আব্বাস নাসির
সম্ভবত পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এমন কিছু জানে, যা আমরা জানি না। ফলে দলটির আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। জাতীয় পরিষদ ভেঙে যাওয়ার আর দুই সপ্তাহ বাকি, পিএমএল-এনের সরকার একটি ‘নিরপেক্ষ’ তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের জন্য পথ প্রশস্ত করছে, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করবে।
আপনারা দেখুন পাঞ্জাব প্রদেশের চাশমায় লক্ষকোটি রুপির চাশমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে সরকারের অনুমোদন এবং কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই সংসদে তা পাস হওয়া সত্যিই বিস্ময় জাগায়। যেখানে কিনা শাহবাজ শরিফের জোট সরকারকে পাকিস্তানের নজিরবিহীন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে, এর মধ্যে অর্থ পরিশোধের সংকটও রয়েছে।
সংসদে প্রণীত কিছু আইন মানবাধিকারকর্মীদের ক্ষুব্ধ করেছে এবং স্বল্পসংখ্যক সংসদ সদস্য কেন জানি এখনো ভালো কিছুর আশা করছেন। বাস্তবতা হলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখন শতছিন্ন বস্ত্রের মতো। কিন্তু সরকার মনে হয় এই সবকিছুকে পাত্তাই দিচ্ছে না। কারণ তার আত্মবিশ্বাসের মাত্রা এমনই।
পাকিস্তানের অর্থনীতির বেহাল ও রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে এবং জনগণের মেজাজ বুঝতে বিশ্বাসযোগ্য ও সাম্প্রতিক জনমত জরিপ না হওয়ায়, এটা বলা যায় যে পিএমএল-এনের আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি জনসমর্থন নয়। এখানে অন্য কারণ থাকতে পারে।
২০১৭ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নওয়াজ শরিফ গণতন্ত্রকে কার্যকর এবং দেশকে সংকট থেকে বের করে আনার জন্য একটি ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর আহ্বান জানিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের একটি বিচারিক আদেশের মাধ্যমে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ এবং অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করা হয়।
ইমরান খানের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ প্রশস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের নওয়াজ শরিফ বারবার আহ্বান করেছেন, তাঁরা তাঁর যে ক্ষতি করেছেন, তা পূরণের জন্য এবং তাঁর ও তাঁর দলের প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে তা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য। তিনি দায়ী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম নিতেও পিছপা হননি।
যদিও নওয়াজ শরিফকে চিকিৎসার জন্য কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে ২০১৯ সালের নভেম্বরে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর জন্য তাঁর আহ্বানে কেউ কান দেয়নি। ২০২১ সালের অক্টোবরে কিছুটা পরিবর্তন আসে।
এটি ঘটে যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং সেনাপ্রধানের মধ্যে মতপার্থক্যের প্রথম লক্ষণ ফুটে ওঠে। এই সেনাপ্রধানকে অনেকে ইমরানের হিতৈষী হিসেবে দেখেছিলেন। দুজনের মধ্যে মিল-মহব্বত বর্ণনা করতে গিয়ে ইমরান খান সেম পেজ বা যমজ ভাই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু সেই পৃষ্ঠা তখন ছিঁড়ে যায় এবং পরে হাম্পটি ডাম্পটির মতো ইমরানের ভয়ানক পতনের পর
আর তাঁদের মিল হয়নি।
ইমরান খানের পতনের কারণ ছিল সামরিক বদলি এবং পোস্টিং সিস্টেমের ব্যাপারে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রীর ‘হস্তক্ষেপ’। পাকিস্তানের নিয়ম অনুযায়ী, সেনাপ্রধানের পরামর্শ মেনে গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান পদে নিয়োগ দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ইমরান খান আইএসআইয়ের প্রধান পদে সেনাপ্রধানের পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে দেরি করছিলেন। এ নিয়ে ইমরান খান ও সেনাপ্রধানের সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়।
ইমরান খান এ ব্যাপারে রাজি হতে গড়িমসি করার পেছনে যুক্তি দেখাচ্ছিলেন, আইএসআই প্রধানের আফগানিস্তান বিষয়ে অভিজ্ঞতা। তিনি বলেছিলেন যে প্রতিবেশী দেশ থেকে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন বাহিনীর চলে যাওয়া, পশ্চিমাপন্থী শাসনের পতন এবং কাবুলে তালেবানদের অগ্রযাত্রার মুখে আফগান বাহিনীর পতনের সঙ্গে তাঁর গোয়েন্দা বাহিনীর দক্ষতার খুব প্রয়োজন ছিল।
তখন বাস্তবতা একটু ভিন্ন ছিল। তৎকালীন সেনাপ্রধানের সঙ্গে তাঁর টানাপোড়েনের বিষয়টি অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর মিডিয়াকে দেওয়া ডজনখানেক সাক্ষাৎকারে বেরিয়ে আসতে থাকে। যদিও ইমরান অনাস্থা ভোট এড়াতে অসাংবিধানিক পন্থা নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
ইমরান খান খোলাখুলি স্বীকার করেছেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইজ হামিদের অধীনে গোয়েন্দা সংস্থাটি তাঁর দুর্বল জোটকে একত্র করে চাবুক চালানোর জন্য দুর্দান্ত কাজ করেছে। তিনি গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য ছাড়া বাজেট পাস করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সংসদ সদস্যের সমর্থন জোগাড় করতে পারেননি। তিনি আরও চেয়েছিলেন, তাঁর গোয়েন্দা বাহিনী দুর্নীতিবিরোধী ভূমিকার আড়ালে তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের নিপীড়ন আরও কঠোর করুক।
যদিও এ ধরনের কোনো উদ্দেশ ছিল বলে ইমরান খান অস্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের সঙ্গে তাঁর যে সম্পর্ক তা কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ থেকে বোঝা যায়, ইমরান চেয়েছিলেন ২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়ার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করার পর ফাইজ হামিদকে সেনাপ্রধান করবেন।
সেনাপ্রধান যথেষ্ট বুদ্ধিমান। তিনি বুঝতে পারছিলেন, কী ঘটছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী ইমরান নতজানু হয়েছিলেন এবং একজন নতুন গোয়েন্দাপ্রধান নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে তা সংসদে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটকে সমর্থন করা থেকে সেনাপ্রধানকে বিরত রাখতে পারেনি।
এটা স্পষ্ট যে তিনি সম্ভবত আরেক মেয়াদের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে উভয় পক্ষের সঙ্গে খেলছিলেন। এর জন্য তিনি শাহবাজ শরিফ সরকারকে চাপ দিয়েছিলেন বলে বোঝা যায়। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের উত্তেজনা সত্ত্বেও, যখন পিএমএল-এন নেতৃত্বাধীন জোটের ভাগ্য নিয়ে জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে, তখন নওয়াজ শরিফ তাঁর অবস্থান ধরে রেখেছিলেন এবং তাঁর ছোট ভাইকে মনোবল অটুট রাখতে বলেছিলেন। আর সেনাপ্রধান হিসেবে সবচেয়ে সিনিয়র থ্রি-স্টার পাওয়া জেনারেলকে নিয়োগ দিতে বলেছিলেন।
ক্ষমতা হারানো এবং প্রত্যাবর্তনের আশা ইমরান খানকে ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি তাঁর আশপাশের কিছু লোকের এবং বিদেশি একদল ইউটিউবারের কাছ থেকে সস্তা পরামর্শও পেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সাবেক ক্যাপ্টেন ও মেজর ছিলেন, বাস্তবতা সম্পর্কে যাঁদের সামান্য কোনো জ্ঞান নেই।
তাঁরা তাঁকে এমন আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিলেন যেন ইমরানের টিকিটিও কেউ ছুঁতে পারবে না। তাঁকে গ্রেপ্তার বা শাস্তি দেওয়ার মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে দেশে অভ্যুত্থান হবে। তাঁকে সেই ‘বিপ্লব’-এর নেতৃত্ব দিতে হবে। তিনি তাঁদের বিশ্বাস করেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে ইমরানের কার্যকলাপ থেকে তেমনটাই সবাই দেখতে পায়।
ঘটনাপরম্পরায় পরবর্তী নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কাজ সহজ হয়েছে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু গলফপ্রিয় সেনাকর্তারা পিএমএল-এন দলের জন্য একই গর্ত খুঁড়ে রাখবেন, যেমনটা ২০১৮ সালে ইমরানের দলের জন্য করেছিলেন। এ অবস্থায় পিএমএল-এন দলের আত্মবিশ্বাস বিস্ময়কর বটে। অবশ্য আমরা অনেকেই এ ব্যাপারটা আগে থেকেই দেখে আসছি।
লেখক: ডন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক
(পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
সম্ভবত পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এমন কিছু জানে, যা আমরা জানি না। ফলে দলটির আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। জাতীয় পরিষদ ভেঙে যাওয়ার আর দুই সপ্তাহ বাকি, পিএমএল-এনের সরকার একটি ‘নিরপেক্ষ’ তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের জন্য পথ প্রশস্ত করছে, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করবে।
আপনারা দেখুন পাঞ্জাব প্রদেশের চাশমায় লক্ষকোটি রুপির চাশমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে সরকারের অনুমোদন এবং কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই সংসদে তা পাস হওয়া সত্যিই বিস্ময় জাগায়। যেখানে কিনা শাহবাজ শরিফের জোট সরকারকে পাকিস্তানের নজিরবিহীন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে, এর মধ্যে অর্থ পরিশোধের সংকটও রয়েছে।
সংসদে প্রণীত কিছু আইন মানবাধিকারকর্মীদের ক্ষুব্ধ করেছে এবং স্বল্পসংখ্যক সংসদ সদস্য কেন জানি এখনো ভালো কিছুর আশা করছেন। বাস্তবতা হলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখন শতছিন্ন বস্ত্রের মতো। কিন্তু সরকার মনে হয় এই সবকিছুকে পাত্তাই দিচ্ছে না। কারণ তার আত্মবিশ্বাসের মাত্রা এমনই।
পাকিস্তানের অর্থনীতির বেহাল ও রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে এবং জনগণের মেজাজ বুঝতে বিশ্বাসযোগ্য ও সাম্প্রতিক জনমত জরিপ না হওয়ায়, এটা বলা যায় যে পিএমএল-এনের আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি জনসমর্থন নয়। এখানে অন্য কারণ থাকতে পারে।
২০১৭ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নওয়াজ শরিফ গণতন্ত্রকে কার্যকর এবং দেশকে সংকট থেকে বের করে আনার জন্য একটি ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর আহ্বান জানিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের একটি বিচারিক আদেশের মাধ্যমে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ এবং অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করা হয়।
ইমরান খানের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ প্রশস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের নওয়াজ শরিফ বারবার আহ্বান করেছেন, তাঁরা তাঁর যে ক্ষতি করেছেন, তা পূরণের জন্য এবং তাঁর ও তাঁর দলের প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে তা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য। তিনি দায়ী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম নিতেও পিছপা হননি।
যদিও নওয়াজ শরিফকে চিকিৎসার জন্য কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে ২০১৯ সালের নভেম্বরে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর জন্য তাঁর আহ্বানে কেউ কান দেয়নি। ২০২১ সালের অক্টোবরে কিছুটা পরিবর্তন আসে।
এটি ঘটে যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং সেনাপ্রধানের মধ্যে মতপার্থক্যের প্রথম লক্ষণ ফুটে ওঠে। এই সেনাপ্রধানকে অনেকে ইমরানের হিতৈষী হিসেবে দেখেছিলেন। দুজনের মধ্যে মিল-মহব্বত বর্ণনা করতে গিয়ে ইমরান খান সেম পেজ বা যমজ ভাই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু সেই পৃষ্ঠা তখন ছিঁড়ে যায় এবং পরে হাম্পটি ডাম্পটির মতো ইমরানের ভয়ানক পতনের পর
আর তাঁদের মিল হয়নি।
ইমরান খানের পতনের কারণ ছিল সামরিক বদলি এবং পোস্টিং সিস্টেমের ব্যাপারে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রীর ‘হস্তক্ষেপ’। পাকিস্তানের নিয়ম অনুযায়ী, সেনাপ্রধানের পরামর্শ মেনে গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান পদে নিয়োগ দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ইমরান খান আইএসআইয়ের প্রধান পদে সেনাপ্রধানের পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে দেরি করছিলেন। এ নিয়ে ইমরান খান ও সেনাপ্রধানের সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়।
ইমরান খান এ ব্যাপারে রাজি হতে গড়িমসি করার পেছনে যুক্তি দেখাচ্ছিলেন, আইএসআই প্রধানের আফগানিস্তান বিষয়ে অভিজ্ঞতা। তিনি বলেছিলেন যে প্রতিবেশী দেশ থেকে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন বাহিনীর চলে যাওয়া, পশ্চিমাপন্থী শাসনের পতন এবং কাবুলে তালেবানদের অগ্রযাত্রার মুখে আফগান বাহিনীর পতনের সঙ্গে তাঁর গোয়েন্দা বাহিনীর দক্ষতার খুব প্রয়োজন ছিল।
তখন বাস্তবতা একটু ভিন্ন ছিল। তৎকালীন সেনাপ্রধানের সঙ্গে তাঁর টানাপোড়েনের বিষয়টি অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর মিডিয়াকে দেওয়া ডজনখানেক সাক্ষাৎকারে বেরিয়ে আসতে থাকে। যদিও ইমরান অনাস্থা ভোট এড়াতে অসাংবিধানিক পন্থা নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
ইমরান খান খোলাখুলি স্বীকার করেছেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইজ হামিদের অধীনে গোয়েন্দা সংস্থাটি তাঁর দুর্বল জোটকে একত্র করে চাবুক চালানোর জন্য দুর্দান্ত কাজ করেছে। তিনি গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য ছাড়া বাজেট পাস করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সংসদ সদস্যের সমর্থন জোগাড় করতে পারেননি। তিনি আরও চেয়েছিলেন, তাঁর গোয়েন্দা বাহিনী দুর্নীতিবিরোধী ভূমিকার আড়ালে তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের নিপীড়ন আরও কঠোর করুক।
যদিও এ ধরনের কোনো উদ্দেশ ছিল বলে ইমরান খান অস্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের সঙ্গে তাঁর যে সম্পর্ক তা কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ থেকে বোঝা যায়, ইমরান চেয়েছিলেন ২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়ার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করার পর ফাইজ হামিদকে সেনাপ্রধান করবেন।
সেনাপ্রধান যথেষ্ট বুদ্ধিমান। তিনি বুঝতে পারছিলেন, কী ঘটছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী ইমরান নতজানু হয়েছিলেন এবং একজন নতুন গোয়েন্দাপ্রধান নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে তা সংসদে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটকে সমর্থন করা থেকে সেনাপ্রধানকে বিরত রাখতে পারেনি।
এটা স্পষ্ট যে তিনি সম্ভবত আরেক মেয়াদের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে উভয় পক্ষের সঙ্গে খেলছিলেন। এর জন্য তিনি শাহবাজ শরিফ সরকারকে চাপ দিয়েছিলেন বলে বোঝা যায়। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের উত্তেজনা সত্ত্বেও, যখন পিএমএল-এন নেতৃত্বাধীন জোটের ভাগ্য নিয়ে জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে, তখন নওয়াজ শরিফ তাঁর অবস্থান ধরে রেখেছিলেন এবং তাঁর ছোট ভাইকে মনোবল অটুট রাখতে বলেছিলেন। আর সেনাপ্রধান হিসেবে সবচেয়ে সিনিয়র থ্রি-স্টার পাওয়া জেনারেলকে নিয়োগ দিতে বলেছিলেন।
ক্ষমতা হারানো এবং প্রত্যাবর্তনের আশা ইমরান খানকে ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি তাঁর আশপাশের কিছু লোকের এবং বিদেশি একদল ইউটিউবারের কাছ থেকে সস্তা পরামর্শও পেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সাবেক ক্যাপ্টেন ও মেজর ছিলেন, বাস্তবতা সম্পর্কে যাঁদের সামান্য কোনো জ্ঞান নেই।
তাঁরা তাঁকে এমন আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিলেন যেন ইমরানের টিকিটিও কেউ ছুঁতে পারবে না। তাঁকে গ্রেপ্তার বা শাস্তি দেওয়ার মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে দেশে অভ্যুত্থান হবে। তাঁকে সেই ‘বিপ্লব’-এর নেতৃত্ব দিতে হবে। তিনি তাঁদের বিশ্বাস করেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে ইমরানের কার্যকলাপ থেকে তেমনটাই সবাই দেখতে পায়।
ঘটনাপরম্পরায় পরবর্তী নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কাজ সহজ হয়েছে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু গলফপ্রিয় সেনাকর্তারা পিএমএল-এন দলের জন্য একই গর্ত খুঁড়ে রাখবেন, যেমনটা ২০১৮ সালে ইমরানের দলের জন্য করেছিলেন। এ অবস্থায় পিএমএল-এন দলের আত্মবিশ্বাস বিস্ময়কর বটে। অবশ্য আমরা অনেকেই এ ব্যাপারটা আগে থেকেই দেখে আসছি।
লেখক: ডন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক
(পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৬ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৬ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৬ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫