Ajker Patrika

মুরগির ঝোল

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ২৮
মুরগির ঝোল

যখন বিবিসিতে কাজ করতেন সৈয়দ শামসুল হক, তখন বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ইংরেজি অ্যানাউন্সার ছিলেন কিথ বোস্লে। তিনি ছিলেন কবি। পেঙ্গুইন থেকে তাঁর কবিতার বই বেরিয়েছে। সৈয়দ হকের সঙ্গে তাঁর প্রগাঢ় বন্ধুত্ব হয়ে গেল। রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ, সুধীন দত্ত, শামসুর রাহমানদের ভক্তি করতেন কিথ। যেদিন কিথ শুনলেন যে সৈয়দ হক সাত বছরের বিলেত বাস ছেড়ে দেশে ফিরে যাচ্ছেন, তখন তাঁর খুব মন খারাপ হলো। তিনি বললেন, ‘সাইয়েদ, দেশে ফেরার আগে আমি নিজের হাতে রান্না করে তোমাকে খাওয়াব। একেবারে সাধারণ খাবার।’

কিথ থাকতেন সাউথ লন্ডন থেকে ২০-২৫ মাইল দূরে। ব্রিটিশ রেলওয়েতে করে যেতে হয়। ছোট্ট স্টেশনে সৈয়দ হকের জন্য কিথ অপেক্ষা করছিলেন সাইকেল নিয়ে। সাইকেলের বাসকেটে দুটো লম্বা রুটি। বাড়ি এসে দেখা গেল কিথের পূর্ব ইউরোপীয় ফিয়াসে ছবি আঁকছেন। রান্নাঘরে টেবিলে পা ঝুলিয়ে গল্প করতে লাগলেন কিথ আর সৈয়দ হক। একটি মুরগি পড়ে আছে প্লেটে। একটা পানিভর্তি হাঁড়ি উঠেছে চুলোয়। তা ফুটে ওঠার পর তাতে হলুদ দেওয়া হলো। মুখে মালার্মের গল্প। তারপর বোদলেয়ার, রিলকে, হোল্ডারলিন। গল্প করছেন তাঁরা। এদিকে সৈয়দ হকের বুক কাঁপছে। এ আবার কী ধরনের রান্না। এটাই নাকি মেইন ডিশ! একটু পর ধনে ছেড়ে দেওয়া হলো পানিতে। মুখে মালার্মে, রিলকে, হঠাৎ তিনি বলছেন, ‘দাঁড়াও, হলুদ একটু কম হয়েছে!’

একসময় মুরগির টুকরোগুলো ছেড়ে দেওয়া হলো হাঁড়িতে। রসুনের গুঁড়া হাঁড়িতে পড়ল তার আগে। এই তরকারি দিয়ে রুটি খেতে হবে! কষানো হলো না, নাড়াচাড়া করা হলো না, কী করে এই খাদ্য পেটে ঢুকবে!

দেড় ঘণ্টা পর হাঁড়ির ভেতর থেকে মুরগির গন্ধ বের হতে থাকল। কিথ বললেন, ‘লাঞ্চ ইজ রেডি।’

ভয়ে ভয়ে রুটি মুরগির ঝোলে ভিজিয়ে সৈয়দ হক দেখেন, এ যে অমৃত!

এভাবেও সুস্বাদু রান্না হয়!

সূত্র: আনোয়ারা সৈয়দ হক, বাসিত জীবন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত