‘মেটা’য় চাকরি পাওয়ার গল্প

মেটার মতো এত বড় কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। কারণ বিশ্বসেরা এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়া অনেকটা স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছি।

প্রস্তুতির পেছনে

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মনোযোগ দিই। তখন থেকে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা ওই সময়ের যে টেকনোলজি ছিল, সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করি। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লাস প্রজেক্টে কাজ করি। কিন্তু টেকজায়ান্ট কোম্পানিগুলোতে জব পাওয়ার জন্য প্রোগ্রামিং কমপিটিশন কখনোই করা হয়ে ওঠেনি। আমি পিএইচডির শেষ বর্ষে যখন জব নেওয়ার চেষ্টা করি, তখন থেকে প্রবলেম সলভিং বা প্রোগ্রামিং শুরু করি। শুরুতে টেকজায়ান্ট গুগল, মেটা ও মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিতে চাকরি করার ইচ্ছে ছিল। সব কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ার ধাপ প্রায় একই। প্রথমে খোঁজখবর নিতে থাকি ইন্টারভিউর জন্য কী কী ধাপ রয়েছে। প্রতিটা ধাপের প্রস্তুতি কেমন নিতে হয়। কী কী রিসোর্স রয়েছে অনলাইনে। গুছিয়ে নিয়ে নিজের মতো প্রস্তুতি শুরু করি। এর মধ্যে কোডিং রাউন্ডে প্রোগ্রামিং স্কিল বেশি জরুরি। বিভিন্ন ওয়েবসাইটের প্রবলেম সমাধান করতাম। শুরুর দিকে প্রবলেম সমাধান করতে না পারায় হতাশায় ছিলাম। তারপর নিয়মিত অনুশীলন করার ফলে আস্তে আস্তে স্কিল বাড়তে থাকে।

মেটায় কাজের সুযোগ

মেটায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াও সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং পদে চাকরির সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া যেকোনো সাবজেক্ট থেকেই এখানে চাকরির সুযোগ আছে। মেটা অনেক বড় কোম্পানি। এখানে অনেক লোকবলের প্রয়োজন। যার কারণে কাজের অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। মেটার জব পোর্টাল থেকে নিজস্ব দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আবেদন করতে হয়।

আবেদনের প্রক্রিয়া

মেটায় আবেদনের আগে কিছু বিষয় জানা দরকার। কারণ এসব টেকজায়ান্ট কোম্পানিতে অনেক চাকরির সিভি জমা পড়ে। তাই একটু টেকনিক্যাল হওয়া জরুরি। প্রতিটি টেকজায়ান্ট কোম্পানির ক্যারিয়ার পোর্টালে চাকরির অপশন দেওয়া থাকে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সরাসরি আবেদন করা যাবে। তার আগে সিভির সঙ্গে লিংকড-ইন প্রোফাইল সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় তথ্যের সঙ্গে সব স্কিল বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে। এ ছাড়া মেটায় চাকরি করেন পরিচিত কোনো লোক থাকলে তাঁদের রেফারেন্সে আবেদন করতে পারেন। এতে ইন্টারভিউ পাওয়ার আশা বেশি থাকে।

চাকরির ইন্টারভিউ

মেটায় কয়েকটা রাউন্ডে ইন্টারভিউ হয়ে থাকে। প্রথমেই রিক্রুটমেন্ট থেকে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। সেখানে একজন আবেদনকারীর পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানা হয়। পাশাপাশি দেখা হয়, তিনি মূল ভাইভা দেওয়ার জন্য যোগ্য কি না। এরপর ফোন স্কিন রাউন্ডে হয়। এটা মূলত ভিডিও কলের মাধ্যমে নেওয়া হয়। এখানে কোডিং ও প্রোগ্রামিং স্কিল দেখা হয়। এই রাউন্ডে পাস করার পর আসবে অনসাইট রাউন্ড বা ফাইনাল রাউন্ড। ফাইনাল রাউন্ডে কয়েকটা পর্ব থাকে। এতে থাকে সিস্টেম ডিজাইন রাউন্ড। এই পর্বে কোনো একটি সিস্টেম কীভাবে ডিজাইন হয়, সে-সম্পর্কে ধারণা দিতে হয়। এ ছাড়া বিহ্যাভিওরাল ইন্টারভিউ হয়। এখানে আবেদনকারীর আগের কী কী অভিজ্ঞতা আছে, কী কী চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করবেন, জবে থাকতে সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করেছেন, কারও সঙ্গে মতবিরোধ হলে কীভাবে সমাধান করেছেন, এসব দক্ষতা দেখা হয়।

বাংলাদেশিদের জন্য সুযোগ আছে

বিশ্বসেরা টেকজায়ান্ট কোম্পানিগুলোতে চাকরির ক্ষেত্রে সব দেশের জন্য সমান সুযোগ রয়েছে। যেকোনো দেশ থেকে বা যেকোনো ইউনিভার্সিটিতে পড়ে আবেদন করা যাবে। যে কেউ আবেদন করলে প্রোফাইলের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর তাঁকে ইন্টারভিউর জন্য ডাকা হবে। মেটা সব দেশকে সমানভাবে মূল্যায়ন করে থাকে। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশিদেরও সমান সুযোগ রয়েছে।

তরুণদের জন্য পরামর্শ

দেশের তরুণদের জন্য মেটার পাশাপাশি অন্যান্য টেকজায়ান্ট কোম্পানিতেও চাকরির সুযোগ রয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে প্রচুর লোকবল এসব কোম্পানিতে জব করছেন। আমি মনে করি, আমাদের দেশের তরুণদের মধ্যেও সেই যোগ্যতা রয়েছে।

আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আপাতত মেটাতেই আমার ভিত্তি মজবুত করা এবং যোগ্যতা, কর্মনিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে চাই। এই অবস্থানে থেকেই দেশের সামগ্রিক অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা এবং দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার চেষ্টা চালিয়ে যাব। দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। পাশাপাশি দেশের আইসিটি খাতে নিজের মেধা ও দক্ষতা শেয়ার করতে চাই।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম