Ajker Patrika

মাথাব্যথার আরেক নাম ওয়াগনার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ২৫
মাথাব্যথার আরেক নাম ওয়াগনার

যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে রাশিয়ার এ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্বের বিষয় সম্ভবত ইউক্রেন। কিন্তু আধা সামরিক রুশ বেসরকারি সামরিক কোম্পানি ‘ওয়াগনার গ্রুপ’ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ১৩ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইউক্রেন, লিবিয়া এবং সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এ নিষেধাজ্ঞা।

ইইউর নিষেধাজ্ঞার ফলে যেসব দেশ ওয়াগনার গ্রুপের সঙ্গে কাজ করে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশগুলো আরও কোণঠাসা হবে। বিশেষত আফ্রিকার মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র (সিএআর), মালির মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, যারা মোটাদাগে আন্তর্জাতিক খাদ্য, চিকিৎসা এবং সামরিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল, তাদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে।

২০১৪ সাল থেকে সিএআরে সবচেয়ে বেশি ১৬০ কোটি ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে ইইউ। এ অবস্থায় মানবিক বা সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিলে ইইউ বা ইউরোপীয় দেশগুলোর সহায়তানির্ভর সিএআরসহ অন্য আফ্রিকার দেশগুলোর পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কারণ, তারা সহায়তা বন্ধ করে দিলে এসব দেশের অস্থিতিশীল সরকারগুলো বিদ্রোহীদের দমন করতে ওয়াগনার গ্রুপ বা এ রকম ভাড়াটে সামরিক কোম্পানির দিকে আরও বেশি পরিমাণে ঝুঁকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির এক বিশ্লেষণে।

উদাহরণস্বরূপ পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির কথা বলা যায়। দেশটিতে বর্তমানে ৫ হাজার ফরাসি সৈন্য রয়েছে। দেশটির সাহেল অঞ্চলে তারা স্থানীয় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সাম্প্রতিক এক ঘোষণায় দেশটিতে সংগ্রামরত নিজেদের সৈন্যসংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথা জানিয়েছে ফ্রান্স। এরপর ওয়াগনার গ্রুপ থেকে ১ হাজার সৈন্য ভাড়া করার ঘোষণা দেয় মালে সরকার।

ওয়াগনার গ্রুপের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্ক থাকার কথা শোনা যাচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু ১৩ ডিসেম্বরের আগে এত দিন কেউ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

ওয়াগনারের সঙ্গে রুশ সরকারের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে বিদেশে কোম্পানিটি কার্যক্রমের মাধ্যমে অন্যায় কিছু করছে না বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেন পুতিন। রাশিয়ার আইন না ভেঙে যে কোনো রুশ কোম্পানি বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে কাজ করতে পারে বলেও জানান তিনি।

ওয়াগনার গ্রুপ প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৪ সালে। তখন পূর্ব ইউক্রেনে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দেয় ওয়াগনার। পুতিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও রুশ ব্যবসায়ী ইয়েভজেনি প্রিগোজিন এ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বলে ধারণা করা হয়।

বিবিসি ও রয়টার্সের তথ্যমতে, উল্লিখিত দেশগুলো ছাড়া সুদান ও মোজাম্বিকেও তৎপর রয়েছে ওয়াগনার গ্রুপ। তারা এসব দেশের সরকারি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে সরাসরি অংশ নেয়। তা ছাড়া, রুশ নাগরিক ছাড়া সিরিয়া এবং লিবিয়া থেকেও গ্রুপটি লোকবল সংগ্রহ করে। চলতি বছরের আগস্টে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৫০০ জনের বেশি মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে ওয়াগনার গ্রুপ। এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের মানবাধিকার লঙ্ঘন, ধর্ষণ ও অপহরণেরও অভিযোগ রয়েছে গ্রুপটির বিরুদ্ধে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত