Ajker Patrika

ভাইয়ের খোঁজে

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ২৩
ভাইয়ের খোঁজে

অস্ত্র হাতে যারা যুদ্ধ করেছিলেন একাত্তরে, তাদের কাজের জায়গা ছিল সরাসরি রণাঙ্গন। তবে অন্যরা বিভিন্নভাবে যুদ্ধ করেছেন। জহির রায়হানের যুদ্ধটা ছিল ক্যামেরা হাতে। একাত্তরে তাঁর ক্যামেরা চিৎকার করে বলেছে, ‘এই জেনোসাইড বন্ধ করো।’

মুক্তিযুদ্ধের কিছু সময় আগে তৈরি ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি তাঁকে অনন্য করেছে। একটি পরিবারের কাহিনি দিয়ে তিনি একটি মুক্তিকামী দেশের কথা অনবদ্যভাবে তুলে এনেছিলেন।

বামপন্থার দিকে ঝোঁক ছিল জহির রায়হানের। পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। লেখার হাত ছিল খুব ভালো। ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘বরফ গলা নদী’, ‘হাজার বছর ধরে’সহ অনেকগুলো বইয়ের লেখক তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের সময়টা খুব সক্রিয়ভাবে কাটিয়েছেন। ২১ এপ্রিল তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে কুমিল্লা হয়ে ভারতে চলে যান। এরপর কলকাতায় বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পী এবং সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে ড. এ আর মল্লিক আর তিনি গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ লিবারেশন কাউন্সিল অব ইন্টেলিজেনশিয়া’। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নেন। দেশ স্বাধীন হলে তিনি আর দেরি করেননি। ১৮ ডিসেম্বর ফিরে আসেন। এসেই শুনলেন অগ্রজ শহীদুল্লা কায়সার নিখোঁজ। তিনি পাগলের মতো ভাইকে খুঁজে বেড়াতে লাগলেন। তাঁর উদ্যোগে গঠিত হয় ‘বুদ্ধিজীবী হত্যা তদন্ত কমিটি’। হানাদার বাহিনীর সদস্যদের নাম সংগ্রহ করতে থাকেন তিনি। সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ঘোষণা দেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন।

একটি বেনামি টেলিফোন পেয়েছিলেন জহির রায়হান। বলা হয়েছিল, মিরপুরে শহীদুল্লা কায়সার আছেন। সেনা ও পুলিশ বাহিনীর যৌথ দল গিয়েছিল সেখানে অস্ত্র উদ্ধার করতে। ভাইয়ের খোঁজে তাদের সঙ্গে সেখানে গেলেন জহির। যাওয়ার পর ঘাপটি মেরে পড়ে থাকা পাকিস্তানিদের দোসর বিহারি রাজাকারদের গুলির আঘাতে প্রাণ হারান জহির রায়হান। সেটি ছিল মিরপুর ১২ নম্বরের পানির ট্যাংকের পাশে। দিনটি ছিল ৩০ জানুয়ারি, ১৯৭২।

সূত্র: জুলফিকার আলী মানিক, নিখোঁজ নন, গুলিতে নিহত হয়েছিলেন জহির রায়হান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত