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ায় ব্যাপক ভূমিকা ছিল আমাদের সেলাই দিদিমণিদের। এ ছাড়া ছোটদের নানা রকম ফ্রক, কামিজে লেস, সুঁই-সুতার হরেক কাজের নকশা আমাদের গ্রামীণ ফ্যাশনে যোগ করেছিল ভিন্ন মাত্রা।
পরিবারের মেয়েরাই নিখুঁত দক্ষতায় নিজেদের ব্লাউজ, সালোয়ার, কামিজ, জ্যাকেট, শীতের পোশাক তৈরি করতেন। নিজেদের সেলাই মেশিন কাজে লাগিয়ে ঘরের লেস, ঝালর লাগানো পর্দা, কুশন কভার, আসনও তৈরি করতেন। ঈদ, পূজা-পার্বণের সময়টাতে এই চিত্র দেখা যেত আরও অনেক বেশি। মা-চাচিরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন সেলাই মেশিন নিয়ে। ব্যস্ত থাকতেন সেলাইপাড়ার দরজিরাও। শোনা যেত সেলাই মেশিনের মুখর আওয়াজ।
একটানা খটখট আওয়াজ, মাঝখানে কয়েক মিনিটের বিরতি, ফের সেই খটখট খটখট আওয়াজ। ঝুঁকে পড়ে আপন মনে সেলাই করছেন একজন। নিচের পাদানিতে পা দুটি নৃত্যের ভঙ্গিতে ছন্দে ছন্দে ওপর-নিচ হচ্ছে। কখনো কাঁচি দিয়ে ক্যাচ ক্যাচ করে কাটছেন কাপড়। এ দৃশ্য আমাদের চেনা। এই ভূমিকা যিনি পালন করে চলেছেন অক্লান্তভাবে, তিনিও ছিলেন আমাদের খুব কাছের। হয়তো তিনি আমাদের মা, ফুফু, খালা, দাদি, বড় বোন, কখনো বাবা, চাচা। কখনো তিনি কেবলই পরিবারের সদস্যদের জন্য শখে, কখনো নিদারুণ জীবিকার তাগিদে নেমেছিলেন দরজির ভূমিকায়। শখ কিংবা প্রয়োজন—এই দুইয়ের মেলবন্ধন করছে যে যন্ত্র, সেটি সেলাই মেশিন।
সেলাই মেশিন একদিন বদলে দিয়েছিল ফ্যাশন দুনিয়া। বদলে দিয়েছিল বহু মানুষের জীবন। যে জীবন নারীর পাশাপাশি পুরুষও যাপন করতেন, আজও করেন অনেকে। সেলাই মেশিন এ দেশে একদিন নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে দেখা দিয়েছিল। ঘুচিয়েছিল অনেক পরিবারের আর্থিক অনটন, দিয়েছিল সচ্ছলতা।
ফ্যাশনে সেলাই মেশিন
১৭৫৫ সালে সেলাই মেশিনের আদি রূপ পেটেন্ট করা হয়। কিন্তু এটি কর্মক্ষম হয়ে ওঠে প্রায় ৯৫ বছর পর, ১৮৫০ সালে আইজ্যাক সিজারের হাত ধরে। যদিও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে প্রোডাকশন লাইনে প্রথম সেলাই মেশিন ব্যবহার করা হয় ১৮৮৯ সালে। ইতিমধ্যে ১৮৫৭ সালে জেমস গিবস একক সুতায় চেইন-বিচ সেলাই মেশিন পেটেন্ট করেন। হেলেন অগাস্টা ব্লানচার্ড ১৮৭৩ সালে জিগজ্যাগ সেলাই মেশিন পেটেন্ট করান। এটি বাড়িতে পোশাক সেলাইয়ের দরজা খুলে দেয়।
ভারত উপমহাদেশে সেলাই মেশিন আসে সিঙ্গারের হাত ধরে, ১৯০৫ সালে। ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি কারখানা তৈরি করে। এর পরের ইতিহাস প্রায় সবার জানা। এই সেলাই মেশিনের ওপর ভিত্তি করে এখন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে প্রায় ৩ হাজার ১৪৫ কোটি মার্কিন ডলার (২০২০-২১)।
আমাদের সেলাই দিদিমণিরা
জয় গোস্বামীর ‘মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়’ যারা পড়েছেন বা শুনেছেন লোপামুদ্রার কণ্ঠে, তাঁদের মনে আছে নিশ্চয়ই সেই অসাধারণ লাইনগুলো, ‘আজ জুটেছে, কাল কী হবে, কালের ঘরে শনি/ আমি এখন এই পাড়ায় সেলাই দিদিমণি…’। উনিশ শ আশির দশকে যাঁদের ‘কালের ঘরে শনি’র দশা ছিল, তাঁদের অনেকেই পাড়ার সেলাই দিদিমণি হয়েছিলেন। সে সময়কার ‘উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট’ ধারণার প্রভাবে আমাদের প্রান্তিক নারীদের অনেকেই সেলাই মেশিন চালানো শিখেছিলেন। ধীরে ধীরে যাপনে অভ্যস্ত করে নিয়েছিলেন খটখট খটখট শব্দের মাধুরী। কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সংসারের বেশ খানিকটা বোঝা। সেলাই মেশিন এভাবেই আমাদের যাপনের সঙ্গে মিশে গেছে ধীরে ধীরে।
সেলাই মেশিন আবিষ্কারের পর দুটি ঘটনা ঘটে যায় পৃথিবীতে। প্রথমটি হলো, পোশাক তৈরির সময় আশাতীত কমে যাওয়া এবং দ্বিতীয়টি হলো পোশাক উৎপাদনের গতি বেড়ে যাওয়া। এক সময় একটি পুরুষের শার্ট বানাতে প্রায় পনেরো ঘণ্টা লাগত। সেলাই মেশিনের আবিষ্কারে সে সময় এক ঝটকায় নেমে আসে আড়াই তিন ঘণ্টায়। অর্থাৎ পনেরো ঘণ্টায় তৈরি করা যেত প্রায় পাঁচটি পুরুষের পোশাক। নারীর পোশাক বানাতেও সময় সাশ্রয় হয়েছিল প্রায় একই রকম। এই বিশাল সময় বেঁচে যাওয়ায় পোশাকের নকশা ও অন্যান্য বিষয় নিয়েও মানুষ নতুন করে ভাববার অবকাশ পায়। ফলে একই সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিও বড় ও বৈচিত্র্যময় হতে শুরু করে। খুলে যায় সম্ভাবনার বিশাল এক দুয়ার। আমাদের প্রান্তিক নারীরা খানিক হলেও সেই সুযোগ পেয়েছিলেন। আমাদের সেলাই দিদিমণিদের হাত ধরে গ্রামীণ পর্যায়ে পোশাকের নকশায় খানিক বদল এসেছিল। শাড়ির অনুষঙ্গ ব্লাউজে যোগ হয়েছিল নানা রকম নকশা। ফ্রিল দেওয়া হাতা, ঘটি হাতা, বেলবটম, কলসি হাতা, লেস হাতা, পাফ হাতা, ম্যাগি হাতা ইত্যাদি নকশা ও কাট প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ায় ব্যাপক ভূমিকা ছিল আমাদের সেলাই দিদিমণিদের। এ ছাড়া ছোটদের নানা রকম ফ্রক, কামিজে লেস, সুঁই-সুতার হরেক কাজের নকশা আমাদের গ্রামীণ ফ্যাশনে যোগ করেছিল ভিন্ন মাত্রা।
পরিবারের মেয়েরাই নিখুঁত দক্ষতায় নিজেদের ব্লাউজ, সালোয়ার, কামিজ, জ্যাকেট, শীতের পোশাক তৈরি করতেন। নিজেদের সেলাই মেশিন কাজে লাগিয়ে ঘরের লেস, ঝালর লাগানো পর্দা, কুশন কভার, আসনও তৈরি করতেন। ঈদ, পূজা-পার্বণের সময়টাতে এই চিত্র দেখা যেত আরও অনেক বেশি। মা-চাচিরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন সেলাই মেশিন নিয়ে। ব্যস্ত থাকতেন সেলাইপাড়ার দরজিরাও। শোনা যেত সেলাই মেশিনের মুখর আওয়াজ।
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫