Ajker Patrika

কমিটি আছে, সভা নেই

আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ৩৩
কমিটি আছে, সভা নেই

দেশের অন্যতম বৃহত্তর উপজেলা মনিরামপুর। এখানকার পাঁচ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে একটি হাসপাতাল। এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে রয়েছে রোগীদের নানা অভিযোগ। হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে জেলা সদরে গিয়ে রোগীদের চিকিৎসক দেখাতে হয়। বাড়তি সময় নষ্টের সঙ্গে গুনতে হয় বাড়তি অর্থ। অথচ নানা সমস্যায় জর্জরিত হাসপাতালটির সেবার মান নিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকলেও দেড় বছরেও সভা হয়নি। ফলে সমস্যা আর সংকটের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, জনসংখ্যার অনুপাত বিবেচনায় ২০১৭ সালে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু নামেই বেড়েছে শয্যা সংখ্যা। লোকবল ও ওষুধের বরাদ্দ কোনো কিছুই বাড়ানো হয়নি।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় সেবার মান নিয়ে। তাঁদের অভিযোগ, এখানে চিকিৎসক থাকে তো ওষুধ থাকে না। আবার ওষুধ থাকে তো চিকিৎসক থাকে না। হাসপাতালটিতে নেই এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোর ব্যবস্থা। অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ দুই বছর ধরে। হাসপাতালের এই দৈন্যদশা দীর্ঘদিনের হলেও তা থেকে উত্তরণে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেই।

মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবার মান তদারকির জন্য রয়েছে ১৭ সদস্যের ব্যবস্থাপনা কমিটি। স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রমুখ রয়েছেন কমিটিতে। এই কমিটির কাজ হলো হাসপাতালের সেবার মান, রোগীদের ভালো–মন্দ সার্বিক বিষয় তদারকি করা। প্রতি তিন মাসে একবার হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালটিতে গত দেড় বছরেও কমিটির কোনো সভা হয়নি।

হাসপাতাল সূত্রের দাবি, করোনার কারণে এত দিন সভা বন্ধ ছিল। যদিও করোনার প্রভাব কমেছে দুই মাস পেরিয়েছে।

মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, ‘করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়নি। স্থানীয় সাংসদ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। সভাপতির উপস্থিতি ছাড়া সভা করা যায় না। সভাপতির সঙ্গে কথা বলে মাঝে একবার সভা করতে চেয়েছিলাম। পরে আর হয়নি। সামনে পূজার বন্ধ। এর পর সভার বিষয়ে সভাপতির সঙ্গে কথা বলব।’

ডা. শুভ্রা রানী বলেন, ‘২০১৭ সালে মনিরামপুর হাসপাতাল ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। তখন থেকে শুধু বাড়তি রোগীদের খাবারের অনুমতি পেয়েছি। অতিরিক্ত চিকিৎসক ও নার্স পাইনি।’

এ দিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ শয্যার দূরের কথা মনিরামপুর হাসপাতালে নেই ৩১ শয্যার লোকবল বা সুযোগ–সুবিধা। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ খালি পড়ে আছে। মেডিসিন, প্রসূতি, সার্জিক্যাল ও অ্যানেসথেসিয়া ৪ পদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই দীর্ঘদিন। গত সপ্তাহে একজন অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক যোগ দেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটে মনিরামপুর হাসপাতালে দুই বছর ধরে হয় না অন্তঃসত্ত্বা নারীর অস্ত্রোপচারসহ (সিজার) কোনো অস্ত্রোপচার। বাইরের হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক এনে সপ্তাহে একদিন সিজার চালু থাকলেও সেটা নিয়মিত হয়নি। গত ছয় মাসে একজন করে এবং গত মাসে দুজন প্রসূতির সিজার হয়েছে।

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মনিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, ‘কবে হাসপাতালের সভায় বসেছি মনে নেই। আমি মাঝে মধ্যে হাসপাতালে গিয়ে খোঁজখবর নিই।’

নাজমা খানম বলেন, ‘করোনার মধ্যে তো আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপজেলা পরিষদের সভা করেছি। হাসপাতালের সভা করতে তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।’

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘হাসপাতালে কী কী সমস্যা আছে। রোগীরা কেমন চিকিৎসা পাচ্ছেন। কমিটির সভা নিয়মিত হলে এসব বিষয়ে জানতে পারতাম। তার পর সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা যেত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ: এক্সিম ব্যাংকের নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৩০ জনের নামে মামলা

‘কথিত আওয়ামী লীগ সদস্যদের’ বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার বিষয়ে ভারত অবহিত নয়: মুখপাত্র

কলকাতার নিউটাউনে বসে আয়েশ করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

চাকরি না ছেড়েই বিদেশে পাড়ি, ৪৮ শিক্ষক বরখাস্ত

ভিসা ছাড়া পাকিস্তান সফরের চুক্তি হতে পারে শিগগির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত