Ajker Patrika

এক দশকের সাধনা হারানোর বেদনা ‘কৃষিবিজ্ঞানী’ নূরের

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ০০
এক দশকের সাধনা হারানোর বেদনা  ‘কৃষিবিজ্ঞানী’ নূরের

বিদায় নিচ্ছে আরও একটি বছর। মানুষের জীবনে রেখে যাচ্ছে পাওয়ার আনন্দ কিংবা হারানো বেদনার স্মৃতি। স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদের কাছে বছরটা স্মৃতিময় থাকবে হারানোর বেদনায়। তিনি এই বছর হারিয়েছেন নিজের ১০ বছরের সাধনার ফসল।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ (৫০) পড়াশোনা করেছেন দশম শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলায় বাপ-দাদাদের সঙ্গে মাঠে গিয়ে খরা কিংবা অনাবৃষ্টিতে ফসলহানি দেখেছেন বছরের পর বছর। বরেন্দ্রের লাল মাটিতে কোন ধরনের ধান আবাদ করলে ফসলহানি হবে না সে চিন্তা করেই দিন কাটাতেন। ১৯৯০ সালের পর তিনি শুরু করেন গবেষণা। নিজের মাটির ঘরটাকে রীতিমতো বানিয়ে ফেলেন গবেষণাগার।

সেখানে সংরক্ষণ করেন অসংখ্য জাতের ধানের বীজ। সেই বীজ নিয়ে মাঠে মৌসুমের পর মৌসুম ধান চাষ করেন। এক জাতের সঙ্গে আরেক জাতের সংকরায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবন করেছেন নতুন নতুন ধরন। স্বল্প জীবনকালের ধান, সুগন্ধি, সরু, খরাসহিষ্ণু-সবই আছে সে তালিকায়। এ পর্যন্ত তাঁর উদ্ভাবন করা কৌলিক সারির সংখ্যা প্রায় ২০০। কৃষিতে এ অবদানের জন্য ২০০৫ সালে নূর মোহাম্মদ পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক।

তারপরও থেমে যাননি। গবেষণা চালছিলই। এবারও নূর মোহাম্মদ দেশের সবচেয়ে চিকন চালের ধান উদ্ভাবন করার কথা জানিয়েছেন। তবে গত ৮ নভেম্বর নূর মোহাম্মদের জমিতে কেটে রাখা গবেষণালব্ধ ৬২ জাতের ধান একত্র করে তছনছ করে দেওয়া হয়। এগুলোর বেশির ভাগ ধান নিয়ে ১০ বছর ধরে গবেষণা করছিলেন নূর মোহাম্মদ।

গোল্লাপাড়া এলাকায় ছিল নূর মোহাম্মদের এই গবেষণা প্লট। ধান পাকার পর নূর মোহাম্মদ সেগুলো কেটেও রেখেছিলেন। তাঁর জমির পাশে কাটা হচ্ছিল অঞ্জন মালাকার নামের এক ব্যক্তির ধান। অঞ্জন মালাকারের জমির ধান ট্রলিতে করে নূর মোহাম্মদের জমির ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৬২ জাতের কাটা ধান একত্র করে ফেলেন শ্রমিকেরা।

নূর মোহাম্মদ বাঁধা দিতে গেলে অঞ্জনের পক্ষ নিয়ে তাঁকে হুমকি দেন তানোর পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাব। তাঁর নির্দেশেই শ্রমিকেরা নূর মোহাম্মদের ধান জড়ো করে ফেলেন। তারপরও নূর মোহাম্মদ বাঁধা দিলে তাঁকে আটকে রেখে মারধর করা হয়।

এরপর তাঁর জমির ওপর দিয়ে ট্রলি পার করা হয়। এ নিয়ে নূর মোহাম্মদ তিনজনের নামে থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ প্রথমে মামলা হিসেবে অভিযোগটি রেকর্ড করতে গড়িমসি করে। যুবলীগ নেতা ওহাবও বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশ মামলা রেকর্ড করে। তবে কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি। আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।

গতকাল বুধবার সকালে স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ বলেন, জমিতে ৬২ জাতের গবেষণালব্ধ ধান কাটা ছিল। ১০ বছর ধরে সেগুলো নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছিল। একটা জাত নিয়ে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ বছর গবেষণা করা লাগে। তারপর নতুন ধরনের নতুন জাত হিসেবে বলা যায়। একত্রে মিশিয়ে দেওয়া ৬২ জাতের ধানের গবেষণা ওখানেই শেষ। এর ক্ষতিপূরণ কোনোভাবেই সম্ভব না। অর্থ দিয়ে এর ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, ‘আমি তো নিজের একার জন্য কাজ করি না। দেশ, জাতির জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার এত বড় ক্ষতির পরও পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার না করে জামিন নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এখনো আসামিরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দিয়ে আসছেন।’

হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে যুবলীগ নেতা আবদুল ওহাব বলেন, ‘আসলে ঘটনাটা নিয়ে আমরাও অনুতপ্ত। হুমকি-টুমকি দেওয়া হচ্ছে না। আর বাইরের এলাকার শ্রমিকেরা এসে ধানগুলো এলোমেলো করে দিয়েছিল। তাঁরা তো নূর মোহাম্মদ সম্পর্কে জানেন না।’

নিজে ঘটনাস্থলে থেকে মারধরের কথা অস্বীকার করেন যুবলীগ নেতা আবদুল ওহাব। তবে ওহাবের ঘটনাস্থলে থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল হাসান বলেন, ‘আসামিদের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা অভিযোগপত্র প্রস্তুত করছি। অল্প সময়ের মধ্যেই আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। তারপর আদালতে মামলার বিচার শুরু হবে।’

সালতামামির অন্যান্য আয়োজন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত