Ajker Patrika

সুকুমারের যুক্তি

আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২১, ১১: ০৩
সুকুমারের যুক্তি

বহু প্রতীক্ষার পর ‘ভারতকোষ’-এর প্রথম খণ্ড বের হয়েছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা খুব খুশি। সম্পাদকমণ্ডলীর একটি বৈঠক হবে। তাই সবাই এসেছেন। কত পরিশ্রমই না করতে হয়েছে এই গবেষণালব্ধ বইটি তৈরি করতে।

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রয়েছেন সভায়। বৈঠক শুরু হয়েছে। সুশীল কুমারদের হাতে ছিল বইটি। সেটা চলে এল সুনীতিকুমারের হাতে। সবাই বলছে, এত দেরি হচ্ছে কেন প্রকাশ করতে?

‘ভারতকোষ’-এর কাজ শুরু হয়েছিল ভারতের সব ভাষাতেই। শুধু মহারাষ্ট্রই ভারতকোষ বের করে ফেলেছে তাদের ভাষায়। বাংলায় যেটা হয়েছে, সেটাকে নিয়ে তারিফ করাই যায়—এই মত সুনীতিকুমারের।

ঠিক সে সময় ঘরে এসে ঢোকেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ছাত্র, এখন নিজেও বড় পণ্ডিত সুকুমার সেন। এসেই ঘরে বোমা ফাটান। বলেন, ‘এই বই নিয়ে আপনারা গর্ব করছেন? আপনাদের তো লজ্জা হওয়া উচিত!’

সুকুমারের হাতেও একটি ‘ভারতকোষ’। তিনি বলে চলেন, ‘দেখুন, এই পৃষ্ঠাটা খুলুন।’ বলে একের পর এক নানা পৃষ্ঠায় যে ভুলগুলো আছে, তা বলে যেতে থাকেন। সুনীতিকুমার তাঁর ছাত্রের কথা শুনছেন মাথা নিচু করে। মাঝে একবার শুধু বললেন, ‘না না, এত বড় কাজে এ রকম দু-চারটা থাকে...।’

হুংকার দিয়ে ওঠেন সুকুমার সেন, ‘কেন থাকবে? এ তো একটা কোষগ্রন্থ। আর এত এত যোগ্য সম্পাদক আছেন এখানে, একটাও ভুল থাকবে কেন?’

মিহি গলায় সুনীতি বলেন, একটা শুদ্ধিপত্র জুড়ে দিলেই হবে। মহারাষ্ট্রের ভারতকোষের তুলনায় এটা বহুগুণ ভালো।’

সুকুমার বলেন, ‘আপনি মহারাষ্ট্র মহারাষ্ট্র করছেন কেন? ওখানে কী আছে? ওখানে কি সুনীতি চাটুজ্জে আছে?’

সুনীতিকুমারকে মানতে হলো, ওখানে কোনো সুনীতি চাটুজ্জে নেই।

সুকুমার বলে চলেন, ‘আমাদের তো গর্ব সেটা। মহারাষ্ট্রের সঙ্গে কেন তুলনা করব আমরা?’

সবাই চুপ হয়ে গেল সুকুমারের যুক্তিতে।

সূত্র: শঙ্খ ঘোষের গদ্যসংগ্রহ ৮, পৃষ্ঠা ৩৪০-৩৪২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত