Ajker Patrika

‘রোগী হয়ে শুয়ে পড়’

মহাদেব সাহা
‘রোগী হয়ে শুয়ে পড়’

১৯৭১ সালের মার্চ মাসটা ছিল ঘোর লাগা। যাঁরা সে সময়টি পার করেছেন এই বাংলায়, তাঁরা জানেন অনিশ্চিত একের পর এক ঘটনা ঘটে যাচ্ছিল তখন। মহাদেব সাহাসহ ছয়-সাতজন ঢাকা শহরে যে মেসবাড়িটায় থাকতেন, সেটি ছিল গোলাকার। দরজা-জানালা বন্ধ থাকলে বোঝা যেত না, ঘরে কেউ আছে। সেখানেই ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পর্যন্ত ছিলেন তিনি। এর আগে সাতই মার্চ বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ ভাষণটি তাঁকে এতটাই মোহিত করেছিল যে তিনি পরে বুঝেছেন, সেটাই তাঁর কবিত্বশক্তিকে অনুপ্রাণিত করেছিল।

২৫ মার্চ রাত আটটার দিকে মেসে ফিরেছিলেন। আজিমপুরের ইপিআর হেডকোয়ার্টার্স ছিল মেসের কাছেই। সেখানে যখন অবিশ্রান্তভাবে গোলাগুলি চালাচ্ছে পাকিস্তানি সৈন্যরা, তখন যেন তারই মধ্যে বসে মৃত্যুর অপেক্ষা করছেন মহাদেব সাহা। মাঝে মাঝে কামানের গোলার শব্দে মনে হচ্ছিল, এই গোলাকার বাড়িটিকেই বুঝি উড়িয়ে দেবে এই গোলা। সারা রাত আতঙ্কের পর ভোর হলো। কারফিউ ছিল। কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। ২৭ মার্চ কারফিউ উঠে গেলে নির্মলেন্দু গুণ তাঁর মেস থেকে চলে এসেছেন মহাদেব সাহার মেসে।

২৭ মার্চ প্রেসক্লাবের দিকে যাচ্ছিলেন মহাদেব সাহা।

ঢাকা থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজছিলেন। শহীদ মিনারের কাছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে দেখা হলে গেল কবি আবুল হাসানের সঙ্গে।
হাসানকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে এগোলেন মহাদেব সাহা। গেলেন জিসি দেবের বাড়িতে। এরপর ফিরে এলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। সেখানে অজ্ঞান, অচেতন হয়ে পড়ে ছিলেন জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা।

হাসান তখন মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অপারেশন সার্চলাইটের ভয়াবহতা দেখে তিনি মহাদেব সাহাকে বললেন, ‘তুমিও একটা বেড নিয়ে হাসপাতালে থেকে যাও। রোগী হয়ে শুয়ে পড়। নইলে মারা পড়বে।’

মহাদেব সাহা ভাবলেন, এটা ঠিক হবে না। মিথ্যা রোগী সেজে থাকা নিরাপদ নয়। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন গ্রাম হয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাবেন। 

সূত্র: মহাদেব সাহা, কাজল ঘোষ সম্পাদিত স্মৃতির ঢাকা, পৃষ্ঠা ২০৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত