Ajker Patrika

কাজ নিয়ে প্রকৌশলীর লুকোচুরি

বদরুল ইসলাম মাসুদ, বান্দরবান
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ২০
কাজ নিয়ে প্রকৌশলীর লুকোচুরি

আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই রাস্তার কাজ শুরু করেছেন কয়েকজন শ্রমিক। কোনোমতে রাস্তার ইট সরানোর কাজ চলছে। দেখা নেই ঠিকাদারের, নেই কর্তৃপক্ষও। দেখভালের দায়িত্বে থাকা বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কিছু জানেন না। সম্প্রতি বান্দরবান সদরের বালাঘাটা থেকে বাগমারা সড়কের উজি হেডম্যানপাড়া-বাগমারা অংশে এমন অবস্থাই দেখা গেছে।

কাজের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী আমানুর রহমান বলেন, তিনি জানেন না কোন ঠিকাদার কাজ পেয়েছেন। আদৌ কাজ শুরু হয়েছে কি না, তা-ও জানাতে পারেননি তিনি। অথচ ওই সড়কে এলজিইডির একটিমাত্র কাজ চলছে। উপসহকারী প্রকৌশলী বলেন, ‘কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম না বললে তিনি কাজ সম্পর্কে কিছুই বলবেন না।’

এদিকে শ্রমিকদের কাছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে তাঁরা জানান, এ সম্পর্কে তাঁরা জানেন না। তবে রাঙামাটির ঠিকাদার মো. আজমের শ্রমিক হিসেবেই তাঁরা কাজ করছেন।

শ্রমিকদের কাছ থেকে পাওয়া মোবাইল ফোন নম্বরে মো. আজমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে স্বীকার করেন, কাজটি তিনি পেয়েছেন। কয়েক দিন আগে (জানুয়ারির শেষ দিকে) কাজ শুরু করেছেন।

বান্দরবান এলজিইডি সূত্র জানা গেছে, বালাঘাটা-বাগমারা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কের উজি হেডম্যানপাড়া থেকে বাগমারা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তায় সিলকোট ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হচ্ছে। প্রায় এক কোটি টাকা বরাদ্দে এই কাজ পেয়েছে রাঙামাটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমডি রাসেল। তবে কাজটি মেসার্স এমডি রাসেল নিজে না করে তাঁর পক্ষে মো. আজম এ কাজ করছেন।

সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী ও বান্দরবান এলজিইডির তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন বলেন, উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে আমানুর রহমানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম যেমন জানা প্রয়োজন, তেমনি ঠিকাদারের নামও জানা প্রয়োজন। এই প্রকৌশলী আরও বলেন, সাধারণত ঠিকাদারের নামেই কাজটি পরিচালিত হয়। আর গণমাধ্যমকে সঠিক তথ্য জানানোও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। উপসহকারী প্রকৌশলী যদি তথ্য দিতে গড়িমসি করেন, তবে তা ঠিক হয়নি।

সম্প্রতি উজি হেডম্যানপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, দু-তিনজন শ্রমিককে রাস্তায় কাজ করতে দেখা যায়। শ্রমিকেরা জানান, এলজিইডির কোনো কর্মকর্তা (প্রকৌশলী) কাজের স্থানে যাননি।

স্থানীয় বাসিন্দা নুচিংপ্রু, বাচিং মং মারমাসহ কয়েকজন জানান, সড়ক থেকে আগের ইট তুলে নেওয়া হচ্ছে, নিম্নমানের বালু দেওয়া হচ্ছে। কাজটি তদারকি করার জন্য ঊর্ধ্বতন কাউকে দেখা যায়নি। ফলে কাজটি নিম্নমান ও যেনতেনভাবে হবে বলে তাঁরা সংশয় প্রকাশ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উজি হেডম্যানপাড়া থেকে বাগমারা পর্যন্ত রাস্তার কাজ শুরুর পর উপসহকারী প্রকৌশলী সেখানে যাননি। সাধারণত উপসহকারী প্রকৌশলীর কাজটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করার কথা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমানুর রহমানের ‘সম্পর্কের’ কারণে গণমাধ্যমের কাছে কাজটির তথ্য দিতে গড়িমসি করেন।

কাজের দায়িত্বে থাকা মো. আজম জানান, তিনি রাঙামাটির মানুষ। টেন্ডারের মাধ্যমে তিনি কাজটি পেয়েছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, শ্রমিকেরা কাজ শুরু করলেও তিনি এখনো সরাসরি কাজের স্থানে আসেননি। কয়েক দিন পর আসতে পারেন।

এলজিইডি সূত্র জানায়, উপসহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন নিয়ে কর্তৃপক্ষ ‘সন্তুষ্ট’ নয়। এর আগেও কয়েকবার এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমানুর রহমানকে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের তাগিদ দিয়ে সতর্ক করে দেন।

এলজিইডির কাজ করা কয়েকজন ঠিকাদার নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, উপসহকারী প্রকৌশলী আমানুর রহমান কাজ ভালো বোঝেন না। তারপরও কেন যে তিনি সদর উপজেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিয়োজিত, এটা তাঁদের বোধগম্য নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত