Ajker Patrika

গরিবের চাল ডিলারের পেটে

সম্পাদকীয়
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ০৭: ২৮
গরিবের চাল ডিলারের পেটে

জালিয়াতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অন্যকে ঠকিয়ে নিজে লাভবান হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। দিন দিন এ ধরনের প্রবণতা বাড়ছে সমানুপাতিক হারে। আমাদের দেশে দুস্থ ও গরিবদের সরকারি বরাদ্দের চাল আত্মসাতের ঘটনা মাঝেমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ রকম ঘটনার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এবার অভিযোগ উঠেছে একজন ডিলারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় ‘৫০০ জন গরিবের চাল ডিলারের পেটে, মামলা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ধূবিল ইউনিয়নের তালতলা অঞ্চলে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির দায়িত্ব পেয়েছিলেন ডিলার আবুল হাসেম। তিনি প্রায় ৫০০ কার্ডধারীর চাল আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চাল আত্মসাতের অভিযোগে গত সোমবার তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন চাল তদারককারী এক কর্মকর্তা। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেছেন, সরকার দুই মাসের দুই বস্তা চাল একসঙ্গে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে; কিন্তু ওই ডিলার তাঁদের এক বস্তা করে চাল দিয়ে পরে দেখা করতে বলেন। চাল দেওয়ার সময় দুই কাগজে স্বাক্ষর নেন। পরে তাঁর দেওয়া তারিখ অনুযায়ী চাল নিতে গেলে ৫০০ টাকা দিয়ে বলেন, চাল শেষ, টাকা নিয়ে বাড়ি যাও।সরকার তো দুস্থ ব্যক্তিদের কষ্ট লাঘবের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় গরিবদের জন্য সরকারিভাবে ১৫ টাকা কেজিতে চাল দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল কার্ডের মাধ্যমে এই কার্যক্রম চলছে। সরকারের এই কর্মসূচির কারণে অনেক দরিদ্র মানুষ উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু কথা হলো, যাঁদের দায়িত্ব এই কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার, তাঁদের কাউকে কাউকে সারাক্ষণ সচেষ্ট থাকতে দেখা যায় নিজ নিজ আখের গোছাতে। বলার অপেক্ষা রাখে না, নৈতিক অবক্ষয় সীমা ছাড়িয়ে যাওয়াতেই এমনটা ঘটছে।

যদিও অভিযুক্ত ডিলার বলেছেন, ‘আমার পরিচিত কিছু কার্ডধারী এক বস্তা করে চাল নিয়ে আরেক বস্তা বিক্রি করেছে।’ অপর দিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি ও আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর ডিলারশিপ বাতিল করা হবে।’ ডিলার না ওই কর্মকর্তার কথা সত্যি, তা আগে তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে। তার চেয়েও জরুরি, প্রকৃত অপরাধীকে দেশের প্রচলিত আইনে বিচারের সম্মুখীন করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা। শুধু ডিলারশিপ বাতিল করে সমস্যার সমাধান করা যাবে না।

দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে জরুরি হলো জবাবদিহি নিশ্চিত করা। কিন্তু তা না করার কারণে এসব ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঝখান থেকে যাঁদের জন্য সরকারি চাল বরাদ্দ করা হয়, তাঁরা তা না পেয়ে বঞ্চিতই থেকে যান। এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অপরাধীকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত