Ajker Patrika

চিমনির ধুলো-ধোঁয়ায় ক্লাস চলে স্কুলে

আব্দুর রব, মৌলভীবাজার
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ১৮
চিমনির ধুলো-ধোঁয়ায়  ক্লাস চলে স্কুলে

স্কুলটির তিন দিক ঘেঁষেই ইটভাটা। যেখানে লাল আগুনের তাপে পোড়ানো হয় মাটি। প্রতিদিন শত শত ট্রাকে করে আসে সেই মাটি-খড়ি। সন্ধ্যা নামলে ইট নিয়ে গন্তব্যে রওনা হয় ভারী যানবাহনগুলো। ধুলো আর ধোঁয়ায় পুরো এলাকায় নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অথচ এর মধ্যেই চলে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া, পড়াশোনা আর খেলাধুলা।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার জালালিয়ায় বেগম জেবুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা ঘিরে বিস্তৃত কৃষিজমির ওপর মহসীন ব্রিকস নামের বড় একটি ইটভাটা রয়েছে। শুধু এটি নয়, পুরো কমলগঞ্জেই যেন ইটভাটা তৈরির হিড়িক পড়েছে। উপজেলার সাতটি স্কুলের সীমানা ঘেঁষে বিগত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে চারটি অবৈধ ইটভাটা।

পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ৬৭টি ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে কমলগঞ্জের ৪টিসহ মোট ১৪টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে। অনুমোদনহীন ইটভাটার সবচেয়ে বেশি ৬টি রয়েছে বড়লেখায়। এটি পরিবেশ ও বনমন্ত্রী মো. সাহাবউদ্দীন আহমদের নির্বাচনী এলাকা। তা ছাড়া, মৌলভীবাজার সদরে রয়েছে ৩টি। আর কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণবাজার এলাকায় ১টি।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ইটভাটার বালু আর বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণ। পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাবে কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে জেলায় প্রায়ই অভিযান হয়। গত ছয় মাসে কমপক্ষে চারটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কয়েক দিন পেরোতেই সেগুলো আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেবুন্নেছা বিদ্যালয় ছাড়াও কমলগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চবিদ্যালয় ও কমলগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সীমানা ঘেঁষে কৃষিজমির ওপর একটি, লংঙ্গুর পার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অদূরে একটি ও মুন্সিবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিপ্রসাদ উচ্চবিদ্যালয় এবং সাজেদা বারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পার্শ্ববর্তী কৃষিজমির ওপর গড়ে উঠেছে বিশালাকৃতির আরও একটি ইটভাটা। তা ছাড়া উপজেলার ফসলি জমিতেও রয়েছে বেশ কয়েকটি ইটভাটা।

জালালিয়ার বেগম জেবুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নার্গিস আক্তার বলেন, ‘জানালা ঘেঁষে ইটের সারি থাকে। কিছুক্ষণ পরপর ধুলোর আস্তরণ পড়ে বই ও বেঞ্চের ওপর। মেশিনের শব্দে পাঠদান করা খুবই কষ্টের। পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকি তো আছেই।’

স্থানীয় কৃষক মোবারক মিয়া জানান, ‘ইটভাটা হওয়ার আগে যে জমিতে আগে বিঘাপ্রতি ২০ মণ ধান হতো, এখন একই জমিতে ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে।’

মৌলভীবাজার জেলা পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোহাইমিন মিল্টন বলেন, ‘কমলগঞ্জের চারটি ইটভাটা অবৈধভাবে বছরের পর বছর ব্যবসা করে যাচ্ছে। ইটভাটা বন্ধে আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ায় স্থানীয় লোকজনও বিরক্ত। প্রশাসনের প্রতি মানুষ আস্থা হারাচ্ছে।’

কমলগঞ্জের এসকে ব্রিকসের মালিক ইব্রাহিম মিয়া দাবি করেন, ‘আমার জানা মতে, ইটভাটায় মানুষের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। তারা এটা মেনে নিয়েছে। আইন মেনেই ভাটা চলছে।’

বড়লেখা উপজেলার ৬টির মধ্যে সদর ইউনিয়নের জগডুবা এলাকায় মেসার্স এনএসএস ব্রিকস, নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের ইটাউরি দৌলতপুর এলাকায় মেসার্স বিএসএস ব্রিকস, বড়লেখা সদর ইউনিয়নের মিরারপতন এলাকায় মেসার্স সুরমা ব্রিকস, নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের চান্দপুর এলাকায় মেসার্স আদর্শ ব্রিকস, দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের গাংকুল এলাকায় নজরুল ব্রিকস-১ এবং সদর ইউনিয়নের কালীমন্দির এলাকায় ষাটমা ব্রিকস।

এ ছাড়া মৌলভীবাজার সদরের আমতৈল ইউনিয়নের দিঘীরপাড় এলাকায় যমুনা ব্রিকস, একই ইউনিয়নের সাতহাল এলাকায় নিউ যমুনা ব্রিকস এবং অলহা গ্রামে মেসার্স এসএমএ ব্রিকস গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণবাজার এলাকায় রয়েছে মেসার্স জোনাকী ব্রিকস।

স্থানীয় সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক)-এর সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশকর্মী জহর লাল দত্ত বলেন, ‘অবৈধভাবে এসব ইটভাটা কীভাবে চলছে তা ভাবতেই অবাক লাগে। ভাটামালিকেরা তিলে তিলে পরিবেশ নষ্ট করছেন।’

পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা বলেন, ‘জেলায় অবৈধ ১৪ ইটভাটাকে বিভিন্ন সময় জরিমানা করে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সরায়নি। এদের বিরুদ্ধে শক্ত অভিযান পরিচালনা করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্দালিব রহমান পার্থর স্ত্রীকে বিদেশ যেতে বাধা

‘মেয়েরা যেন আমার মরা মুখ না দেখে’, চিরকুট লিখে ঠিকাদারের ‘আত্মহত্যা’

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

কাতারের রাজপরিবারের দেওয়া বিলাসবহুল বিমান না নেওয়াটা বোকামি: ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত