Ajker Patrika

বার্ন হাসপাতালের অভাবে রোগীর মৃত্যু বেড়ে যায়

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
বার্ন হাসপাতালের অভাবে রোগীর মৃত্যু বেড়ে যায়

একটি বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতালের অভাবে চট্টগ্রামে আগুনে পোড়া অনেক রোগী ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও কারও কারও মৃত্যু হয়। অথচ এসব রোগী তৎক্ষণাৎ উন্নত চিকিৎসা পেলে বেঁচে যেতেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। মারা যাওয়ার আরও একটি কারণ সংক্রমণ। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে ছয়-সাত ঘণ্টা সময় লাগে। এর মধ্যে সংক্রমণ হয়ে কেউ কেউ মারা যান বলে মত দিয়েছেন তাঁরা।

চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও হাসপাতালে যে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ রয়েছে, সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। উন্নত মানের সরঞ্জাম নেই। এ ছাড়া এ বিভাগের অধীনে আলাদা কোনো ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটও (আইসিইউ) নেই। ফলে আগুনে ১০ শতাংশের বেশি পুড়লে কোনো রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারেন না তাঁরা। কারণ এসব রোগীকে আইসিইউতে নিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। এ ছাড়া মাত্র ২৬টি শয্যা রয়েছে যা শহরের ৮৭ লাখ মানুষের বিপরীতে খুবই অপ্রতুল।

চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পোড়া রোগীদের শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেসব রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’

চট্টগ্রামে বার্ন হাসপাতালের অভাবে রোগী মারা যাওয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি সম্প্রতি বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণে আহত রোগীদের দেখতে এসে চমেকে সাংবাদিকদের বলেন, চমেকে চিকিৎসকেরা যেভাবে সেবা দিচ্ছেন তা ঠিক আছে। কিন্তু এখানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। এখানে যদি পর্যাপ্ত সুবিধা থাকলে গুরুতর পোড়া রোগীদের ঢাকায় নিয়ে যেতে হতো না। কারণ বার্ন রোগীদের চিকিৎসা খুবই জটিল। যত আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা করা যায়, ততই রোগীর জন্য ভালো।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে জানান, বড়দের ক্ষেত্রে শরীরের ১৫ শতাংশ এবং শিশুদের ক্ষেত্রে যদি শরীরের ১০ শতাংশ পুড়ে যায় তাহলে তা ঝুঁকিপূর্ণ বলে ধরা হয়। তবে কম বয়সী শিশু বা নবজাতক এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই শতাংশের চেয়ে কম হলেও অনেক সময় বিপজ্জনক হতে পারে। মূলত পোড়া অংশের পরিমাণ যত বেশি হবে মৃত্যুর আশঙ্কা তত বেড়ে যাবে।

ডা. সামসুদ্দিন বলেন, আগুনে পোড়া রোগীদের একটি টাইম পিরিয়ড থাকে। বেশি সময়ক্ষেপণ করলে ঢাকায় নেওয়ার পথে রোগী মারা যাবেন, যেটি স্বাভাবিক। কারণ তিন মিনিটের বেশি শ্বাসকষ্টে থাকলে আগুনে পোড়া রোগীদের বাঁচানো যায় না। কেটিএস গার্মেন্টসের আগুনে পোড়া রোগীদের দেখেছি, কম পুড়েও শ্বাসকষ্টের কারণে মারা গেছেন। বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল না থাকলে যতই ভালো চিকিৎসক হোক, সুযোগ-সুবিধার অভাবে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পান না। এ জন্য রোগীরা মারা যান।

চমেকের বার্ন ইউনিটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আগুনে পোড়া রোগীদের প্রচুর সময় দিতে হয়, যা ওইখানে সম্ভব না। অক্সিজেন দিতে হয়, সময় দিতে হয়।

এদিকে যখনই কোনো বড় দুর্ঘটনা হয়, তখনই সামনে আসে চট্টগ্রামের বার্ন হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা। ছয় বছর আগে চীনের সহায়তায় চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও চাহিদামতো জায়গা দিতে না পারায় তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণের পর ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, এখন নতুন করে চারটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি স্থান অর্থ সহায়তাকারী দেশ চীনের পছন্দ হয়েছে। সেটি হলো চমেক হাসপাতালের প্রধান ছাত্রাবাসের কাছে গোয়াছি বাগান এলাকায়। শিগগিরই চীন থেকে প্রতিনিধি দল জায়গা পরিদর্শন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘তুমি ঘুমাও কীভাবে’, সৌদি যুবরাজকে নিয়ে ট্রাম্পের বিস্ময়

বিদ্যালয়ে সময় দেন না শিক্ষক, ইউএনওর কাছে অভিযোগ করায় সহকর্মীকে মারধর

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

এনবিআর বিলুপ্তির জেরে প্রায় অচল দেশের রাজস্ব কর্মকাণ্ড

দুটি নোবেলের গৌরব বোধ করতে পারে চবি: প্রধান উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত