কোণঠাসা ত্যাগী আ.লীগ নেতারা

ময়মনসিংহে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন সামনে রেখে লবিং- তদবিরে এগিয়ে বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতারা। কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন ত্যাগী ও জনপ্রিয় প্রার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে দলের পেছনে শ্রম-ঘাম দিয়েও মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন এসব প্রার্থী। তবে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের দাবি, যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন বোর্ড মনোনয়ন দেবে।

ইতিমধ্যে তারাকান্দায় ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হযেছ। অপরদিকে তফসিল ঘোষণার আগেই সরগরম হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহের গফরগাঁও। সভা-সমাবেশ ও মিছিল-মিটিং করে স্থানীয় সাংসদ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নজরে আসার চেষ্টা করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। আবার লবিং ও তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেকে।

গফরগাঁওয়ের রসুলপুর ইউপিতে পাঁচ থেকে সাতজন নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী। মনোনয়নপ্রত্যাশী ও সাবেক চেয়ারম্যান মঈন সরকার বলেন, গত নির্বাচনে আমাকে জোর করে ফেল করানো হয়েছে। এবার অনেকেই দলীয় মনোনয়ন চাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির অন্যতম সদস্য মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে রেজাউল মুস্তফা মন্টু রয়েছেন। আমি আশা করব হাইকমান্ড স্বচ্ছ ও জনপ্রিয় লোককেই মনোনয়ন দেবে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী রেজাউল মুস্তফা মন্টু বলেন, মনোনয়নের দৌড়ে আমি এগিয়ে রয়েছি। তাই একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। আমার বাবা কোনো দিন স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেননি।

ওই ইউপির চেয়ারম্যান সাইফুল আলম বলেন, ‘মনোনয়নপ্রত্যাশী রেজাউল মুস্তফা মন্টু আমার শ্যালক। তারপরেও বলতে হয় মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বাবা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। সে নৌকার মনোনয়ন পেলে বিষয়টি দুঃখজনক হবে।’

তারাকান্দার গালাগাঁও ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন একসময় বিএনপির রাজনীতি করে আসা আব্দুর রহমান। তিনি গত নির্বাচনেও নৌকার মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এ বছর তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আবারও নৌকার ভরাডুবি হবে।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ আলী বলেন, ‘আব্দুর রহমানের বাবা আবুল হোসেন তালুকদার ছিলেন শান্তি কমিটির সদস্য। যুদ্ধের সময় অনেকের ওপর অন্যায় অত্যাচার করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগও করেছি।’

অভিযোগের বিষয়ে আব্দুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে একটি পক্ষ আমাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তাঁরা যা রটনা করছে তা আদৌ সত্য নয়।’

কাকনি ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান রিপনের বাবা মফিজ উদ্দিন সরকার ও তাঁর বড় ভাই মতিউর রহমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু যখন দেখি তাঁরাই নৌকার মনোনয়ন পায় তখন কষ্ট লাগে।’

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী মশিউর রহমান রিপন বলেন, ‘অতীতে পরিবারের কারও ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু এই না যে আমরা আওয়ামী লীগ করতে পারব না। গত নির্বাচনেও নৌকা পেয়েছি, আশা করি এবারও পাব।’

বিসকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিদুল ইসলাম উজ্জ্বল বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা শাকের আহম্মেদ বাবুল বিসকা ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে শুনেছি তাঁর বিরুদ্ধে জুয়া ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে শাকের আহম্মেদ বাবুল বলেন, ‘ছোটকাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে এখন মূল দলে এসেছি। নির্বাচন করব বলে প্রতিপক্ষরা কুৎসা রটাচ্ছে।’

বানিহালা ইউনিয়নের বাসিন্দা মফিজ উদ্দিন বলেন, এই ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতা আলতাব হোসেন খন্দকারের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সচেতন জনগণ পোস্টারও লাগিয়েছে দেয়ালে দেয়ালে। এখন শুনি তিনি নৌকার মনোনয়ন চান।’

এ বিষয়ে আলতাব হোসেন খন্দকার বলেন, পারিবারিক ঝামেলাকে পক্ষ ইস্যু করে আমাকে হেয় করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে কিছু লোক, যাতে মনোনয়নবঞ্চিত হই।

গফরগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাংসদ ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল বলেন, ভেবেচিন্তেই এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য যোগ্য লোকের তালিকা পাঠানো হবে। বিতর্কিত কেউ মনোনয়ন পাবেন না।

তারাকান্দা-ফুলপুরের সাংসদ শরীফ আহম্মেদ বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে অনেকেই মনোনয়ন চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বিতর্কিত এমন কারও জন্য মনোনয়ন বোর্ডকে সুপারিশ করা হবে না।